গেইল-মাশরাফিতে উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচ জিতল রংপুর

ব্যাট হাতে ঝড়ো ফিফটি করেছিলেন ক্রিস গেইল। মাপা বোলিং দিয়ে বাকি কাজ সেরেছেন মাশরাফি। টানা হারতে থাকা রংপুর অবশেষে জয়ে ফিরেছে।
Mashrafe Bin Mortaza
রংপুরকে জেতানোয় বড় অবদান অধিনায়ক মাশরাফির। ছবিঃ ফিরোজ আহমেদ

সিলেট সিক্সার্সের জিততে শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৯ রান। পেরেরার ওই ওভার থেকে সিলেট নিতে পারল ১১ রান। উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচ রংপুর রাইডার্স জিতল ৭  রানে। ব্যাট হাতে ঝড়ো ফিফটি করেছিলেন ক্রিস গেইল। মাপা বোলিং দিয়ে বাকি কাজ সেরেছেন মাশরাফি। টানা হারতে থাকা রংপুর অবশেষে জয়ে ফিরেছে।  

শুরুর বিপর্যয়ের পর সাব্বির রহমান আর নাসিরের হোসেনের ব্যাটে খেলায় ফিরেছিল সিলেট। দারুণ মাপা বোলিং করে মাশরাফি মর্তুজা গড়ে দিয়েছেন ব্যবধান। ৪ ওভার বল করে মাত্র ১৮ রান দিয়ে মাশরাফি আউট করেছেন বাবর আজমকে।

সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে রংপুরের ১৭০ রান তাড়ায় সিলেট থেমেছে ১৬২ রানে। পঞ্চম এসে দ্বিতীয় জয় পেয়েছে মাশরফির দল। ওদিকে প্রথম তিন ম্যাচ জেতার পর হেরেই চলেছে সিলেট সিক্সার্স। 

১৭০ রান তাড়ায় সিলেটের শুরুটা নড়বড়ে।  আক্রমণে এসেই সাফল্য সোহাগ গাজীর। তার গুড লেন্থের বল এগিয়ে এসে মারতে গিয়েছিলেন লঙ্কান গুনাথিলেকা। লাইন মিস করে হয়েছেন পরিষ্কার বোল্ড। বিপিএলের অভিষেক রাঙাতে পারেননি পাকিস্তানি বাবর আজম। মাশরাফির  বলে ২ রান করে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন মিড উইকেটে। পথের কাঁটা হতে পারতেন ফর্মে থাকা আন্দ্রে ফ্লেচার। রুবেলের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের  বল তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। ১৭০ রান তাড়ায় ২৫ রানেই নেই তিন উইকেট।

এরপরই অধিনায়ক নাসির হোসেন ও সাব্বির রহমানের প্রতিরোধ। উইকেটে থিতু হতে দুজনেই সময় নিয়েছেন। পরে সুযোগ বুঝে খেলেছেন বড় শট।  তাতে অগ্রনী সাব্বির। ৩২ বলে তুলে নেন ফিফটি। তাও ছক্কা মেরে। থিসিরা পেরেরার বলটা  ফুলটস পেয়েছিলেন, মাঝব্যাটে লাগিয়ে উড়ান লং অফের উপর দিয়ে। ব্যতিক্রমী উদযাপনে জানিয়েছেন কত কাঙ্খিত ছিল এই পঞ্চাশ। যদিও ম্যাচ জিততে তখনো বাকি অনেকটা পথ। সাব্বিরকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন নাসির। দুজনের শতরানের জুটিতে ম্যাচ চলে আসে শেষ পাঁচ ওভারের সমীকরণে।



তখন ৩০ বল থেকে সিলেটের দরকার ৪৫ রান। মার কাটারি ক্রিকেটে যা একেবারেই নাগালের মধ্যে। এক ওভারে এসে ১০ রান দেন জিয়াউর রহমান। ব্যবধান কমে যায় আরও। ৪ ওভার থেকে দরকার ৩৫। তখনই ফের খেলায় প্রাণ নিয়ে আসেন মাশরাফি। ১৭তম ওভার করতে এসে মাত্র ২ রান দেন রংপুর অধিনায়ক। সমীকরণ দাঁড়ায় ৩ ওভারে ৩৩ রান। এই রান তুলায় সিলেটের বাজির ঘোড়া ছিলেন সাব্বির। অপরাজিত ছিলেন ৪৮ বলে ৭০ রান করে। কিন্তু পেরার বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে ফিরে যান তিনি। বোলিংয়ের পর ফিল্ডিংয়েও দুর্দান্ত ছিলেন মাশরাফি। লাফিয়ে পড়ে বাঁচিয়েছেন গোটা তিনেক নিশ্চিত চার।

শেষ দুই ওভারে লাগত ২৬ রান। নাসির আর ব্রেসনান মেটাতে পারেননি সেই চাহিদা। ৪৩ বলে ৫০ রানে অপরাজিত থেকেছেন সিলেটের অধিনায়ক। তার ইনিংস দিনশেষে কোন কাজে লাগেনি।

Cris Gyle
৫০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলার পথে গেইল। ছবি: ফিরোজ আহমেদ
ক্রিস গেইল-ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম জম্পেশ ঝড় তুলবেন, এই আশায় এদিনও গ্যালারি ভরপুর। আগের ম্যাচের মতো এবার আর নিরাশ হতে হয়নি দর্শকদের। ঝড় তুলেছেন দুজনেই। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

২১ বলে ৩৩ রান করে থেমেছেন ম্যাককালাম। প্রথম ১২ বল থেকে মাত্র ১ রান নেওয়া গেইল আউট হয়েছেন ৩৯ বলে ৫০ রান করে। গেইল ম্যাককালাম দুজনেই মেরেছেন বিশাল বিশাল সব ছক্কা। নাসিরের বলে টপ এজ হয়ে ফেরেন ম্যাককালাম। তার ইনিংসে ছিল তিনটি করে চার-ছয়। ফিফটির পরই আবুল হাসান রাজুর বলে ফ্লিক করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং দানব। গেইল চারের চেয়ে ছক্কা মারতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। এদিনও ব্যতিক্রম হয়নি। দুই চারের সঙ্গে মেরেছেন পাঁচ ছক্কা।

এই দুজনের আউটের পরই রংপুরের ইনিংসের চাকাও হয়ে যায় শ্লথ। চারে নেমে শাহরিয়ার নাফীস আবারও রান পাননি। ২৫ রান করে মোহাম্মদ মিঠুন ফিরেছেন প্লাঙ্কেটের বলে। ঝড় তুলতে পারেননি  পেরেরা। তাকে থামিয়েছেন ব্রেসনান। একটা সময় মনে হচ্ছিল দুশো ছাড়িয়ে যাবে মাশরাফিরা। পরে দেড়শ  পার হওয়া নিয়ে জাগে সংশয়। সংশয় থেকে দলকে তখন বাঁচিয়েছেন রবি বোপারা। তার ১২ বলে ২৮ রানের ইনিংসেই ১৬৯ পর্যন্ত যেতে পেরেছে রংপুর। রান হতে পারত আরও বেশি। শেষ ওভারে জিয়াউর রহমান স্ট্রাইকই দিতে পারেননি বোপারাকে। হতাশা থেকে কিপারের কাছে বল রেখে রান নিতে গিয়ে বোপারা হয়েছেন রান আউট।

৪ ওভারে ২৪ রানে ২ উইকেট নিয়ে সিলেটের সেরা বোলার আবুল হাসান। ক্রিস গেইলকে আউট করে তিনিই খেলার মোমেন্টাম ঘুরিয়ে দেন। তার করা শেষ ওভার থেকে মাত্র তিন রান নিতে পেরেছে রংপুর। ম্যাচ শেষে অবশ্য ওই ওভারে আক্ষেপে পুড়তে হয়নি রংপুরকে।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রংপুর রাইডার্স:১৬৯/৭ (ম্যাককালাম ৩৩, গেইল ৫০, মিঠুন ২৫, শাহরিয়ার ৮, পেরেরা ১৫, বোপারা ২৮, জিয়া ১, মাশরাফি ৩, গাজী,    রাজু ২/২৪, ব্রেসনান ১/২৩, নাসির ১/২৭) ;

সিলেট সিক্সার্স: (গুনাথিলেকা ৮, ফ্লেচার ১২, বাবর ২, নাসির ৫০*, সাব্বির ৭০, ব্রেসনান ১২*  ; মাশরাফি  ১/১৮,  গাজী ১/৬,  রুবেল ১/৩০ ,  জহির ০/২৯, পেরেরা ১/৪৩ )

টস: সিলেট সিক্সার্স

ফল:রংপুর রাইডার্স ৭ রানে জয়ী। 



ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ক্রিস গেইল। 

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago