জানুয়ারিতে প্রিমিয়ার লিগ, টিভিতে সম্প্রচারের চিন্তা
জাতীয় দলের তারকাদের পেতে এতদিন বৃষ্টি আর তীব্র গরমের মধ্যে ঢাকা প্রিমিয়ার হয়ে আসছিল। এবার এই আসরকে আরও জমজমাট করতে এগিয়ে আনা হচ্ছে সূচি। চেষ্টা হবে টিভিতে সম্প্রচারেরও। দায়িত্ব নেওয়ার পর সিসিডিএমের নতুন চেয়ারম্যান জানালেন এবার লিগ শুরু হতে পারে ২০ জানুয়ারি।
বিসিবির সবশেষ সভায় নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করার হয়। আগেরবারের থেকে এবার যেসব রদবদল এসেছে তারমধ্যে অন্যতম সিসিডিএম। ঘরোয়া ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান কাজি ইনাম আহমেন। নতুন দায়িত্ব নিয়ে তিনি শোনালেন নতুন আশাবাদ।
শুরুর সময়
গেল আসরে রোজা, বৃষ্টি আর গরম মিলিয়ে প্রিমিয়ার লিগ চালাতে বেগ পেতে হয়েছিল আয়োজকদের। সেই সমস্যা মাথায় রেখে ইনাম জানালেন,
‘প্রিমিয়ার লিগ গত কয়েক বছরে দেখেছি বৃষ্টির সময়, রোজার সময় হয়। অনেক ক্লাবই আমাদেরকে এটা নিয়ে বলেছে। আমরাও ক্লাবগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি। জানুয়ারি ২ বা ৩ তারিখ আমরা ক্লাব কতাদের সঙ্গে বসব। প্রিমিয়ার লিগ আবার আমরা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ফিরিয়ে আনতে। এবার জানুয়ারির ২০ তারিখ আমরা শুরুর চেষ্টা করব। তার ৮-১০ দিন আগে “প্লেয়ার্স বাই চয়েজ” ড্রাফট যাতে করা যায়, সেটির জন্য ইতিমধ্যেই ক্লাবগুলোর সঙ্গে কথা বলছি।’
দলবদল
দলবদল নিয়ে অবশ্য ক্রিকেটারদের জন্য সুখবর নেই। এবারও ক্রিকেটারদের স্বাধীনভাবে দল বাছাইয়ের সুযোগ থাকছে না। বিভিন্ন গ্রেডিং ঠিক করে পারিশ্রমিক বেধে দেওয়া এই নিয়মই থাকছে আরও একবার,
‘এবার আমরা “প্লেয়ার্স বাই চয়েজ” পদ্ধতিতে দলবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেকগুলো ক্লাব আমাদের কাছে অনুরোধ করেছে। পাশাপাশি আমরা যেটি বিবেচনা করে দেখেছি, আমাদের জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটার খেলতে পারবে না। কারণ লিগ হবে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চে। প্রতিটি ক্লাব চারজন করে ক্রিকেটার ধরে রাখতে (রিটেইন করতে) পারবে।
'ক্লাবগুলোর কথা হচ্ছে, খেলাটা আস্তে আস্তে টেকসই (সাসটেইনেবল) থাকছে না। অনেক চাহিদা এসে যাচ্ছে, যেটা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না টিকে থাকার ক্ষেত্রে। যে কারণে প্লেয়ার্স বাই চয়েজ আসছে।’
‘তবে ক্রিকেটারদের ব্যাপারটিও আমাদের ভাবনায় আছে। বিশেষ করে এই লিগ যেহেতু অনেক ক্রিকেটারের আয়ের মূল উৎস। সেটিও আমরা ঠিক রাখার চেষ্টা করব।‘
‘আমরা এর মধ্যেই জাতীয় নির্বাচকদের অনুরোধ করেছি গ্রেডিং অনুযায়ী পারিশ্রমিক ঠিক করতে। গত মৌসুমে কে কেমন টাকা পেয়েছে, আমাদের একটি ধারণা আছে। সেটা বিবেচনা করেই করা হবে। ক্রিকেটাররা যেন সেটির আশেপাশেই পায়, সেই চেষ্টা আমাদের করতে হবে।‘
ভেন্যু
ভেন্যু নিয়েও নতুন সিদ্ধান্তের দিকে যেতে চাইছে সিসিডিএম। এবার রাজধানীর ভেতরেই বিকল্প মাঠে খেলার কথা ভাবা হচ্ছে,
‘গত কয়েক মৌসুমে মাঠের স্বল্পতা ছিল। প্রিমিয়ার লিগের খেলা আমরা ভালো মাঠে চালাতে চাই। কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট এটি। সাধারণ বিকেএসপির দুটি মাঠ ব্যবহার করা হয়, ফতুল্লা। আমরা চেষ্টা করব ঢাকা শহরের ভেতরে যে মাঠগুলো আছে, সেগুলো কাজে লাগাতে। বিশেষ করে ধানমণ্ডি আবাহনী মাঠ, বুয়েট, ঢাবি মাঠ আছে.. ক্লাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে, প্রয়োজনে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে কথা বলে আমরা দেখব কেন মাঠগুলোকে আবার কাজে লাগানো যায়।’
টিভি সম্প্রচার
পাশের দেশ ভারতে যেখানে রঞ্জি ট্রফিও সরাসরি সম্প্রচারিত হয়, বাংলাদেশে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগও পায় না সম্প্রচারের আলো। এবার নাকি করা হবে সে চেষ্টাও, ‘আমরা চেষ্টা করব সুপার লিগের খেলাগুলো, অন্তত ৫-৬টি খেলা সরাসরি সম্প্রচার করতে। আগেও অনেকবার আলাপ করেছি, সরাসরি সম্প্রচার না হলেও মাঠে ফিক্সড ক্যামেরা ব্যবহার করা হলে নির্বাচকদের জন্য সুবিধা হয়। খেলার মান যাচাই করা যায়। আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব কিছু করতে।’
বিপিএলের বাইরে টি-টোয়েন্টি লিগ
বিপিএলের সময়েই গভর্নিং কাউন্সিনের সদস্য সচীব ইসমাইল হায়দার মল্লিক জানিয়েছিলেন, কেবল দেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে আরেকটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট করার চিন্তা চলছে। সিসিডিএম চেয়ারম্যান জানালেন দলগুলো হতে পারে প্রিমিয়ার লিগেরই,
‘প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগে যে দলগুলো উঠবে সেই ৬ দল, কিংবা লিগের শীর্ষ ৮ দলকে নিয়ে একটি টি-টোয়েন্টি লিগ করব। ৮ দলের ভাবনাটা এসেছে মূলত প্রিমিয়ার লিগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে। দেখা যায় সুপার লিগের ৬ দল আর রেলিগেশনে থাকা ৩ দল খেলায় লড়াই করছে। সাত-আটে থাকা দলের কিছু নেই। ৮ দলকে নিয়ে দলে সাত-আটে থাকার জন্যও লড়াই হবে।’
‘আমাদের চাওয়া মিরপুর স্টেডিয়ামেই এই লিগ করার। এক সপ্তাহ সময় পেলেই সম্ভব। নক আউট বা দুই গ্রুপে ভাগ করে হবে। সেটি টিভিতে সম্প্রচার হবে। প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর রোমাঞ্চও বাড়বে।’
লোয়ার লিগ
‘যেহেতু মাঠের স্বল্পতা আছে, আমাদের ইচ্ছা আছে প্রিমিয়ার লিগের খেলা শেষ করে প্রথম বিভাগ করব। পিমিয়ার লিগের সময়ই আমরা দ্বিতীয় বিভাগ শুরু করে দেব। দ্বিতীয় বিভাগ শেষ হলে ওই মাঠে তৃতীয় বিভাগ হবে।’
আম্পায়ারিংয়ের মান
‘আমাদের বোর্ড প্রধান অনেকবারই বলেছেন প্রিমিয়ার লিগ, প্রথম বিভাগ থেকে শুরু করে সব লিগেই চেষ্টা করব ভালো করার। এই বিষয়ে এরমধ্যেই আম্পায়ারিং কমিটির নতুন চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আম্পায়ারিংয়ের মান যেন ভালো থাকে। একটা নির্দিষ্ট মান যেন থাকে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই ভালো করার চেষ্টা থাকবে।’
প্রিমিয়ার লিগের মার্কেটিং
‘সুপার লিগে যদি মাঠে দর্শক আসে, যদি টিভিতে সম্প্রচার করতে পারি, তাহলে সবাই উৎসাহিত হবে। লিগ জনপ্রিয় হলেই কিন্তু মাঠে দর্শক আসা বাড়বে। মার্কেটিং করা বা স্পন্সর পাওয়া সুবিধে হবে। জৌলুস ফিরিয়ে আনতে পারলে শুধু লিগ নয়, ক্লাবগুলোও স্পন্সর পাবে।’
Comments