মাল্টায় কোম্পানি খুলেছিল ২০ বাংলাদেশি
মাল্টায় অফশোর কোম্পানি খুলেছিল এমন অন্তত ২০ জন বাংলাদেশির নাম এসেছে প্যারাডাইস পেপারসে। “ট্যাক্স হ্যাভেন” হিসেবে পরিচিত ইউরোপের এই দেশটিতে কর না দিয়ে বা খুব অল্প পরিমাণ কর দিয়ে বিনিয়োগের সুযোগ নেন তারা।
প্যারাডাইস পেপারসে ২০ বাংলাদেশির নাম আসার বিষয়টি গত বুধবার প্রকাশ করে আইসিআইজে। তবে তারা ঠিক কি পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে মাল্টা বা অন্য কোথায় পাঠিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। মাল্টায় মূলত জাহাজ ব্যবসা, জ্বালানী ও টেক্সটাইল ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোম্পানির নিবন্ধন নিয়েছেন তারা।
অফশোর ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) এখন এক কোটি ৩৪ লাখ নথি পরীক্ষা করে দেখছেন। বারমুডায় অবস্থিত অ্যাপলবাই নামের এক আইনি সহযোগী সংগঠনের কাছ থেকে নথি ফাঁস হয়ে যাওয়ার এই ঘটনার নাম দেওয়া হয়েছে প্যারাডাইস পেপারস।
প্যারাডাইস পেপারসে যে ২০ জনের নাম এসেছে তার মধ্যে রয়েছেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের। ২০১০ সালের ৪ মে ভেনাস ওভারসিজ হলিডেজ নামের একটি কোম্পানির নিবন্ধন নিয়েছিলেন তিনি।
মুসা বাংলাদেশে ড্যাটকো নামে জনশক্তি রপ্তানির একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান। মন্তব্যের জন্য চেষ্টা করা হলেও দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ড্যাটকোর জেনারেল ম্যানেজার মোশারফ হোসেনকে ফোন করা হলেও সেদিক থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
গত বছর মুসাকে দুর্নীতি ও সম্পদের তথ্য গোপন করার ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।
তালিকায় ইমরান রহমান ও শাহনাজ হুদা রাজ্জাকের নাম এসেছে দুবার করে। স্থানীয় ঠিকানা হিসেবে তারা সাভারে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাকে ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা ২০০১ সালের অক্টোবরে ওশেন আইস ও সাউদার্ন আইস নামের দুটি জাহাজ কোম্পানি খুলেছে। তারা কোম্পানির পরিচালক। এর মধ্যে ইমরান প্রবাসী হিসেবে ভিয়েতনামে বসবাস করছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে চট্টগ্রামের দুই ভাই মোহাম্মদ এ আউয়াল ও মোহাম্মদ এ মালেকের নামে তিনটি কোম্পানির নিবন্ধন নেওয়া হয়। এই কোম্পানিগুলো হল মারজান শিপিং, কোয়ামার শিপিং ও শামস শিপিং। আউয়াল এখন চট্টগ্রামে বেঙ্গল শিপিং নামের একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান। আর তার ভাই মালেক ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এছাড়াও, রাজধানীর ধানমন্ডির কেএইচ আসাদুল ইসলাম ২০১৫ সালের ২০ মার্চ ইন্টারপিড গ্রুপ ও ইন্টারপিড ক্যাপিটাল নামের দুটি কোম্পানির নিবন্ধন নেন। গোপন নথিতে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, গুলশানের ফারহান আকিবুর রহমান ইন্টারপিড গ্রুপের একজন পরিচালক।
তবে আইসিআইজের প্রতিবেদনে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে তা দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা সম্ভব হয়নি।
দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমাদের চলমান তদন্তে আমরা এই নামগুলোকেও যুক্ত করব। তিনি জানান, গোপনীয় নথিতে আগে যেসব বাংলাদেশির নাম এসেছে তাদের ব্যাপারে বিভিন্ন দেশে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলেও তিনি স্বীকার করেন।
আইসিআইজের সর্বশেষ প্রতিবেদনে আর যেসব বাংলাদেশির নাম উঠে এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন ধানমন্ডির জুলফিকার আহমেদ। ১৯৯৯ সালের মে মাসে মাল্টায় তিনি একটি শিপিং কোম্পানির নিবন্ধন নেন। এছড়াও আতিকুজ্জামান নামের একজন ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ইউরোপের দেশটিতে নিউ টেকনোলোজি ইনভেস্টমেন্ট নামের একটি কোম্পানি খোলেন। এই অফশোর ফার্মের তিনি একজন অংশীদার। রাশিয়া ও বাংলাদেশকে তিনি লিংক কান্ট্রি হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তবে তিনি কোম্পানির নিবন্ধনের জন্য রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর একটি ঠিকানা ব্যবহার করেন।
তাইজুল ইসলাম তাজুন নামের আরেকজন বাংলাদেশি নারায়ণগঞ্জের ঠিকানা দিয়ে ২০০৫ সালের জুন মাসে চারটি কোম্পানির নিবন্ধন নেন। ফারুক পালোয়ান ও তুহিন ইসলাম সুমন নামের দুজনকে এই চার কোম্পানির পরিচালক করা হয়।
এ বাদেও বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডকে ব্যবহার করে মাহমুদ হোসেন ও মোহাম্মদ রেজাউল হক অফশোর কোম্পানির নিবন্ধন নেন। তবে নথি থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায় যে তারা ডাবলিনের ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। রিপোর্টে আর যাদের নাম এসেছে তারা হলেন, বারিধারা ডিওএইচএসের আমানুল্লাহ চাগলা, মো. ফজলে এলাহি চৌধুরী ও ইউসুফ খালেক; বনানী ডিওএইচএসের মোহাম্মদ কামাল ভূঁইয়া ও মাহতাবা রহমান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, আইসিআইজের রিপোর্টে যাদের নাম এসেছে তাদের লেনদেন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করবে। তারা বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করেছেন কিনা সেটা ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে দিয়ে তদন্ত করাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে গত নভেম্বরে প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে বিএনপির নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম আসে। তিনি ১৯৯৯ সালের ৯ আগস্ট বারমুডায় এনএফএম এনার্জি লি. নামের একটি কোম্পানির নিবন্ধন নেন।
দুদক এসব ব্যাপারে তদন্ত করলে এখন পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
Comments