রংপুরকে হারিয়ে সবার উপরে খুলনা

শেষ দুই ওভার থেকে দরকার ছিল ২৯ রান। ১৯তম ওভার থেকে এলো ১৪ রান। শেষ ছয় বলে চাই ১৫ রান। জুনায়েদ খানের ওই ওভার থেকে রংপুর রাইডার্স নিতে পারল মাত্র ৯ রান। খুলনা ম্যাচ জিতল ৯ রানে।
১৫৮ রান করেই রংপুরকে বেধে রেখেছে খুলনা। ছবি: প্রবীর দাস

শেষ দুই ওভার থেকে দরকার ছিল ২৯ রান। ১৯তম ওভার থেকে এলো ১৪ রান। শেষ ছয় বলে চাই ১৫ রান। জুনায়েদ খানের ওই ওভার থেকে রংপুর রাইডার্স নিতে পারল  মাত্র ৯ রান। খুলনা ম্যাচ জিতল ৯ রানে।

১৫৯ রান তাড়ায় শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়া দলকে উদ্ধার করে রবি বোপারা ও নাহিদুল ইসলাম দেখিয়েছিলেন পথ। তবে শেষটা করতে পারলেন না। শেষ তিন ওভারে বড় শট খেলার ঘাটতিতে টানা দুই ম্যাচ জেতার পর হারতে হলো তাদের।

শুক্রবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এবারের আসরে রংপুরের বিপক্ষে  প্রথম দেখায়  শেষ হাসি মাহমুদউল্লাহর দলের। ৮ ম্যাচে পাঁচ জয়ে ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের এক নম্বরে উঠে গেছে তারা।       

Cris Gyle
তেতে উঠা গেইলকে আউট করে আবু জায়েদ রাহির উল্লাস। ছবি: প্রবীর দাস
ব্যাটে বল আসছে, থিতু হলেই মিলছে রান। এমন পিচে নেমে ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম এই ম্যাচেও রান পাননি। আফিফ হোসেনের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ধরা  পড়েছেন বাউন্ডারি লাইনে। শুরুতে চুপচাপ থাকা গেইল হাত খুলেছিলেন আবু জায়েদ রাহির বলে। আউটও হয়েছেন তার বলেই। পর পর তিন বলে দুই চার আর এক ছক্কা মারার পরের বলেই কুপোকাত।  প্রথমটি লং অন দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়েছিলেন। পরেরটি আউটসাইড এজ হয়ে গড়িয়ে যায় থার্ড ম্যান  দিয়ে। এরপরের বলটিই বিশাল ছক্কা। তাল পেয়ে হাঁটু গেড়ে অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলও মারতে গিয়েছিলেন। এজ হয়ে বল চলে যায় উইকেটকিপারের হাতে। গেইল থামেন ৯ বলে ১৬ রান করে।

২০ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ইনিংস গড়ার কাজ করতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুন। মিড অনে বল ঠেলে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের দারুণ থ্রোতে কাটা পড়েন তিনি। শাহরিয়ার নাফীসের বদলে সুযোগ মিলেছিল ফজলে মাহমুদের। মোক্ষোম সুযোগ কাজে লাগানোর তাগদ ছিল না তার। ১০ বল খেলে ৬ রান করে আউট হয়েছেন তিনি। আউটের ধরনও বড় দৃষ্টিকটু। আফিফের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে পেটাতে গিয়েছিলেন। ঘুরে দেখেন বল গিয়ে লাগছে তার স্টাম্পে।

৪৫ রানে ৪ উউকেট হারানোর পর রবি বোপারার সঙ্গে জোট বাধেন টুর্নামেন্ট প্রথমবার নামা নাহিদুল ইসলাম। জুটিতে তিনিই ছিলেন অগ্রনী। মাথা খাটিয়ে রান বের করেছেন, স্ট্রাইক রোটেট তো করেছেনই। হাঁকিয়েছেন বাউন্ডারি। ৩৪  বলে তুলে নেন ফিফটি, যাতে ছিল ৭টি চার।  এই দুজনের  শতরানের জুটিতে শেষ ওভারে ১৫ রানের সমীকরণে চলে আসে ম্যাচ। তবে তীরে এসেই ডুবেছে তরী। শেষটায় এসে আর জোর দেখাতে পারেননি তারা। কাজের কাজটি করে বরং খুলনার বোলাররাই হিরো। আউট হয়েছেন দুজনই। ততক্ষণে অবশ্য ম্যাচ খুলনার পকেটে। 

Mahmudullah
৫৯ রানের ইনিংস খেলার পথে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ছবি: ফিরোজ আহমেদ
টস হেরে ব্যাটিং পেয়ে মাহমুদউল্লাহর ফিফটিতে ৮ উইকেটে ১৫৮ রান তুলেছিল খুলনা টাইটান্স। অধিনায়ক ছাড়া কারো ব্যাটেই ছিল না শান। ভালো শুরুর কুড়ি রানের মধ্যে থেকেছেন তিনজন। শেষটাতেও ঝড় তোলার মতো দাপট দেখা যায়নি কারো ব্যাটে। তবে মাহমুদউল্লাহর ইনিংসটিই পরে গড়ে দিয়েছে ব্যবধান। 

প্রথম ওভারে মাশরাফিকে চার-ছয় মেরে শুরু করেছিলেন রাইলি রুশো। পরের ওভারেই কাটা পড়েছেন সোহাগ গাজীর অফ স্পিনে।  গাজীর গুড লেন্থে ফেলা স্লাইডারে প্রোটিয়া বাঁহাতি মারত গিয়েছিলেন স্লগ সুইপ।  লাইন মিস করায় সোজা আঘাত হাতে তার অফ স্টাম্প। ওয়ানডাউনে নেমে রুবেলকে দুই চার মেরে শুরু আফিফ হোসেনের।  মার খেয়ে বাউন্সার তাক করে প্রতিক্রিয়া দেখান রুবেল। পরের বলেই দারুণ ইয়র্কার। ভড়কে যাওয়া আফিফ কেবল উড়ে যেতে দেখেছেন তার লেগ স্টাম্প।

দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই মাশরাফির সাফল্য। নাজমুল হোসেন শান্ত কোন পজিশনেই রান পাচ্ছেন না। শুরুর দিকে ওপেন করতে নেমে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পরে নিচে নেমেও রান পাননি। চট্টগ্রাম পর্বে এসে ফের জায়গা পান ওপেনিংয়ে। এবার ২০ রান করে মাশরাফির স্লোয়ারে টাইমিংয়ে গড়বড়। ওই ক্যাচ নিতে মিড উইকেটে দাঁড়ানো রুবেলকে একদম নড়চড় করতে হয়নি।

গেল আসরে খুলনা টাইটান্সের একাদশে নিয়মিত মুখ ছিলেন নিকোলাস পুরান। মাঠে নামার সুযোগ মিলছিল না এবার। এই প্রথম সুযোগ পেলেন এই ক্যারিবিয়ান বাঁহাতি। তবে হেলায় হারিয়েছেন  সুযোগ ।  ১৬ রান মালিঙ্গার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।

ছন্দে থাকা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বিপদ আর বাড়তে দেননি। চমৎকার সব শটে তুলে  নেন  অর্ধশতক। বিপিএলের ইতিহাসে মুশফিকুর রহিমকে ছাড়িয়ে হয়ে যান সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। দলকে বড় সংগ্রহ পাইয়ে দিতে বড় শট খেলতে গিয়ে ৩৫ বলে ৫৯ করে ফিরেছেন তিনি। রুবেলের বলে ডিপ মিড উইকেটের উপর দিয়ে হাঁকাতে চেয়েছিলেন ছক্কা। ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম অনেকখানি দৌঁড়ে বাউন্ডারি লাইন থেকে তা ফিরিয়ে দিলে কাছেই দাঁড়ানো নাহিদুল হাতে জমে ক্যাচ। ওই রান ৫৯ রান করেই ম্যাচের হিরো হয়েছেন টাইটান্স অধিনায়ক। 

খুলনার আগের ম্যাচের হিরো আরিফুল এবার ব্যর্থ। তাকেও আউট করেছেন রুবেল। মিডল স্টাম্প বরাবর ফুলটস পেয়ে ঘুরিয়েছিলেন। ব্যাটে বলে না হওয়ায় লাগল তার প্যাডে। ১৬ রান করে সহজ এলবিডব্লিও।  শেষ দিকে ঝড় তুলতে পারেননি ব্র্যাথওয়েট। থিসিরা পেরেরাকে লফটেড ড্রাইভ খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন লং অফে। শেষ ওভারে জুনায়েদ খানকে বোল্ড করে দ্বিতীয় উইকেট নেন মালিঙ্গা। ওই ওভার থেকে আসে ৭ রান। ওই রানেই অবশ্য রংপুরকে বেধে রাখার কাজটা পরে সারতে পেরেছেন জুনায়েদরা। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

খুলনা টাইটান্স:১৫৮/৮ (রুশো ১১, শান্ত ২০,   আফিফ  ৯, মাহমুদউল্লাহ ৫৯, পুরান ১৬, আরিফুল ১৬, ব্র্যাথওয়েট ১১  , আর্চার ১০,    জুনায়েদ ১,  তানভির ০* ; মাশরাফি ১/৩২,   গাজী ১/৩০,   রুবেল ৩/৩৫, মালিঙ্গা ২/২৭, পেরেরা ১/৩০ )

রংপুর রাইডার্স:১৪৯/৬ (ম্যাককালাম ২, গেইল ১৬,  মিঠুন ৩, বোপারা ৫৯,  ফজলে মাহমুদ ৬, নাহিদুল ৫৮,   পেরেরা ১*    ; রাহি ১/৩৮, আফিফ ২/৪, জুনায়েদ ১/২০, আর্চার ০/৩৩ , ব্র্যাথওয়েট ০/৩৩,  তানভির  ০/৯)

টস: রংপুর রাইডার্স।

ফল: খুলনা টাইটান্স  ৯ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

10h ago