কলকাতা হাইকোর্টের ভৎর্সনা

১৩ বছর গেলো, কবিগুরুর চুরি যাওয়া নোবেলের খোঁজ নেই!

তেরো বছর অতিবাহিত হলেও বাঙালির অহংকার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চুরি যাওয়া নোবেল পদক উদ্ধার করতে পারেনি ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)।
calcutta high court
কলকাতা হাইকোর্ট। ছবি: সংগৃহীত

তেরো বছর অতিবাহিত হলেও বাঙালির অহংকার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চুরি যাওয়া নোবেল পদক উদ্ধার করতে পারেনি ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)।

খোয়া যাওয়া নোবেল তো দূরের কথা, চুরির নূন্যতম সূত্র আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হয়েছে বড়বড় মামলায় চাঞ্চল্যকর সমাধান করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ভারতের “প্রিমিয়াম” ওই গোয়েন্দা সংস্থা।

এখানেই শেষ নয়, তদন্তের কূল-কিনারা না পেয়ে তেরো বছরে দুবার আদালতের কাছে নোবেল চুরির তদন্তের খাতা বন্ধ করার আর্জিও জানিয়েছিল সিবিআই।

আর যখন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার সিবিআইয়ের “অপারগতা”-কে সামনে এনে নিজেরাই রাজ্য পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট বা সিআইডিকে দিয়ে তদন্ত শুরু করবে বলে ঘোষণা করলো, ঠিক তখনই সিবিআই এর তীব্র বিরোধী করে বসল।

কলকাতা হাইকোর্টে এ নিয়ে করা জনস্বার্থ মামলার নিষ্পত্তির জন্য গতকাল (২৪ অক্টোবর) কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি রাকেশ তেওয়ারির এজলাসে দুই পক্ষের সওয়াল-জবাব অনুষ্ঠিত হয়।

সিবিআই যে নোবেল চুরির তদন্তে “অকৃতকার্য” ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে শুধু এটিই বলেননি বরং সিবিআই-কে “দেশবিরোধী” বলেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, “জাতীয় সম্পদ চুরির কিনারা করতে সিবিআই দুবার ব্যর্থ হয়েছে। নিজেরাই বোলপুর আদালতে জানিয়েছেন, তদন্তে নেমে কোনও সূত্র মেলেনি। অন্য কোনও সংস্থা যদিও কোনও সূত্র পেয়ে তদন্ত করতে চায়, তাহলে তারা তাদের হাতে তদন্তের নথি তুলে দেবেন না? আমার কথা শুনতে রূঢ় লাগবে হয়তো, কিন্তু তাহলে স্বীকার করুন আপনারা দেশবিরোধী। নোবেল পদক দেশে ফিরে আসুক তা আপনারা চান না।”

ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি পরিষ্কার ভাষায় বলেন, “আপনারা (সিবিআই) কিছুই করতে পারেননি। তাই নোবেল চুরির তদন্ত অন্য কোনও সংস্থা করতে চাইলে, তাদেরকে করতে দিন।”

বিচারপতি আগামী সাত দিনের মধ্যে এই বিষয়ে সিবিআই-কে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে গতকালই ছিলো ভারপ্রাপ্ত বিচারপতির শেষ কর্মদিবস। তাই আগামী সপ্তাহে শুনানি হবে নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের এজলাসে।

২০০৪ সালে ২৫ মার্চ বোলপুরের শান্তিনিকেতনের উত্তরায়ণ সংগ্রহশালা থেকে কবিগুরুর নোবেল পদকসহ ৫৭টি মূল্যবান ব্যবহার্য জিনিস চুরি হয়। ঘটনার তিনদিন পর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নোবেল চুরির রহস্য ভেদ করতে সিবিআই-কে তদন্তের নির্দেশ দেন। ২০০৭ সালে সিবিআই নোবেল পদক উদ্ধার করতে না পেরে তদন্ত গোটার ঘোষণা করে। কিন্তু পরের বছর রাজনৈতিক চাপের মুখে নতুন করে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। কিন্তু, তার পরের বছর আবারও চুরির কিনারা করতে না পারার দায় নিয়ে তদন্ত থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা করে সংস্থাটি।

রাজ্য সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল কিশোর দত্ত জানান, রাজ্য সরকার নোবেল পদক চুরির তদন্ত করতে এরই মধ্যে সিট গঠন করেছে। কেন্দ্রের কাছে বহুবার এই বিষয়ে সাহায্য চেয়ে চিঠি পাঠালেও কেন্দ্র সবুজ সংকেত দেয়নি।

সিবিআইয়ের কৌঁসুলি আশরাফ আলি আদালতের কাছে এক সপ্তাহের সময় নিয়ে হলফনামা জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

কবিগুরুর নোবেল জাতীয় সম্পদ। দেশের প্রত্যেক নাগরিক চান সেটি ফিরে আসুক। যে সংস্থা দুবার তদন্ত থেকে সরে গিয়েছিল তাদের নতুন কিছু বলার থাকতে পারে না বলেই মনে করে রাজ্য সরকারের আইনজীবীরা।

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

13h ago