ঢাকার সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারল না রাজশাহী
শুরুতে লুইস, শেষে পোলার্ড। দুই ক্যারিবিয়ানের খ্যাপাটে ব্যাটিং ঢাকা ডায়নামাইটসকে পাইয়ে দিয়েছিল ২০২ রানের সংগ্রহ। সে রান তাড়ার তাগদ ছিল না রাজশাহী কিংসের। আবু হায়দার, আফ্রিদি আর সাকিবের বল সামলাতে পারেনি। ১৯তম ওভারে অলআউট হওয়ার আগে করতে পেরেছে ১৩৩ রান।
শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টেবিল টপ সাকিবের দল জিতেছে ৬৮ রানে। ছয় ম্যাচে ঢাকার এটি চতুর্থ জয়। সমান ম্যাচে চতুর্থ হার পাঁচে থাকা রাজশাহীর।
২০২ রান তাড়ায় দরকার শুরুতেই আক্রমণ। প্রথম ওভারে আক্রমণ হলো বটে তবে সেটা পেসার আবু হায়দার রনির কাছ থেকে। অ্যাটাকিং বোলিং করে মাত্র ২ রান দিয়ে তিনি আউট করেন রনি তালুকদারকে।
বাঁহাতি মুমিনুলের কাছ থেকে ডানহাতি রনি স্ট্রাইক পেতেই রাউন্ড দ্য উইকেট বল করতে আসেন পেসার রনি। তার ভেতরে ঢুকা বল পায়ে লাগিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন রনি তালুকদার। পরের ওভারে এসে দ্বিতীয় বলেই সামিথ প্যাটেলের হাতে ছক্কা খেয়েছিলেন। দুবল পরেই সামিথকে উপড়ে তুলেছেন শোধ। রনির নির্বিষ এক বল সামিথ তুলে দেন মিড অনে আফ্রিদির হাতে। ১১ রানেই পড়ে যায় কিংসদের দুই উইকেট।
আগের দিন রান তাড়ায় মুমিনুল-জাকির জুটিতেই উদ্ধার হয়েছিল রাজশাহী। তবে সে টার্গেট ছিল নাগালের মধ্যে। এবার বড় রান তাড়ায় ফের তৃতীয় উইকেট জুটিতে দেখা ‘ছোটখাটো’ গড়নের দুজনের। দুজনের শুরুটা এবারও হয়েছিল জম্পেশ। স্পিনারদের বলে পায়ের কাজ দেখিয়ে গ্যাপ বুঝে বের করেছেন বাউন্ডারি। তাদের মাথা খাটানো ব্যাটিংয়ে বাজে শুরুর পরও পাওয়ার প্লের ছয় ওভার বিফলে যায়নি রাজশাহীর। বোর্ডে জমা হয় ৫৫ রান। তবে ছন্দপতন হয় অষ্টম ওভারে। আফ্রিদিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুমিনুল। জাকির এদিনও ব্যাটে শান দিয়ে নেমেছিলেন। পাঁচ চারের সঙ্গে এক ছক্কায় করেছেন ২৩ বলে ৩৬ রান। দ্রুত রান তোলার তাড়ায় থেমেছে তার ইনিংস। আফ্রিদির বল পাঠাতে চেয়েছিলেন লং অন ফিল্ডারের উপর দিয়ে। বা দিকে সরে এসে বাউন্ডারি দীর্ঘদেহী পোলার্ড বাউন্ডারি লাইনে জমিয়েছেন সহজ ক্যাচ। জাকিরের বিদায়ের তিন বল পরেই মুশফিক নেই। ভেতরে ফিল্ডার দেখে আফ্রিদিকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়েছিলেন মুশফিক। টাইমিংয়ে গোলমাল। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে লাফিয়ে চোখ জুড়ানো ক্যাচ নিয়েছেন নাদিফ চৌধুরী।
টস হেরে আগে ব্যাট পাওয়া ঢাকার শুরুটা তান্ডবময়। এভিন লুইস -শহীদ আফ্রিদি নেমে ৪ ওভারেই ৫০ ছাড়িয়ে নেন দলের স্কোর। তাতে লুইসই ছিলেন বেশি আগ্রাসী। ৫৩ রানে গিয়ে প্রথম সাফল্য কিংসদের। মিরাজের ফুললেন্থের বলে ৮ বলে ১৫ করে বোল্ড হন আফ্রিদি। এরপর ওয়ানডাউনে নেমেই ছয়-চার পিটিয়েছিলেন আগের ম্যাচের হিরো জহুরুল ইসলাম। তাকেও থামিয়েছেন মিরাজ। মিরাজের ‘উলটা’ বল টের পেতে পেতে স্টাম্প উপড়ে যায় জহুরুলের।
লুইসকে ফিরিয়েছেন তরুণ পেসার হোসেন আলি। মিড উইকেটে ফিল্ডার রেখে শর্ট বল করেছিলেন হোসেন। ৩৮ বলে ৬৪ রান করা ক্যারিবিয়ান বাঁহাতি ক্যাচ দিয়েছেন ওখানেই। পরের ওভারেই আরেক উইকেট। টুর্নামেন্টে প্রথমবার নামা নাদিফ চৌধুরী অফ স্পিনার হাবিবুর রহমানকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে হয়েছেন স্টাম্পড।
পাঁচে নামা সাঙ্গাকারার সঙ্গে ছয়ে নামা সাকিবের জুটিও জমেনি। আক্রমণে এসেই সাকিবকে তুলে নেন সামিথ প্যাটেল। তখন খানিকটা যেন থতথম ঢাকার ইনিংস। তবে তা সামলেছেন কুমার সাঙ্গাকারা ও কাইরন পোলার্ড। ৬ষ্ঠ উইকেটে দুজনের ৬২ রান, তাতে পোলার্ডই রেখেছেন মূল ভূমিকা। সাঙ্গাকারা ২৮ রানে থামলেও দলকে ২০০ পার করিয়েছেন পোলার্ড। ২৫ বলে ৫২ রানের হার না মানা ইনিংসে ৫ চারের সঙ্গে মেরেছেন তিনখানা ‘দানবীয়’ ছক্কা। শেষের ছক্কাটিতে ছুঁয়েছেন মাইলফলক। সব ধরনের টি-টোয়েন্টিতে এটি যে তার ৫০০তম ছক্কা!
এই ম্যাচে রাজশাহী খেলিয়েছে ৮ জন দেশি ক্রিকেটার। মাত্র তিন বিদেশি নিয়ে নামার কারণ অবশ্য চোট সমস্যা। ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্টে টিকে থাকায়ও এখন সমস্যা বাড়ল ড্যারেন স্যামিদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা ডায়নামাইটস:২০১/৭ (লুইস ৬৪ , আফ্রিদি ১৫, জহুরুল ১৩, নাদিফ ৬, সাঙ্গাকারা ২৮, সাকিব ১১, পোলার্ড ৫২* ,নারিন ০; মিরাজ ২/৩১, হাবিবুর ১/৪৩, সামিথ ১/১৮, হোসেন আলি ৩/৩৮)
রাজশাহী কিংস: ১৩৩/১০ (১৮.২) (মুমিনুল ১৬, রনি ০,সামিথ ৬, জাকির ৩৬,মুশফিক ২,ফ্র্যাঙ্কলিন ৯, স্যামি ১৯,মিরাজ ১০,ফরহাদ ৬,হাবিবুর ১*, হোসেন ১; আফ্রিদি ৪/২৬, রনি ৩/১১, সাকিব ২/২২)
টস: রাজশাহী কিংস।
ফল: ঢাকা ডায়নামাইটস ৬৮ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: এভিন লুইস
Comments