মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে ফ্ল্যাটের দাম

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ক্রেতাদের পরচারণায় জমে উঠেছে রিহ্যাব মেলা। ছবি: স্টার

রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের শীতকালীন আবাসন মেলা চলছে এখন। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী এই মেলায় এক ছাদের নিচেই বসেছেন আবাসন খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় দুই শতাধিক কোম্পানি।

ঋণসুবিধাসহ নানা অফার থাকায় সাধারণত মধ্যবিত্তদের এসব মেলায় ভিড় করতে দেখা যায়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টাতেও কোন কমতি নেই কোম্পানিগুলোর মধ্যে। কিন্তু মেলায় আসা লোকজন জানাচ্ছেন ফ্ল্যাটের যে দাম চাওয়া হচ্ছে তা এখনও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে।

বেসরকারি একটি কোম্পানিতে মধ্যম পর্যায়ে কর্মরত আব্দুল লতিফ তার স্ত্রীকে নিয়ে এবার মেলায় এসেছিলেন। মিরপুর এলাকায় একটি ফ্ল্যাটের বুকিং দেওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু মেলায় এসে তার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। এখানে কোনো ফ্ল্যাটেরই দাম বর্গফুট প্রতি ছয় হাজারের নিচে নেই। যার অর্থ দাঁড়ায় ১০০০ থেকে ১২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের দাম পড়বে প্রায় ৮০ লাখ টাকার মত। এর সাথে রেজিস্ট্রেশন খরচ তো রয়েছেই। মেলা ঘুরে দেখার পর তার বক্তব্য, “এত টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা তার সামর্থ্যের বাইরে।”

ফ্ল্যাটের দাম শোনার পরও আশা ছাড়েননি লতিফ। ঋণের খোঁজখবর নিতে তিনি মেলাতেই একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বুথে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ঘুরে এসে তিনি জানান, “৫০ লাখ টাকা ঋণ নিলে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। মাসে যা বেতন পাই কিস্তিতেই তার ৮০ শতাংশ চলে যাবে। এই ঋণের বোঝা টানতে হবে ২০ বছর ধরে।”

মেলায় তিন রুমের ফ্ল্যাটের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। এলাকা ভেদে এ ধরনের ফ্ল্যাটের দাম হাঁকা হচ্ছে ৮০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত। হাউজিং ডেভেলপার কোম্পানি প্রিয় প্রাঙ্গণ বিক্রির জন্য তাদের চলমান নয়টি প্রকল্প নিয়ে এসেছে।

তাদের এরকমই একটি প্রকল্প প্রিয় প্রাঙ্গণ বসন্তিকা। মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় প্রকল্পে ১,৪৩৬ বর্গফুট থেকে শুরু করে ১,৪৭৬ বর্গফুটের মধ্যে তিন ধরনের ফ্ল্যাট রয়েছে তাদের। প্রতি বর্গফুটের জন্য দাম ধরা হয়েছে ৯,৫০০ টাকা। সে হিসাবে রেজিস্ট্রেশন ফি ছাড়াই প্রতিটি ফ্ল্যাটের দাম পড়বে এক কোটি ৩৬ লাখ টাকারও বেশি। ওই একই এলাকায় আরেকটি প্রকল্পের ফ্ল্যাটে বর্গফুট প্রতি ৮,৫০০ টাকা দাম রাখছে প্রিয় প্রাঙ্গণ।

আরেকটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এস্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট মেলায় তাদের ফ্ল্যাটের জন্য বুকিং নিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা শফিকুল আলম বলেন,  “৯০ লাখ থেকে শুরু করে চার কোটি টাকার ফ্ল্যাট রয়েছে আমাদের।” সম্ভাব্য ক্রেতাদের দিক থেকে এবছর ভালো সাড়া মিলছে বলে যোগ করেন তিনি।

মেলায় আসা অন্যান্য সুপরিচিত আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর ফ্ল্যাটের দামও কমবেশি প্রিয় প্রাঙ্গণ ও এস্যুরেন্সের মতই। তবে স্বল্প পরিচিত কিছু প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন ৪,০০০ টাকা বর্গফুটেরও ফ্ল্যাট নিয়ে এসেছেন।

ব্যাংক ঋণের খোঁজখবর

আবাসন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানও মেলায় স্টল নিয়ে বসেছে। ফ্ল্যাট কেনার জন্য তারা সাড়ে ৮ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশ সুদের মধ্যে ঋণ দিচ্ছেন। মেলায় সর্বনিম্ন সাড়ে ৮ শতাংশ সুদে হোম লোন দিচ্ছে ইস্টার্ন ব্যাংক। অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের সুদের হার ১০.২৫ থেকে ১১.৫ শতাংশ, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ১০.৫ শতাংশ ও রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ৯ শতাংশ সুদে ফ্ল্যাট কেনার জন্য ঋণ দিচ্ছে।

রিহ্যাব জানায়, তৃতীয় দিনে গতকাল পর্যন্ত ১৪ হাজার মানুষ মেলায় এসেছেন। মোট ২০০টি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, ভবন নির্মাণের সরঞ্জাম সরবরাহকারী ৩০টি প্রতিষ্ঠান ও ১৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Drafting new constitution can take a long time: Asif Nazrul

He proposed that the next parliament can act as constitutional authority and amend the 1972 constitution until a new one is enacted

1h ago