এটা টি-টোয়েন্টির উইকেট নয়: মল্লিক
টি-টোয়েন্টিকে বলা হয় চার-ছক্কার খেলা। প্রচুর রান হবে, সেই রান তাড়াও হবে। এটা ভেবেই গ্যালারীতে আসেন দর্শকরা। কিন্তু বিপিএলের ঢাকা পর্বে রান পেতে খেটে মরছেন ব্যাটসম্যানরা। অসমান বাউন্সে উইকেটে টিকে থাকাই যেন দায়। কোন বল যাচ্ছে হাঁটুর নিচ দিয়ে, আবার গুডলেন্থের বল লাফিয়ে উঠছে পিংপং বলের মতো। খেলোয়াড়রা হতাশা জানিয়েছেন আগেই। এবার গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচীব ইসমাইল হায়দার মল্লিকও স্বীকার করলেন, এটা টি-টোয়েন্টির আদর্শ উইকেট নয়।
রোববার দিনের প্রথম ম্যাচে সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে মাত্র ৬৭ রানে অলআউট হয়ে যায় চিটাগাং ভাইকিংস। প্রায় ৯ ওভার আগেই জিতে যায় । এরপর কিউরেটর গামিনি ডি সিলভাকে নিয়ে পিচ দেখতে চান ইসমাইল হায়দার মল্লিক। দেখে এসে জানালেন, ‘উইকেটের ব্যাপারটা যেটা আসছে, খালি চোখে যদি বলেন এটা কিন্তু আমাদের কাছে টি-টোয়েন্টি উইকেট মনে হয় না।
চট্টগ্রাম পর্ব শেষে ১০ দিনের বিরতি দিয়ে শনিবার বিপিএলের শেষ ধাপ শুরু হয় মিরপুরে। ওই দিন থেকে টানা তিন ম্যাচে একশ রানের নিচে অলআউট হয়েছে দুইদল। শনিবারের খেলা শেষে মিরপুরের পিচকে টি টোয়েন্টির জন্য ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলেছেন মাশরাফি। তামিমের মতে এটা ‘জঘন্য উইকেট’।
তিন ম্যাচের মধ্যে দুইদল ১০০ রানের নিচে অলআউট হয়েছে। আরেকদল ১০০র নিচে রান তাড়া করেও প্রায় হারতে বসেছিল। তবে উইকেট এতই খারাপ মানতে নারাজ মল্লিক, ‘উইকেট একটু স্লো কিন্তু এই উইকেটে ১০০ রান করার মতো উইকেট না এমন না। এটা কিন্তু ১৪০-১৫০ এর উইকেট। গতকালও যদি দুইটা ম্যাচ দেখেন তাইলে দেখবেন এক ম্যাচে স্কোর ৯৭, আরেক ম্যাচে ২০৫। একই উইকেটে কিন্তু খেলা হচ্ছে। এই উইকেটের সঙ্গে যদি ব্যাটসম্যানরা খাপ খাইয়ে খেলে তাহলে এটা ১৫০/১৬০ রানের উইকেট।’
উইকেট নিয়ে গ্রাউন্ডস কমিটির সঙ্গেও কথা হয়েছে গভর্নিং কাউন্সিলের। আরেকটু ব্যাটিং বান্ধব উইকেটের নির্দেশনাও এসেছে, ‘আমরা বলব উইকেট নিয়ে আমরা গ্রাউন্ডসের সঙ্গে বসেছি। আমরা তাদের বলেছি উইকেটটা যেন আরেকটু বেটার হয়।’
এমন উইকেটে ব্যাটিং করা দুরূহ। ব্যর্থতার জন্য মাশরাফি, তামিম দুজনেই ব্যাটসম্যানদের দোষ দিতে চাননি। ইসমাইল হায়দার মল্লিক উইকেটের পাশাপাশি দায় দিলেন ব্যাটসম্যানদেরই, ‘এটা এতটা খারাপ না, একটা ম্যাচ এক্সিডেন্টালি কম স্কোর হয়ে গেছে। ব্যাটসম্যানরা আসলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছে গতকালের ম্যাচে এমনটিই মনে হয়েছে।’
বিপিএলের আগে বেশ কিছুদিন দেশে খেলে ছিল না। সবশেষ অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে ছিলো আরও লম্বা বিরতি। তবু উইকেট মিরপুরের উইকেট ঠিক করতে না পারায় পর্যাপ্ত সময় না পাওয়াকেই কারণ বলছেন টুর্নামেন্টের সদস্য সচীব, ‘এই উইকেট কিন্তু রাতারাতি বদলানো যায় না। একটা উইকেট বদলাতে মাস চারেক সময় লাগে। এটা আমাদের কথা না, গ্রাউন্ডসে যারা কাজ করে কিউরেটর যারা আছে তারাই বলে তিন থেকে চারমাস সময় লাগে। বিপিএলের আগে খেলা ছিল ন্যাশনাল টিমের, উইকেটগুলো আসলে ওইভাবেই বানানো। তারপরও যাতে একদম খারাপ উইকেট না হয় সে ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
উইকেট নিয়ে সকলের বিরক্তি থাকলেও মিরপুরের কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার সামর্থ্য নিয়ে কোন সংশয় নেই মল্লিকের মনে, ‘না কিউরেটরের সামর্থ্য প্রশ্ন এখানে আসা অবান্তর। এই কিউরেটরের অধীনে গত চার বছর ম্যাচ পরিচালিত হচ্ছে। এই মাঠে বাংলাদেশ দলের অনেক সাকসেস আছে। এখানে আমরা ইন্ডিয়া, সাউথ আফ্রিকা, পাকিস্তানকে হারালাম। দুইটা টেস্ট জিতলাম। তখন এই সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন হয়নি। এখন একটা দল ৯৭ রানে অলআউট হয়ে গেল। ব্যাটসম্যানরা এপ্লাই করল না তাদের টেকনিক কিউরেটরকে দোষ দিলে এটা কিন্তু গ্রহণযোগ্য না। এ ব্যাপারে আমি স্পষ্ট বলতে পারি।’
ঢাকায় যেখানে রান নেই চট্টগ্রামে হয়েছে রান উৎসব। ভালো উইকেট পেয়ে পেসারদের আগুণও দেখা গেছে। চট্টগ্রামে পারা গেলে ঢাকায় কেন নয়?
‘চট্টগ্রামে যে উইকেট বানানো সেটাও কিন্তু আমাদের। আমাদের দুইটা উইকেট দুরকম। চিটাগাং এর উইকেট আর ঢাকার উইকেট কিন্তু ভিন্ন। ঢাকায় আপনি কিন্তু দুইটা টেস্ট ম্যাচ জেতার উইকেট বানিয়েছেন। আর চিটাগাং এ কিন্তু ভিন্ন। সব কিছু মাথায় রাখতে হবে।’
Comments