টেস্টে স্মরণীয় দুই জয় আর সাত হারের বছর

তাতে আছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শততম টেস্ট জয়, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আছে প্রথম জয়। আর আছে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে নাস্তানাবুদ হওয়ার বিব্রতকর স্মৃতি
shakib al hasan
২০১৭ সালে বাংলাদেশের দুই টেস্ট জয়েরই হিরো সাকিব আল হাসান। ছবি: ফিরোজ আহমেদ (ফাইল)

বাংলাদেশ খুব বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পায় না বলে হাহাকার পুরনো। ২০১৭ সালে এমনটি বলবার সুযোগ নেই। বছর জুড়েই সাদা পোশাকে ব্যস্ত সময় গেছে বাংলাদেশের। এই বছর যে ৯টি  টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন সাকিব-মুশফিকরা। তাতে আছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শততম টেস্ট জয়, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আছে প্রথম জয়। আর আছে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে নাস্তানাবুদ হওয়ার বিব্রতকর স্মৃতি।

mushfiqur rahim
ছবি: এএফপি
বছরটা শুরু হয়েছিল নিউজিল্যান্ড সফর দিয়ে। ওয়েলিংটনে প্রথম টেস্টে নেমেই মনে রাখার মতো শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের ২১৭ আর মুশফিকুর রহিমের ১৫৯ রানের ইনিংসে ৫৯৫ রান করে ইনিংস ঘোষণার তাগদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। জিততে না পারুক ওই টেস্ট বাংলাদেশ হারছে না, এমনটাই ধরে নিয়েছিলেন সবাই। হলো ঠিক উলটো। অস্বস্তির রেকর্ড গড়েই হারল টাইগাররা। টেস্টের ইতিহাসে প্রথম ইনিংসে এতরান করে হারেনি আর কোন দল। মুশফিকুর রহিমরা ম্যাচ খোয়ালেন ৮ উইকেটে।

প্রথম টেস্টে এমন সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ ভড়কে গিয়ে লড়াই করতে পারেনি পরেরটিতে। হারে ৯ উইকেটে। ব্যাটিংয়ে আসেনি বড় ইনিংস, বল হাতেও সবাই ছিলেন সাদামাটা।

নিউজিল্যান্ড থেকে ফিরে বছরের সবচেয়ে আলোচিত টেস্ট সফর ছিল ভারতে। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ১৭ বছরের মাথায় প্রথমবার ভারতের মাঠে টেস্ট খেলতে যায় বাংলাদেশ। হায়দরাবাদে সেই টেস্টে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে কুলিয়ে উঠতে না পারলেও শেষ দিন পর্যন্ত লড়েছিল মুশফিকের দল। উইকেটের পেছনে খারাপ ম্যাচ গেলেও ব্যাট হাতে দৃঢ়তা দেখান মুশফিক। প্রায় ৪০০ মিনিট ক্রিজে থেকে তিনি খেলেছিলেন ১২৭ রানের ইনিংস।

ফেব্রুয়ারি ভারত সফর শেষ করে পরের মাসেই শ্রীলঙ্কায় গিয়ে শুরুটা একদম বেমানান বাংলাদেশের। গলে লঙ্কানদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ধসে পড়ার জুজু কাটাতে পারেনি, হার ২৫৯ রানের বিশাল ব্যবধানে।

mushfiqur rahim
কলম্বোয় পরের টেস্টই ছিল দেশের ইতিহাসের শততম টেস্ট। মাইলফলকে পৌঁছানোর ম্যাচে বরাবরই তেতে থাকে বাংলাদেশ। শততম ওয়ানডে, দুইশতম ওয়ানডে আছে বড় বড় জয়। শততম টেস্টেও করে বাজিমাত। সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে স্বাগতিকদের ৪ উইকেটে হারিয়ে দেয় টাইগাররা। ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি, বল হাতে দুই ইনিংসে মিলিয়ে ছয় উইকেট নিয়ে কলম্বোয় দেশের পতাকা উড়ান সাকিব।

এই সাকিবের হাত ধরেই বছরের সবচেয়ে বড় জয়টিও পায় বাংলাদেশ। কুলীন অস্ট্রেলিয়াকে ঘরের মাঠে পেয়ে স্পিন ঘুর্ণিতে নাস্তানাবুদ করেন শীর্ষ অলরাউন্ডার। মিরপুর টেস্টে সাকিবের ১০ উইকেটে বাংলাদেশ পায় ২০ রানের স্মরণীয় জয়। চট্টগ্রামে পরের টেস্টেই অবশ্য ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে সমতা এনে দেশে ফেরে স্টিভেন স্মিথের দল। 

বছরের শেষটাতেও আলোচনায় ছিলেন সাকিব। তবে এবার না খেলায়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় পেয়ে চনমনে থাকা দলের সামনে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কঠিন সফর। ঠিক তার আগেই টেস্ট থেকে ছয় মাসের বিশ্রাম চেয়ে বসেন তিনি। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়েও দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট খেলতে নেওয়া যায়নি তাকে। প্রভাব পড়ে দলের পারফরম্যান্সেও।  দু প্লেসিদের দেশে গিয়ে রীতিমতো উড়ে যায় মুশফিকুর রহিমের দল। পুরো সফরে কাগিসো রাবাদার পেসের ঝাঁজে নাকাল ছিলেন ব্যাটসম্যানরা। আর ব্যাট হাতে  প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা খাটিয়ে মেরেছেন টাইগার রুবেল-তাসকিনদের।

ওই সফরের টিম ম্যানেজমেন্ট, বিশেষ করে কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে অধিনায়ক মুশফিকের মনমালিন্য বাইরে চলে আসে। সফরচলাকানীই পদত্যাগ করেন কোচ। যা গণমাধ্যমে প্রকাশ পায় অনেক পরে। তার রেশে বছরের শেষ দিকে অধিনায়কত্ব হারান মুশফিকও।

 

Comments