প্রকৃতির হারিয়ে যাওয়া সেই অষ্টমাশ্চর্যের খোঁজে

একসময় ইউরোপ-আমেরিকা থেকে জাহাজ ভরে পর্যটক আসতেন নিউজিল্যান্ডের নর্থ আইল্যান্ডে। তাঁরা আসতেন প্রকৃতির এক অভূতপূর্ব নিদর্শন দেখতে। কিন্তু, এক সময় হারিয়ে যায় সেটি। বিস্মৃত হয়ে যায় পৃথিবীর ইতিহাস থেকে।
Pink and White Terraces
শিল্পীর চোখে হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতির সেই ‘অষ্টমাশ্চর্য’ নিদর্শন ‘পিঙ্ক অ্যান্ড হোয়াইট টেরেস’। ছবি: সংগৃহীত

একসময় ইউরোপ-আমেরিকা থেকে জাহাজ ভরে পর্যটক আসতেন নিউজিল্যান্ডের নর্থ আইল্যান্ডে। তাঁরা আসতেন প্রকৃতির এক অভূতপূর্ব নিদর্শন দেখতে। কিন্তু, এক সময় হারিয়ে যায় সেটি। বিস্মৃত হয়ে যায় পৃথিবীর ইতিহাস থেকে।

বহু বছর আগে একজন বিশিষ্ট ভূতাত্ত্বিক তাঁর ডায়েরিতে লিখে গিয়েছিলেন প্রকৃতির সেই বিশেষ নিদর্শনটির কথা। তবে হারিয়ে যায় সে ডায়েরিটিও। অবশেষে, ২০১০ সালে আচমকা একদিন ডায়েরিটি খুঁজে পান নিউজিল্যান্ডের জাতীয় গণগ্রন্থাগারের গবেষক ড. সাসচা নোলডেন। সুইজারল্যান্ডের বাসেল শহরে অবস্থিত হোশটেটার সংগ্রহশালায় এর সন্ধান পান তিনি।

ডায়েরিটি ছিলো ভূতাত্ত্বিক ড. ফার্দিনান্দ ফন হোশটেটারের। তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই সংগ্রহশালাটি। ১৮৫৯ সালে নিউজিল্যান্ড সরকার তাঁকে নিয়োগ করেছিলো দ্বীপ দেশটির জরিপের কাজে। সে কাজ করার সময় হোশটেটার দেখতে পান পাহাড়ের গায়ে আশ্চর্যজনক কিছু। সে কথাই তিনি লিখে রাখেন ডায়েরিতে। তাঁর লেখা প্রকৃতির সেই বিশেষ নিদর্শনটি হলো ‘পিঙ্ক অ্যান্ড হোয়াইট টেরেস’।

পৃথিবীর সাতটি চিরাচরিত প্রাকৃতিক আশ্চর্যের তালিকায় নাম না থাকায় বিজ্ঞানীদের কাছে এর সুনাম রয়েছে ‘অষ্টমাশ্চর্য’ হিসেবে। ডায়েরিটি ড. সাসচার হাতে আসার পর শুরু হয় আলোচনা। সহকর্মী রেক্স বানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি শুরু করেন গবেষণা। এখন হোশটেটারের ডায়েরিতে উল্লেখ করা জায়গা ও এর আশ-পাশে খোঁজা হচ্ছে প্রকৃতির সেই ‘অষ্টমাশ্চর্য’ নিদর্শনটিকে।

বিজ্ঞানীদের মতে, ১৩১ বছর থেকে ছাই চাপা পড়ে রয়েছে প্রকৃতির এই অপরূপ নিদর্শনটি। এটি ১৮৮৬ সালের কথা। সে বছরে ১০ জুন জেগে উঠে নিউজিল্যান্ডের নর্থ আইল্যান্ডে অবস্থিত তারাবেরা অগ্নিগিরি। শুরু হয় অগ্নুৎপাত। ধীরে ধীরে ছাই-কাদায় ঢাকা পড়তে থাকে অগ্নিগিরির আশে-পাশের অঞ্চল।

গবেষকদের মতে, সেসময়ই চাপা পড়ে যায় সেই অঞ্চলে অবস্থিত ‘পিঙ্ক অ্যান্ড হোয়াইট টেরেস’। দেশটির গবেষণা সংস্থা জিএনএস সায়েন্স-এর ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও সেই গোলাপি-সাদা পাথুরে সিঁড়ির সঠিক অবস্থান সম্পর্কে কোন তথ্য কারো জানা নেই, তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা সেই পাথুরে সিঁড়িগুলো ৩০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু ছাই-মাটির নিচে ঢাকা পড়ে রয়েছে।

রেক্স বান এ বছরের মাঝামাঝি গণমাধ্যমকে জানান, “পাহাড়ের গায়ে গোলাপি এবং সাদা রঙের এই প্রাকৃতিক সিঁড়িগুলো দেখতে এক সময় ইউরোপ-আমেরিকা থেকে জাহাজ ভরে পর্যটক আসতেন নিউজিল্যান্ডে। কিন্তু, সে সময়কার সরকার এসব নিয়ে কোন জরিপ চালাননি। তাই প্রকৃতির এই আশ্চর্যজনক নিদর্শনটির সঠিক অবস্থান সম্পর্কে কোন তথ্যই আমাদের কাছে নেই।”

ডায়েরিটি হাতে পাওয়ার পর ড. সাসচা এবং রেক্স বান মিলে শুরু করেছেন সেই অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের কাজ। তাঁদের আশা একদিন এই ‘পিঙ্ক অ্যান্ড হোয়াইট টেরেস’ খুঁজে বের করা সম্ভব হবে। আর এটি দেখতে পর্যটকরা আবারও আসবেন দূর-দূরান্ত থেকে।

‘পিঙ্ক অ্যান্ড হোয়াইট টেরেস’ কি?

নিউজিল্যান্ডের আদিবাসী মাওরিদের কাছে এর নাম ‘মেঘলা আকাশের ঝর্ণা’ এবং ‘ট্যাটু করা পাথর’। গবেষকদের মতে, গোলাপি ও সাদা রঙের পাথরগুলো আসলে বিপুল পরিমাণ সিলিকা সিন্টার নামক পদার্থের স্তূপ। সিঁড়ির মতো দেখতে সেই বিশালাকার পাথরগুলোতে আকরিক সোনাসহ আরও বিভিন্ন রকমের খনিজ পদার্থও রয়েছে। সেসব খনিজ পদার্থ পাথরগুলোর গায়ে সাদা ও গোলাপি আভা সৃষ্টি করেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago