বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব না হওয়ায় প্রতিক্রিয়া

বিশ্বের সর্ববৃহৎ উচ্চাঙ্গসংগীতের আসর হিসেবে স্বীকৃত “বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব” এ বছর হচ্ছে না জায়গা বরাদ্দ না পাওয়ায়। বিষয়টিকে জাতির জন্যে দুঃখজনক হিসেবে দেখছেন গুণীজনরা। তাঁদের মতে, সরকারের সহযোগিতা পেলে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা সম্ভব হতো। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া:
ফেরদৌসী রহমান
এটি শুধু আমার জন্যে হতাশার বিষয় নয়, আমার মনে হয় পুরো ঢাকাবাসীর জন্যে হতাশার বিষয়। এসময় বিদেশ থেকে অনেক অতিথি আসেন। তাঁরা আসেন এই উৎসবটির জন্যই। যাঁরা উচ্চাঙ্গসংগীত ভালোবাসেন তাঁরা শুধু এই অনুষ্ঠানটি দেখতে আসেন। আমরা এতোদিন উচ্চাঙ্গসংগীত শুনতে চাইলে ভারতে যেতাম। এখন ভারত থেকে আসেন আমাদের এই উৎসবে। এটি একটি ফ্রি ইভেন্ট। এটি খুবই উপভোগ্য একটি উৎসব। সেটি বন্ধ হওয়ায় আমরা খুব মর্মাহত। গতকাল এটি শোনার পর খুবই খারাপ লেগেছে।
একসময় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন উত্তাল ছিলো তখনও অনেক লোক উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন। কেউ ভয় পাননি। এখন রোহিঙ্গা সংকট ছাড়া আর পরিস্থিতি ভালো। আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম যে উৎসবটি উপভোগ করবো।
আমি নিশ্চিত সরকারটি যদি বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ তাহলে এর একটি রফা হতে পারে এখন। আমি আশাবাদী।
উস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান
প্রথম কথা হচ্ছে, গত পাঁচ বছর ধরে উৎসবটি চলছে। এটি একটি অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এটি বন্ধ হওয়াতে আমার মনে হয় হঠাৎ করে একটা কিছুতে ভাটা পড়লো। কারণ, আমরা সবাই আগ্রহে ছিলাম যে অনুষ্ঠানটি হবে। কিন্তু, তা না হওয়াটা কষ্টদায়ক। কেননা, এই উৎসবের সুবাদে আমরা ভালো ভালো শিল্পীর গান-বাজনা শুনতে পারি। সাধারণ শ্রোতাদের অন্য কোথাও গিয়ে তা শোনার সুযোগ হয় না। এখানে যারা উচ্চাঙ্গসংগীত চর্চা করছেন তাঁদের জন্যে এটি একটি প্রেরণা হিসেবে কাজ করতো। এটিকে উপলক্ষ করে তাঁরা এগিয়ে যাওয়ার চিন্তা করেন। এগুলোর একটি বাধা হলো বলে আমি মনে করি। আশা করব, অনুষ্ঠানটি আবার হবে।
অধ্যাপক ড. অসিত রায়
বেঙ্গলের উৎসবটি স্থগিত হওয়াটি আমাদের জন্যে দুঃখজনক। শুধু আমাদের বলবো না, এটি এই উপমহাদেশীয় সংস্কৃতির অগ্রযাত্রায় একটি প্রতিবন্ধক। বাংলায় উচ্চাঙ্গসংগীতের চর্চা হয়েছে এবং বহু রাগ-রাগিনী এই বাংলা থেকে সৃষ্টি হয়েছে। সেই জন্যেই আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে এই উৎসবটির মেলবন্ধন রয়েছে। এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা এতোদিনে যে অর্জনটি করেছি সেটি শুধু বাংলাদেশিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বিশ্বব্যাপী এর একটি সাড়া পড়ে গেছে। এই উৎসবকে উপভোগ করার জন্যে বিদেশ থেকে অনেকের আসার কথা ছিলো। এতে শুধু বাংলাদেশের মান বৃদ্ধি পেতো না, দেশের সংস্কৃতি চর্চাটিও সমৃদ্ধ হতো বলে আমি মনে করি।
অধ্যাপক রেজওয়ান আলী লাভলু
আমরা এই বিষয়টি নিয়ে মাত্রই আমাদের ডিপার্টমেন্টে আলোচনা করছিলাম। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারের একটা ইনিশিয়েটিভ নেওয়া উচিত ছিলো, এমন আর্ন্তজাতিকমানের ও সম্মানজনক একটি উৎসব যাতে বন্ধ না হয়। এটি আমাদের জন্যে গৌরবের বিষয়। এবার উৎসবটি হবে এটি একটি অস্বস্তির ব্যাপার। এটি লজ্জার ব্যাপার যে আমরা এবছর উৎসবটি করতে পাচ্ছি না।
উল্লেখ্য, আয়োজকদের পক্ষ থেকে গতকাল (২২ অক্টোবর) জানানো হয়, গত ৩১ আগস্ট সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (এএসসিবি) কাছে বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়াম উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের জন্যে বরাদ্দ দেওয়া বিষয়টি নাকচ করে দিলে এ বছরের উৎসব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেন আয়োজকরা। পাঁচদিনব্যাপী এই উৎসব ২৩ নভেম্বর শুরু হওয়ার কথা ছিলো। সেসময় পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে।
কিন্তু যখন জানা যায় যে পোপ সফরে আসবেন ৩০ নভেম্বর এবং তাঁর মূল অনুষ্ঠান আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে না তখন জায়গা বরাদ্দ চেয়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গত ৯ সেপ্টেম্বর আবারও আবেদন করা হয়। কিন্তু, সে বিষয়টি নিয়ে আর কোন অগ্রগতি হয়নি।
তাই, উৎসবের ব্যাপ্তি ও আয়োজনের বিশালতার কথা চিন্তা করে আয়োজকরা এ বছরের অনুষ্ঠানটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেন।
আরও পড়ুন:
Comments