বিএনপি নির্বাচনে আসুক চায় সরকার: কলকাতায় বললেন অর্থমন্ত্রী

“বিএনপি এবার জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক সেটা বর্তমান সরকারও চায়। কারণ আমরা মনে করি, যদি এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন না করে তবে দলটাই আর থাকবে না।” ১৫ নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
AMA Muhit in Kolkata Bangladesh Book Fair
কলকাতায় সপ্তম বাংলাদেশ বইমেলা ২০১৭ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। ছবি: স্টার

“বিএনপি এবার জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক সেটা বর্তমান সরকারও চায়। কারণ আমরা মনে করি, যদি এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন না করে তবে দলটাই আর থাকবে না।” ১৫ নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার যে অত্যাচার এর থেকে আমরা এখনো বের হতে পারিনি। এটা খুব দুঃখজনক। তবে প্রত্যেকটি আক্রমণের পরপরই সরকার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এবং সেটা খুবই কঠোর।”

এসময় অপর এক প্রশ্নে ভারত এবং বাংলাদেশের সাহিত্যের তুল্যমূল্য তুলনা করতে গিয়ে বর্ষীয়ান অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সাহিত্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং সেটা ভারতীয় সাহিত্যের থেকেও উন্নত। বাংলাদেশের সাহিত্যের সঙ্গে ভারতীয়দের বিশেষ করে কলকাতার মানুষের পরিচিত হওয়া দরকার। তাই এই ধরণের বই মেলাকে আমি স্বাগত জানাই। কারণ বাংলাদেশের বইয়ের মেলায় বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে কলকাতার মানুষ আরও বেশি করে জানাতে পারবেন।

এর আগে অর্থমন্ত্রী উদ্বোধনী মঞ্চে প্রধান অতিথির ভাষণে বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানের যে মানসম্পন্ন প্রকাশনা হচ্ছে, সেই প্রকাশনার সঙ্গে কলকাতার প্রকাশনা হয়তো পেরে উঠবে না। কলকাতায় সুযোগ পেলেই আসার ইচ্ছা থাকে আমার। বিশেষ করে সিলেট সম্মেলন হলে তো কথা নেই। বক্তব্যে তিনি বারবার সবাইকে বই পড়ার আহবানও জানান।

বুধবার বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় কলকাতার মোহরকুঞ্জ মাঠে ‘বাংলাদেশ বইমেলা’র উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ভারতের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি, কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার তৌফিক হাসান, কলকাতা বই মেলার আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির মাজাহারুল ইসলাম এবং অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কবি কামাল চৌধুরী।

বইমেলা ঘুরে দেখছেন অর্থমন্ত্রী। ছবি: স্টার

বিশেষ অতিথির ভাষণে মুখ্য সচিব কামাল চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের বইয়ের প্রতি পাঠকের আগ্রহ যেমন বেড়েছে তেমন কলকাতায় বিশেষ করে ভারতের মাটিতেই বাংলাদেশের বইয়ের চাহিদাও আছে।

তিনি বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে বলতে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন এবং নিউজ উইকের একটি খবর উদ্ধৃত করে বলেন যে, পত্রিকাটি বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির কবি হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন। একজন মানুষ একটি জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তার ভাষণের মধ্যে সেই অন্তরাত্মার টান কতটা গভীর ছিল সেটা বাংলাদেশ সৃষ্টিই প্রমাণ রাখে। কবি কামাল চৌধুরী এই সময় ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পাওয়ার প্রসঙ্গও টানেন।

আয়োজক সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, এই মেলা কলকাতার মানুষের প্রাণের মেলা হয়ে উঠছে ক্রমশ। ২০১১ সালে ওই ছোট্ট গগনেন্দ্র কেন্দ্রে শুরু করেছিল এই মেলা। আজ এটা নন্দন ছাড়িয়ে মোহরকুঞ্জে এসে ডানা মেলেছে। ছয় বছরের মেলার বাণিজ্যিক দিন নয় আমরা দেখছি এই মেলার মধ্যদিয়ে দুই বাংলার মানুষের মধ্যে লেখক-পাঠকের সম্পর্ক নির্মাণ।

বিশেষ অতিথির ভাষণে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি বলেন, এমন বৃষ্টি উপেক্ষা করে এতো সংখ্যক মানুষের আগমন প্রমাণ করে বাংলাদেশের বইয়ের প্রতি কলকাতার পাঠকদের কতটা আগ্রহ।

এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন প্রখ্যাত আবৃতি শিল্পী ও লেখক শাহদাত হোসেন নিপু।

বাংলাদেশ বই মেলায় এবার বাংলা একাডেমি ছাড়া বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ৫১টি প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিচ্ছে। গত বছর মেলায় ৫২টি প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিয়েছিল।

কলকাতার নন্দন চত্বরে গত চার বছর ধরে বাংলাদেশ বই মেলা অনুষ্ঠিত হলেও এবার চলমান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের কারণে সেখানে জায়গা হয়নি বই মেলার। তাছাড়া বাংলাদেশে বন্যা এবং রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে নির্ধারিত সেপ্টেম্বর মাসে মেলার আয়োজন করতে পারেনি আয়োজক কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাস, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি।

জানা গিয়েছে, বই মেলাকে প্রতিদিন আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে সাজিয়ে আয়োজকরা। আলোচনা সভার মধ্যে রয়েছে, ‘বঙ্গবন্ধু, বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ’ ‘বাংলা নাটক সৌহার্দ্যের সেতু’ ‘সাহিত্যের দর্শন, দর্শনের সাহিত্য’ কিংবা ‘চলচ্চিত্র ও সাহিত্য’, ‘শিশু সাহিত্য’ এবং ‘প্রকাশনা: গ্রন্থ সেতু’। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় লেখক-সাহিত্যিকরা এসব আলোচনা ও সেমিনারের অংশ নেবেন। এমনকি আসতে পারেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত লেখিকা সেলিনা হোসেন এবং কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনও। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অতিথির আসনে দেখা গিয়েছে ফকির আলমগীরকে, ছিলেন শিক্ষাবিদ ড. পবিত্র সরকার।

প্রতিদিন বেলা দুইটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। তবে শনি ও রবিবার মেলা চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

Comments

The Daily Star  | English
DCs instructed to maintain order at mazars

Religious affairs ministry directs DCs to maintain peace, order at mazars

The directive was issued in response to planned attacks on shrines, allegedly aimed at embarrassing the interim government

3h ago