জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়ায় নিন্দার ঝড়

​জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি ও তেলআবিব থেকে দূতাবাস স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করার ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় শুরু হয়েছে। বুধবার মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম প্রধান দেশগুলো এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। আর ফিলিস্তিনিরা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতা করার যোগ্যতা হারিয়েছে।
জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি
জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দেওয়ায় বিশ্বজুড়ে দেশটির বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের ঘোষণার পর জেরুজালেমের পুরনো অংশে একটি দেওয়ালে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়। ছবি: রয়টার্স

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি ও তেলআবিব থেকে দূতাবাস স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করার ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় শুরু হয়েছে। বুধবার মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম প্রধান দেশগুলো এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। আর ফিলিস্তিনিরা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতা করার যোগ্যতা হারিয়েছে।

সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। সৌদি বাদশাহ একে “অন্যায্য ও দায়িত্বজ্ঞানহীন” আখ্যা দিয়েছেন।

জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সরিয়ে জেরুজালেমে নেওয়ার ঘোষণায় শান্তি প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার যে পুরনো মার্কিন নীতি ছিল সেখান থেকে সরে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও ট্রাম্পের সমালোচনা করেছে।

ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানকে প্রত্যাখ্যান করে একে “একপাক্ষিক” আখ্যা দিয়ে অঞ্চলটিতে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। ব্রিটেন বলেছে, ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত কোনো কাজে আসবে না এবং শেষ পর্যন্ত জেরুজালেমের ওপর ইসরায়েল ও ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র উভয়েরই অধিকার রয়েছে। আর জার্মানি বলেছে, “দুই রাষ্ট্র” সমাধানের মাধ্যমেই কেবলমাত্র জেরুজালেমের ভাগ্য নির্ধারিত হতে পারে।

ট্রাম্পের ঘোষণাকে একমাত্র স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল। পূর্বেই ধারণ করা এক ভিডিও বার্তায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, “শান্তির দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল এটি।” ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার প্রথম দিন থেকেই জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী বানানোর লক্ষ্য ছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

নেতানিয়াহু আরও বলেন, ফিলিস্তিনিদের সাথে যে কোনো শান্তিচুক্তিতে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকার করতে হবে। এসময় তিনি ট্রাম্পের উদাহরণকে অনুসরণ করার জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

বুধবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ ছিলাম। কাজটা ঠিকই হয়েছে।’ জেরুজালেমকে আগেই ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়া উচিত ছিল বলেও ট্রাম্প এসময় তার পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের সমালোচনা করেন। তিনি তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ারও ঘোষণা দেন।

পৃথক ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল রাষ্ট্রকে পারস্পরিক স্বীকৃতির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার যে সমাধানের কথা বলা হয়, সেখানে জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ কোন পক্ষের কাছে থাকবে তাকে কেন্দ্র করেই বিরোধ রয়ে গেছে। মুসলিম, ইহুদি, ও খ্রিষ্টান তিন ধর্মের কাছেই জেরুজালেম পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।

ইসরায়েলিরা জেরুজালেমকে ঐতিহাসিকভাবে তাদের রাজধানী মনে করে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী বানাতে চায়।

১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পশ্চিম জেরুজালেম নিয়ন্ত্রণে রেখেছে ইসরায়েল। ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় তারা প্রাচীন এই নগরীটির পূর্ব অঞ্চলটিও দখল করে নেয়।

Comments