একটি ক্রিস্টোফার হেনরি গেইল ‘শো’, উড়ে গেল খুলনা
পিচ যাইহোক, পরিস্থতি যেমনই হোক। ক্রিস্টোফার হেনরি গেইল জ্বলে উঠলে সব সমীকরণই উবে যেতে বাধ্য। মিরপুরের ভরা গ্যালারির সামনে সেটাই হলো। রংপুর রাইডার্সের সবচেয়ে বড় নাম গেইল। কেন বড় নাম বুঝিয়ে দিয়েছেন আসল সময়ে। গেইলের তাণ্ডবে এলিমিনেটর ম্যাচে খুলনা টাইটান্সকে উড়িয়ে দিয়েছে রংপুর রাইডার্স ।
রান তাড়ায় নেমে ৪৫ বলে গেইল তুলে নেন বিপিএলের ইতিহাসের নিজের চার নম্বর সেঞ্চুরি। এবারের আসরের এটিই প্রথম সেঞ্চুরি। তাতে চার ছয়টি আর ছক্কা মেরেছেন ১০টি। ৫১ বলে ১২৬ রানের ইনিংসে গেইল পরে মেরেছেন আরও চারটি ছক্কা। শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এলিমিনেটর ম্যাচে রংপুর জিতেছে ৮ উইকেটে। খেলার জন্য তখনো বাকি ২৮ বল। ১৪ নম্বর ছক্কা মেরে খেলা শেষ করে গেইলের ভঙ্গিমা যেন এমন- ‘শেষ? আর রান বাকি নাই?’
এই ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে খুলনা টাইটান্স। দাপুটে জিতে ১০ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের টিকেট কনফার্ম করল রংপুর।
উইকেট, ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৬৮ বেশ বড় লক্ষ্যেই ছিল। গেইলের সঙ্গে সোহাগ গাজীকে নামিয়ে ওপেনিংয়ে চমক দিয়েছিল রংপুর। গাজী পারেননি আরও বড় চমক দিতে। তৃতীয় ওভারে জোফরা আর্চারের পেসে পরাস্থ হয়ে ১ রান করে বোল্ড হন তিনি। তবে এর আগে প্রথম দুই ওভার থেকে ২৪ রান নিয়ে ঝড়ের ইঙ্গিত দিয়ে রাখেন গেইল। এরমধ্যে ১৪ রানই নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহর দ্বিতীয় ওভার থেকে। গাজীকে ফেরানোর ওভারে আরও বড় আঘাত দেন আর্চারই। বিপিএলে এসে একদম মলিন ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম এবারও ব্যর্থ। মুখোমুখি মাত্র দ্বিতীয় বলে ক্যাচ তুলে দেন কোন রান না করেই।
গেইলের তছনছ করে দেওয়া ব্যাটিংয়ে ১০ ওভারেই রংপুরে তুলে ফেলে ১০৪ রান। বাকি পাঁচ ওভারে বাকি রান তুলে ম্যাচের আয়ু দেয় কমিয়ে। খুলনার কোন বোলারই পারেননি তাল রাখতে। বেদম পিটুনি খেয়েছেন গেইলের হাতে।
মিরপুরের অসমান বাউন্সের উইকেট নিয়ে এমনিতেই আলাপ তুঙ্গে। সেইসঙ্গে প্লে অফের প্রথম ম্যাচের আগে আকাশ ভারি, রোদের দেখা নেই। দিনে দুপুরেও তাই জ্বালাতে হলো ফ্লাড লাইট। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাটিং সহজ কাজ নয়। টস জিতে অনুমিত ভাবেই ফিল্ডিং বেছে নেন রংপুর অধিনায়ক মাশরাফি। বল হাতে শুরুটাও ভালো হয়েছিল তাদের। তবে মাঝারি কয়েকটি ইনিংস আর রংপুরের বাজে ফিল্ডিংয়ে ১৬৭ রানের বড়সড়ো পূঁজিই পেয়ে যায় টাইটান্স।
টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দারুণ বল করতে থাকা সোহাগ গাজী এদিনও সাফল্য এনে দেন রংপুরকে। তার অফ স্পিনে সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে ক্যাচ তুলে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ওয়ানডাউনে নেমে চার-ছয়ে ঝড় তুলতে চেয়েছিলেন আফিফ হোসেন। তার ডানা ভেঙ্গেছেন লাসিথ মালিঙ্গা। মালিঙ্গার বলের পেস বুঝতে পারেননি আফিফ, ফ্লিক করতে গিয়ে স্টাম্পে নিয়ে আসেন বল।
চারে নেমে দ্রুত রান তোলার মতি নিয়ে নেমেছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও। ৬ বলের ইনিংসেই দুই চার, দুই ছক্কায় করে ফেলেন ২০ রান । আউট হয়েছেন লং অন দিয়ে আরেকটি ছক্কা পেটাতে গিয়ে।
ওপেনিংইয়ে নামা মাইকেল কিলিঙ্গার আউট হয়েছে ১২তম ওভারে। এতসময় টিকেও খুব বেশি রান পাননি তিনি। চতুর্থ উইকেটে আরিফুলের সঙ্গে ২৬ রানের জুটি গড়েন। সব মিলিয়ে ২৬ বলে ২১ রান করে রবি বোপারার দারুণ এক ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ৮২ রানে চার নম্বর উইকেট খুয়ায় টাইটান্স।
যে জুটি ভাঙতে পারত ৯২ রানে। সেই জুটি ভাঙে ১২২ রানে গিয়ে। এদিনও উইকেটের ভাষা পড়ে নিয়ে ব্যাট করছিলেন আরিফুল হক। ১৭তম ওভারে এসে রান বাড়ানোর তাড়া ছিল। মিড অফ ফিল্ডার উপরে থাকাত রুবেলের আগের বলটি লফটেড ড্রাইভে সীমানা ছাড়া করেছিলেন। তাই দেখে লং অফে নেমে যান মাশরাফি। পরের বলে কাভার দিয়ে উড়াতে গিয়ে মিস টাইমিং হয়ে যায়। দৌঁড়ে গিয়ে এবার ক্যাচ দেন বোপারা। ৩০ বলে ২৯ রান করে থামে আরিফুলের ইনিংস।
তিন ওভার থেকে নেমেছিলেন ব্র্যথওয়েট। শেষের ঝড় তোলার দায়িত্ব ভালোমতই সেরেছেন এই ক্যারিবিয়ান। ৯ বলে ২৫ রান করে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন তিনি। দলকে পাইয়ে দেন ১৬৭ রানের শক্ত ভিত। যদিও সেই ভিত খড়কুটোর মতো উড়ে গেছে গেইল ঝড়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা টাইটান্স: ১৬৭/৬ (শান্ত ১৫, কিলিঙ্গার ২১, আফিফ ১১, মাহমুদউল্লাহ ২০, আরিফুল ২৯ , পুরান ২৮, ব্র্যাথওয়েট ২৫* , আর্চার ৬* ; মাশরাফি ০/২৩ , গাজী ১/২৪, মালিঙ্গা ২/৪৯, নাজমুল ১/১৯, রুবেল ১/৩৩, বোপারা ১/১৫ )
রংপুর রাইডার্স: ১৭১/২ (গেইল ১২৬*, গাজী ১, ম্যাককালাম ০, মিঠুন ৩০*; জায়েদ ০/২৩, মাহমুদউল্লাহ ০/৩০ , আর্চার ২/৩০, ইরফান ০/২৫, ব্র্যাথওয়েট ০/৩০ , আফিফ ০/২১, শান্ত ০/১২) ;
টস: রংপুর রাইডার্স
ফল: রংপুর রাইডার্স ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ক্রিস গেইল।
Comments