এক গ্রহ-খেকো নক্ষত্রের গল্প
গ্রিক পুরাণে রয়েছে আকাশের দেবতা ইউরেনাস এবং মাটি বা পৃথিবীর দেবী গিয়ার সন্তান ক্রোনোস। পিতা ইউরেনাসের হাত থেকে দেবালোকের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ায় ইউরেনাস অভিশাপ দেন যে ক্রোনোসকেও ক্ষমতা হারাতে হবে তার সন্তানের হাতে।
তবে পিতার অভিশাপকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে ক্রোনোস তার সন্তানদের জন্ম হওয়ার পর পরই গিলে ফেলতে শুরু করে।
সেই পুরাণের কথা মনে রেখে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এক নক্ষত্রের নাম দিয়েছেন ক্রোনোস। কেননা, পৃথিবী থেকে মাত্র ৩৫০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই নক্ষত্রটি ইতোমধ্যে এর বলয়ের ভেতরে থাকা ১৫টি গ্রহকে গলাধঃকরণ করে ফেলেছে।
নিউইয়র্কে অবস্থিত ফ্ল্যাটিরন ইন্সটিটিউট এর সেন্টার ফর কম্পিউট্যাশনাল অ্যাস্ট্রোফিজিকস (সিসিএ) এর একদল গবেষক কাজ করছেন সূর্যের মতো দেখতে সদ্য ক্রোনোস নাম দেওয়া এই নক্ষত্রটিকে নিয়ে। দলটির প্রধান এবং গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক ডেভিড হগ সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের সূর্য যদি এর পরিবারের সব সদস্যকেই খেয়ে ফেলে তারপরও তা ক্রোনোসের অস্বাভাবিক আচরণের ধারের কাছেও যাবে না।”
গ্রহ-খেকো ক্রোনোসের আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করলে আমাদের সৌরজগতের গঠন এবং বিবর্তনের বিষয়ে অনেক কিছুই জানা যাবে বলে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানই সেমিইয়ং ওহ এর মতে, “প্রায় চারশো কোটি বছর পুরনো ক্রোনোস নক্ষত্রটির গ্রহ-মণ্ডল নিয়ে ভবিষ্যতে কোন সমীক্ষা চালানো হলে মহাজাগতিক গঠন-বর্ধন সম্পর্কে আরো অনেক নতুন নতুন তথ্য আমাদের হাতে আসবে।”
গবেষকরা ক্রোনোসের পাশে যে নক্ষত্রটি আবিষ্কার করেছেন এর নাম ক্রিয়স। গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী ক্রোনোসের বোনের নামে এর নাম। তবে ক্রিয়সের আচরণে এমন অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করেননি বিজ্ঞানীরা। তাঁদের ধারণা, নক্ষত্র দুটির গঠনগত ভিন্নতার কারণে এদের আচরণও ভিন্ন।
ড. ওহ বলেন, “আমরা এখন বোঝার চেষ্টা করছি যে একই সঙ্গে জন্ম নেওয়া নক্ষত্র দুটির গঠনে রাসায়নিক উপাদান আলাদা হলো কেমন করে।” গবেষক দলটির মতে, ক্রোনোসের শরীরের উপরিভাগ জুড়ে রয়েছে লোহা, সিলিকন, ম্যাগনেসিয়াম এবং লিথিয়ামের সমাহার। অথচ, ক্রিয়সের গায়ে এমনটি নেই। আর এ কারণেই নক্ষত্র দুটির আচরণ ভিন্ন কী না তা নিয়েও গবেষকদের মত-ভিন্নতা রয়েছে।
যেহেতু ক্রোনোসের এই গ্রহ গিলে ফেলার প্রকৃত কারণ এখনো অজানা, তাই এর পেছনে অন্য আর কী কী কারণ থাকতে পারে তা নিয়েও গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
Comments