দারুণ বোলিংয়ের দিনে ব্যাটিংয়ে আঁধার
প্রথম সেশন থেকেই উইকেটে স্পিনারদের জিভে জল আসার মত টার্ন আর বাউন্স। লাটিমের মতো ঘুরতে থাকা পিচে আগে বোলিং পেয়ে শ্রীলঙ্কানদের টপাটপ উপড়ে দিয়ে শুরু বাংলাদেশের। এই পিচে শেষ বিকেলে নেমে টাইগার ব্যাটসম্যানরাও করেছেন কাঁপাকাঁপি। শ্রীলঙ্কাকে আড়াই সেশনে অলআউট করে দিয়েও ৪ উইকেট হারিয়ে অস্বস্তি নিয়ে দিন পার করেছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে উইকেট পড়েছে ১৪টি। দুই সেশনে ৮ উইকেট হারানোর পর তৃতীয় সেশনের প্রথম ঘণ্টাতেই ২২২ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। জবাবে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা হয় ভয়াবহ বিপর্যয়ে। ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশ দিনশেষে তুলেছে ৪ উইকেটে ৫৬ রান। ২৪ রান করে ক্রিজে আছেন লিটন দাস, সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাট করছেন ৫ রান নিয়ে।
ব্যাটিং বিপর্যয়ের ঘটনা না ঘটলে দিনের সব আলো থাকত আব্দুর রাজ্জাকের উপরই। চার বছর পর টেস্ট দলে ফিরে এই বাঁহাতি স্পিনার করেছেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ৬৩ রানে চার উইকেট নিয়ে তিনিই লঙ্কান ইনিংসের মূল হন্তারক। ৮৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সঙ্গ দিয়েছেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামও।
শেষ সেশনে ব্যাট হাতে পেয়েই বেকায়দায় পড়ে বাংলাদেশ। তৃতীয় বলেই ফিরে যান তামিম ইকবাল। স্পিনারদের পিচে শাই শাই করে বল ভেতরে ঢুকিয়েছেন সুরাঙ্গা লাকমাল। তার প্রথম শিকার তামিম। নিজের বলেই তামিমের দেওয়া ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। পরে মুশফিকুর রহিমকে আউট করেছেন পরিকল্পনা করে। বল ভেতরে ঢুকিয়ে বারবার সমস্যায় ফেলছিলেন মুশফিককে। ইনসুয়িঙ্গার ছেড়ে দেওয়ার মোশনে নিয়ে ফল পান লাকমাল। তার বলে ছেড়ে দিয়ে বোল্ড ১ রান করা মুশফিক। মাঝে মুমিনুল হক তার মহামূল্যবাদ উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এসেছেন হেলায়। রান নিতে গিয়ে আলসে ভঙ্গিতে ক্রিজে ঢুকতে গিয়ে কোন রান করার আগেই রান আউট মুমিনুল।
তার বলে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দেন দানুশকা গুনাথিলেকা। পরের বলেই দারুণ এক ডেলিভারিতে দিনেশ চান্দিমালকে বোল্ড করে দেন রাজ্জাক। ৯৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে লাঞ্চে যাওয়া লঙ্কানদের অস্বস্তি বেড়েছে লাঞ্চের পরই। এক পাশে উইকেট পড়লেও স্বচ্ছন্দে খেলছিলেন ওপেনার কুশল মেন্ডিস। ৬৮ রানে তাকে ফিরিয়ে চার নম্বর উইকেট তুলেন রাজ্জাক। অফ স্টাম্পে পিচ করা বল একটু টার্ন করে স্টাম্প ঘেঁষে ফিরিয়ে দেয় মেন্ডিসকে।
ওই পাশ মার খেলেও উইকেট তুলতে ভুল করেননি তাইজুল ইসলামও। ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে দিয়ে শুরু। পরে নিয়েছেন রোশান সিলভা, দিলরুয়ান পেরেরা ও নিরোশান ডিকভেলার উইকেট।
পিচের ভাষা জানা ছিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। এই পিচে যত দ্রুত রান তোলা যায় ততই সুবিধের। লঙ্কানদের শুরুটাও হয়েছে আগ্রাসী। উইকেট পড়লেও বাউন্ডারি বের করে রানের চাকা সচল রেখেছে তারা।
স্পিনারদের নিয়ে কাটার নিয়ে হাজির ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। তার বলে হাঁসফাঁস করেছেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। স্লিপে ক্যাচ ফেলেছেন সাব্বির রহমান। তবু ১১ ওভার বল করে মাত্র ১৭ রান দিয়ে ২ উইকেট ঠিকই পকেটে পুরে নিয়েছেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৬৫.৩ ওভারে ২২২ (মেন্ডিস ৬৮, করুনারত্নে ৩, ধনঞ্জয়া ১৯, গুনাথিলাকা ১৩, চান্দিমাল ০, রোশেন ৫৬, ডিকভেলা ১, পেরেরা ৩১, দনঞ্জয়া ২০, হেরাথ ২, লাকমল ৪*; মিরাজ ০/৫৪, রাজ্জাক ৪/৬৩, তাইজুল ৪/৮৩, মুস্তাফিজ ২/১৭)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২২ ওভারে ৫৬/৪ (তামিম ৪, ইমরুল ১৯, মুমিনুল ০, মুশফিক ১, লিটন ২৪*, মিরাজ ৫*; লাকমল ২/১৫, পেরেরা ১/২৫, দনঞ্জয়া ০/৪, হেরাথ ০/১১)।
Comments