লো স্কোরিং ম্যাচের উত্তেজনায় জিতল কুমিল্লা
শেষ দুই ওভারে কুমিল্লার চাই কেবল ১০ রান, হাতে পাঁচখানা উইকেট। উত্তেজনার কোন কারণই থাকার কথা নয়। তবু উত্তাপ ছড়াল উইকেটের চরিত্রের কারণে। মাশরাফি ১৯তম ওভারে প্রথম পাঁচ বলে মাত্র ২ রান দিয়ে আউট করেন সাইফুদ্দিনকে। টানটান উত্তাপের সময় নেমেই ছক্কা মেরে দেন হাসান আলি। রোমাঞ্চের তখনই যবানিকাপাত। শেষ ওভারে চার মেরে কুমিল্লার কাজটা সেরেছেন মারলন স্যামুয়েলস।
কুমিল্লার অর্ধেক কাজ করে রেখেছিলেন বোলাররা। মাত্র ৯৭ রানে কাবু করে ফেলেছিলেন রংপুরকে। ওই রান তুলতেই নাজেহাল অবস্থা ভিক্টোরিয়ান্সদের, এক রান বের করতেও বিশাল খাটুনি করতে হয়েছে। ধুঁকতে ধুঁকতে ৩ বল আগে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছে তারা।
মন্থর, অসমান বাউন্সি উইকেটে লো স্কোরিং ম্যাচে নাটাই ঘুরিয়েছেন দুদলের বোলাররা। ফাঁকেফোকরে কিছুটা রান পেলেই তালি পেয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। ৯৭ রান করেও লড়াই হতে পারে দেখিয়ে দিয়েছে আসলে মিরপুরের পিচ। মারকাটারি ক্রিকেটে উলটো রোমাঞ্চ হয়েছে উইকেট পতনে।
মাত্র ৯৮ রানের লক্ষ্যে নেমে কুমিল্লার শুরুটা ধীরস্থির। উইকেট পড়তে পারত মাশরাফির দ্বিতীয় ওভারেই। ডাউন দ্য উইকেটে এগিয়ে আসা তামিম ইকবালের স্টাম্পিং মিস করেন মিঠুন। পরের ওভারে মাশরাফিই এনে দেন প্রথম উইকেট। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল এলোপাথাড়ি হাঁকাতে গিয়ে লিটনের ক্যাচ যায় থার্ড ম্যানে।
ক্রমশ আগ্রাসী হয়ে খেলতে থাকা তামিমকে ছেঁটে ফেলেন সোহাগ গাজী। লং অনে ফিল্ডার রেখে ফ্লাইট দিয়েছিলেন গাজী। বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইন ক্যাচ দেন কুমিল্লার অধিনায়ক। ৪৭ রানে গিয়ে পড়ে আরেক উইকেট। বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপুর বলে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ধোঁকা খান জস বাটলার। মাত্র ৫ রানে করে স্টাম্পিং হয়েছেন তিনি। বিপদজনক হয়ে পড়া শোয়েব মালিককেও ছেঁটেছেন নাজমুল। ২০ রান করা মালিক বেরিয়ে এসে ধোঁকা রেখেছেন নাজমুলের বলে, হয়েছেন বোল্ড।
টস জিতে বোলিং নিয়ে নিচু, মন্থর উইকেটের ষোলআনা ফায়দা তুলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বোলাররা। অফ স্পিনার মেহেদী হাসান করেন বিপিএলে নিজের সেরা বোলিং। পিচের হাবভাব কাজে লাগিয়ে সফল হন পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। উইকেটে ভাষা পড়তে ব্যার্থ রংপুর একশো রানও করতে পারেনি, তাদের সাত ব্যাটসম্যানই হয়েছেন বোল্ড।
রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে আগের দেখায় বল হাতে বাজিমাত করেছিলেন অফ স্পিনার মেহেদী হাসান। গেইল-ম্যাককালাম দুজনকেই ভুগিয়ে আউট করেছিলেন কেবল ম্যাককালামকে। পরে দুজনকেই আউট করার ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন। ফের দেখায় পূরণ হয়েছে খায়েশ। দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে প্রথম বলেই বোল্ড করে দেন ক্রিস গেইলকে। টুর্নামেন্টে দুই ফিফটির পর কথা বলছে না গেইলের ব্যাট। এদিন পেলেন গোল্ডেন ডাক।
গেইলকে আউট করার ওভারের শেষ বলেই আরেক ওপেনার জিয়াউর রহমানকেও বোল্ড করে দেন মেহেদী। দ্বিতীয় স্পেলে যখন ফেরেন ততক্ষণে চার উইকেট খুইয়ে বসেছে রংপুর। বল হাতে নিয়েই মিঠুনকে আউট করেন সাইফুদ্দিন। ক্রিজে ঢুকতে ব্যাট লাগানোর অলসতায় রান আউট হয়ে ফেরেন বোপারা। ধুঁকতে থাকা মাশরাফির দলকে তখনই বড় পেরেক টুকে দেন মেহেদী। উইকেটে টিকে রান বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল ম্যাককালামের। ২৪ রান করে মেহেদীর বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়েছিলেন, তার কুইকারে ধোঁকা খেয়ে ব্যাট-প্যাড হয়ে বল লাগে স্টাম্পে। মাঝের ওভারে প্রথমবার নামা চামারা কাপুগেদেরাকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান হাসান আলি। শেষ ওভারে নাহিদুলকেও বোল্ড করে চার নম্বর উইকেট পেয়ে যান মেহেদী।
৬১ রানে ৬ উইকেট হারানো দলকে টানার ভার পড়েছিল অধিনায়ক মাশরাফির উপর। এবার আর ব্যাট হাতে বড় কিছু করতে পারেননি অধিনায়ক। ৯ রান করে বোল্ড হয়ে যান সাইফুদ্দিনের ইয়র্কারে। সাইফুদ্দিনের বলেই স্টাম্প যায় সোহাগ গাজীরও। তবে এতে তার দায়ের চেয়ে মন্থর পিচের দায় অনেকখানি। হুট করে নিচু হয়ে যাওয়া বলে ব্যাট ছুঁয়ানোর আগেই কুপোকাত গাজী। আউট হওয়ার আগে ১২ রান করে দেখাচ্ছিলেন আশা।
১৮তম ওভারে লঙ্কান ইশুরু উদানাকে বোল্ড করে রংপুরকে ১০০ ছুঁতে দেননি আল-আমিন হোসেন। রংপুরের সাত ব্যাটসম্যানই হয়েছেন বোল্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স: ৯৭ (জিয়া ৬, গেইল ০, ম্যাককালাম ২৪, মিঠুন ১৭, বোপারা ৪, কাপুগেদেরা ২, নাহিদুল ৬, মাশরাফি ৯, উদানা ৯, গাজী ১২, অপু ১ ;মুজিব ০/১৭ , মেহেদী ৪/২২, হাসান আলি ১/১৫, সাইফুদ্দিন ৩/২২, আল-আমিন ১/১৮ )
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স:১০০/৬ (তামিম ২২, লিটন ৩, ইমরুল ১৪,বাটলার ৫,মালিক ২০,স্যামুয়েলস১৬* , সাইফুদ্দিন ৫,হাসান আলি ৬* ; গাজী ১/১৫, মাশরাফি ৩/২৪, উদানা ০/১৮, বোপারা ০/১১, নাজমুল ২/১৭, নাহিদুল ০/৭)
টস: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৪ উইকেটে জয়ী।
Comments