মিঠুনের ব্যাটে শেষ চারে মাশরাফিরা
ব্যাট হাতে হাল ধরে মন্থর পিচে শক্ত পূঁজি এনে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন আলি। রান তাড়ায় ভালো শুরু পাওয়া খুলনার ইনিংসের মাঝপথে চেপে ধরে রংপুরের বোলাররা নিয়ে নেন লাগাম। এবার আর ফিনিশিংয়ে কোন চমক আসেনি টাইটান্স ব্যাটিং থেকে। এক ম্যাচ পরই জয়ে ফিরেছে মাশরাফির দল।
রোববার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খুলনা টাইটান্সকে ১৯ রানে হারিয়েছে খুলনা টাইটান্স। এক ম্যাচ হাতে রেখে নিশ্চিত করেছে প্লে অফ রাউন্ড। শেষ বল পর্যন্ত খেলে ১২৮ রানে থেমেছে মাহমুদউল্লাহদের দৌঁড়। তবে এই ম্যাচ হারলেও তিনেই থাকছে তারা।
রংপুর জিতলেই শেষ চার নিশ্চিত। খুলনা সেই ধাপ পেরিয়েছে আগেই। রংপুরের হার খুলনার চেয়ে বেশি করে চাইছিল বোধহয় সিলেট সিক্সার্স ও রাজশাহী কিংস। শেষ পর্যন্ত কপাল পুড়েছে তাদের। মাঠে না থেকেও এই ম্যাচ দিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত ওই দুইদলের।
১৪৮ রান তাড়ায় শূন্য রানেই পড়তে পারত খুলনার প্রথম উইকেট। সোহাগ গাজীর বলে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। স্কয়ার লেগে ওই ক্যাচ ফেলে দেন নাজমুল হোসেন অপু। শান্তকে পরে আউট করেছেন অপুই। তবে তার আগে হয়ে গেছে ৬০ রানের জুটি। শূন্য রানে জীবন পাওয়া শান্ত ততক্ষণে করে ফেলেছেন ২০ রান। ওই মিস শঙ্কার কারণ হয়নি মাঝ ওভারের পরিকল্পিত বোলিং-ফিল্ডিংয়ে।
পরের স্পেলে বল করে এসে সাফল্য পান গাজীও। ওয়ানডাউনে নেমে আফিফ হোসেন পেটাতে গিয়ে ধরা পড়েন মাশরাফির হাতে। রংপুরের গলার কাঁটা হয়ে টিকেছিলেন মাইকেল কিলিঙ্গার। বোপারার বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে কাভার পার করতে পারছিলেন না। ওখানে দাঁড়ানো মাশরাফির ক্ষিপ্রতায় নিশ্চিত বাউন্ডারি বঞ্চিত হন তিনি, পরের বলে ফের চালালেন। এবার লফটেড ড্রাইভ তীব্র গতিতে গিয়ে জমল মাশরাফির হাতে। ২৩ রানের ব্যবধানে টপ অর্ডারে তিন ব্যাটসম্যান ফিরিয়ে তখন ম্যাচে ফিরেছে রংপুর।
যিনি হতে পারতেন বড় বাধা সেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বোল্ড করে নাহিদুল। ওই ওভারে এক রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে ফেরেন নিকোলাস পুরান।
এর আগে টস হেরে গেইলের ছোটখাটো ঝড়ের পর মিঠুন আলির অক্সিজেন জোগানো ইনিংস। মন্থর উইকেটে রংপুর পায় ১৪৭ রানের পূঁজি।
১৯ ওভার শেষে রংপুরের রান ছিল ১২৭। ২০ ওভার শেষে স্কোর ১৪৭। শফিউলের করা শেষ ওভার থেকে তিন ছক্কায় মিঠুন আলি নেন ২০ রান। তাতেই মন্থর পিচে জেতার মতো স্কোর পেয়ে যায় রংপুর। ৩১ বলে ৩১ রান করা মিঠুন শেষ চার বলে নেন ১৯ রান, ৩৫ বলেই করে ফেলেন ৫০।
শুরুর ঝড় তুলতে ওপেন করতে নামেন জিয়াউর রহমান। প্রথমবার সফল হয়েছিল, এরপরের দুই ম্যাচে মিলছে না তাল। এদিনও তালগোল পাকিয়েই ফিরেছেন শুরুতে। ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে আউট হন ৮ রান করে। ১১ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর দুই বড় নামের দিকে ফের তাকিয়েছিল রংপুর। এবার জমেনি গেইল-ম্যাককালাম জুটি। দুই চার আর এক ছক্কা মেরে ব্র্যান্ডন ম্যাককালামই ফিরেছেন আগে। শফিউলের বলে তার দারুণ ক্যাচ হাতে জমান আরিফুল। গেইল ছোটখাটো ঝড় তুলেছিলেন। দুই ছক্কা আর চার বাউন্ডারিতে খানিক্ষণ মাতিয়েছিলেন গ্যালারি। তবে আবারও বড় করতে পারলেন না ইনিংস। ২৭ বলে ৩৮ রান করে ফিরে যান এই ব্যাটিং দানব।
এক প্রান্তে টিকে থেকে রংপুরকে টেনে নিয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। আরেকদিকে রবি বোপারা, চামারা কাপুগেদারা বল নষ্ট করে আউট হয়েছেন। মিঠুন ছিলেন অবিচল। ইনিংসের শেষ বলে ছক্কা মেরে পূরণ করেছেন ফিফটি, আরেকপ্রান্তে ১৫ রান নিয়ে অপরাজিত তখন অধিনায়ক মাশরাফি।মন্থর পিচের ভাষা পড়ে ব্যাটিং করা মিঠুনের ইনিংসই ম্যাচ শেষে গড়ে দিয়েছে ব্যবধান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স: ১৪৭/৬ ( গেইল ৩৮, জিয়া ৮, ম্যাককালাম ১৫, মিঠুন ৫০*, বোপারা ১১, কাপুগেদারা ২, নাহিদুল ৬ , মাশরাফি ১৫* ; জায়েদ ১/১৪, আফিফ ০/১৮, আর্চার ২/২৮, শফিউল ১/৪৮, ইরফান ১/২০, মাহমুদউল্লাহ ০/৮, ব্র্যাথওয়েট ১/১০)
খুলনা টাইটান্স:১২৮/৮ (শান্ত ২০, কিলিঙ্গার ৪৪ , আফিফ ৮, মাহমুদউল্লাহ ৬, পুরান ১, ব্র্যাথওয়েট ৬, আরিফুল ৬ , আর্চার ১৯, ইরফান, শফিউল, ; গাজী ১/২৬, মাশরাফি ০/২১, ইশুরু ১/৩৭, নাহিদুল ১/১৬, নাজমুল ১/১৯, বোপারা ২/৪)
টস: খুলনা টাইটান্স
ফল: রংপুর রাইডার্স ১৯ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মোহাম্মদ মিঠুন আলি
Comments