জঙ্গল থেকে মায়ের কোলে ফিরলেন নিখোঁজ সাংবাদিক উৎপল

সাংবাদিক উৎপল দাস
সাংবাদিক উৎপল দাস

দুই মাসেরও বেশি সময় নিখোঁজ থাকার পর সাংবাদিক উৎপল দাসকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পাওয়া গেছে। তবে কে বা কারা তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে জঙ্গলের মধ্যে একটা টিন শেড ঘরের মধ্যে রাখা হয় বলে পুলিশকে জানান উৎপল দাস।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় রূপগঞ্জের ভুলতার আদুরিয়া শাহজালাল ফিলিং স্টেশনের সামনে উৎপলকে কালো মাইক্রোবাসে করে ফেলে রেখে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে রাত ১টায় ভুলতা ফাঁড়ির পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

বুধবার দুপুরে ভুলতা ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. শহিদুল আলম বলেন, “রাত ১টায় স্থানীয় লোকের মাধ্যমে জানতে পারি এক ব্যক্তিকে মাইক্রোবাসে করে শাহজালাল ফিলিং স্টেশনের সামনে ফেলে যায়। পরে সেখানে পৌঁছলে উৎপল দাস হাত উঁচিয়ে জানায় তিনিই সাংবাদিক উৎপল দাস। তিনিই দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিলেন। পরে আমরা তাকে উদ্ধার করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসি।

তিনি আরো জানান, “উৎপল দাস সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। রাতে ফাঁড়িতে হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করেছেন এবং পরিবারসহ সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। রাত আড়াইটায় নরসিংদী থেকে তার পরিবার আসলে তাদের সঙ্গে চলে যান। এসময় উপস্থিত ছিলেন উৎপলের বাবা চিত্তরঞ্জন দাস, মা বিমলা রানী দান, বোন বিনীতা রাণী দাস।

উৎপল দাস পরিদর্শক মো. শহিদুল আলমকে জানান, “চোখ বাধা অবস্থায় উৎপলকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। তখন পেছনে ফিরে তাকাতে নিষেধ করে। তিনিও (উৎপল) আর পেছনে ফিরে তাকাননি। সেখান থেকে পেট্রোল পাম্পে গিয়ে বাড়িতে ফোন করে।”

তিনি আরো জানান, “উৎপলকে ধানমন্ডি থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোথায় নেওয়া হয়েছিল, কিভাবে নেওয়া হয়েছিল এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। চোখ বেঁধে গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে একটা জঙ্গলের মধ্যে একটা টিন শেড ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়। তিন বেলা নরমাল খাবার দেওয়া হতো। সেখানে চৌকি বা খাট ছিল না। ফ্লোরের মধ্যে থাকতে হয়েছিল। ওই ঘরে এটাচড বাথরুম ছিল। সেখানে গোসল করতো। সারাক্ষণ ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। তারা দরজার নিচ দিয়ে খাবার দিয়ে যেতো। তুলে নিয়ে যাওয়ার পর প্রথম দিকে কিছু চড় থাপ্পড় মারা হয়েছে। তারা মাঝে মাঝে টাকা চাইত। টাকা দিতে না পারায় শেষ দিকে তারা এসে বলেছে, তুই যেহেতু টাকা দিতে পারিসনি মেরে ফেলব। পরে মঙ্গলবার রাতে ভুলতা শাহজালাল ফিলিং স্টেশনের সামনে ফেলে রেখে যায়।”

দুই মাস ১০ দিন পর ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে উৎপলের মা বিমলা রানী দাস সাংবাদিকদের বলেন, “অনেক ভালো লাগছে, অনেক শান্তি লাগছে।”

উৎপলের বাবা চিত্তরঞ্জন দাস সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ছেলেকে আমি ফিরে পেয়েছি। এটাই আমার বড় আনন্দ। আপনাদের সহযোগিতা বেশি কামনা করি। সাংবাদিক মহল আমাকে সাহায্য করেছে।”

উল্লেখ্য গত ১০ অক্টোবর রাজধানী থেকে নিখোঁজ হয়েছিল সাংবাদিক উৎপল দাস। উৎপল ঢাকার ফকিরাপুল এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরার রাধানগরে। নিখোঁজের ঘটনায় গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর মতিঝিল থানায় দুটি পৃথক সাধারণ ডায়েরি করা হয় তার পরিবার ও প্রতিষ্ঠান পুর্বপশ্চিমবিডি.কম-এর পক্ষ থেকে।

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

3h ago