কলকাতা বই মেলা শুরু আজ

আজ মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম বইয়ের মেলা ‘কলকাতা পুস্তক মেলা ২০১৮’। বিকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ফ্রান্সের সংস্কৃতি ও যোগাযোগ মন্ত্রী ফ্রান্সিস নিসেন যৌথভাবে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। সেখানে থাকবেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, আয়োজক গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, সভাপতি সুধাংশু দে এবং থিম কান্ট্রি ফ্রান্সের বেশ কয়েকজন সাহিত্যিক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এদিন ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসরকারি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘লিজিয়ন অব অনার’ অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে। যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, নেপাল, ভুটান ছাড়াও ২৯টি দেশ এবারের কলকাতা বই মেলায় অংশ নিচ্ছে।
এবার কলকাতার বই মেলার স্থান পরিবর্তন হয়ে শহর থেকে একটু বাইরে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে আনা হয়েছে। মেলার নির্ধারিত জায়গা বাইপাসের মিলন মেলা গ্রাউন্ডের উন্নয়ন কাজ চলায় অস্থায়ীভাবে এবার মেলা সরিয়ে আনা হয়েছে। তাই মেলায় এবার জায়গা কিছুটা কম এবং স্টল ও প্যাভিলিয়নের ডিজাইনগুলোও একটু ছোট আকারে বসানো হয়েছে।
আর সেই কারণেই এবার বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নের জায়গাও কম। ঢাকার আহসান মঞ্জিলের আদলে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বর্গ ফুট জায়গায় নিয়ে এবার বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন। মেলার নয় নম্বর গেট দিয়ে রাস্তার শেষ দিকে থিম কান্ট্রি ফ্রান্সের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে আহসান মঞ্জিলের রেপ্লিকা। মঙ্গলবার সকালেও শেষ মুহূর্তের প্যাভিলিয়ন তৈরির কাজ চলছে। তবে ভেতরের স্টল তৈরির কাজ শেষ।
প্যাভিলিয়ন শিল্পী রঘুনাথ কর্মকার জানালেন, এক সপ্তাহ সময়ের মধ্যেই এতো বড় একটি কাজ শেষ করতে হয়েছে। ৫০ জনের বেশি নির্মাণ শ্রমিক, শিল্পী মিলে এই প্যাভিলিয়ন তৈরি করা হয়েছে। এবার কলকাতা বই মেলায় যেকটি সেরা প্যাভিলিয়ন তৈরি করা হচ্ছে- এর মধ্যে বাংলাদেশ সেরা হিসাবে জায়গা পাবে বলেও ওই শিল্পীর বিশ্বাস।
এবার মেলায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে ৭২৫ স্টল বসেছে। মোট নয়টি গেট দিয়ে মেলায় প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সুযোগ থাকছে। সিসিটিভি দিয়ে পুরো মেলার ওপর নজরদারী করা হবে। প্রচুর সংখ্যক পুলিশ ছাড়াও গোয়েন্দারা থাকবেন। জায়গা পরিবর্তনের মানুষের কিছুটা সমস্যা হবে, কিন্তু বই মেলা তো প্রাণের মেলা তাই যারা বই কিনতে আসবেন; তাদের কাছে এই সমস্যাটা খুব বড় নয়- বললেন ওয়েস্ট বেঙ্গল পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্শ গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়।
এদিকে এবারও মেলায় বাংলাদেশ দিবস হিসেবে একদিন বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতা বই মেলা কর্তৃপক্ষ। ৩ ফেব্রুয়ারি দিন জুড়ে বাংলাদেশ নিয়ে নানা অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এবং সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বাংলাদেশ দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
এবার কলকাতা বই মেলার ৪২তম আয়োজন। ১৯৭৬ সাল থেকে কলকাতার ময়দান বা গড়ের মাঠে বই মেলার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কারণে ২০০৯ সালে কলকাতা বই মেলার পাকাপাকি জায়গা হয় রাজ্য সরকারের মেলা করার জন্য নির্ধারিত জায়গা মিলন মেলা গ্রাউন্ডে।
প্রতিবছর মেলায় দর্শক ও ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ কলকাতা বই মেলায় নয় দিন প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটেছিল। এবার মেলায় আশানুরূপ পাঠক-ক্রেতারা আসবেন বলে প্রত্যাশা আয়োজকদের।
Comments