শ্রী-হীন হয়ে শোকস্তব্ধ টালিগঞ্জের চলচ্চিত্র পাড়া

শোকস্তব্ধ কলকাতার টালিগঞ্জের চলচ্চিত্রপাড়া। রবিবার এমনিতেই সেখানে তেমন কোনও শুটিং হয়না। তবুও অতিরিক্ত চাপে যে কয়েকটি শুটিং চলছিল; শোকের কারণে সবকটি শুটিং বন্ধ হয়ে যায়।
Sridevi Kapoor
বলিউডের প্রয়াত অভিনেত্রী শ্রীদেবী। ছবি: সংগৃহীত

শোকস্তব্ধ কলকাতার টালিগঞ্জের চলচ্চিত্রপাড়া। রবিবার এমনিতেই সেখানে তেমন কোনও শুটিং হয়না। তবুও অতিরিক্ত চাপে যে কয়েকটি শুটিং চলছিল; শোকের কারণে সবকটি শুটিং বন্ধ হয়ে যায়।

বাংলা চলচ্চিত্রের সুপারস্টার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, জিৎ, অঙ্কুশ, দেব কিংবা সুপারহিরোইন ঋতুপর্ণা সেন ছাড়াও অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরী, শ্রীলেখা, স্বস্তিকা, শ্রাবন্তী, শুভশ্রী, পায়েল, মিমি সবাই মর্মাহত, শোকে-বিয়োগে মুহ্যমান।

চলচ্চিত্র নির্মাতা, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল, শ্রীজিত মুখোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী- যে যার মতো করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের অফিসিয়াল পেজে শোক জানিয়েছেন।

শুধু চলচ্চিত্র অঙ্গনই নয়, লেখার জগত থেকে রাজনীতিক; সবার চোখেই যেন শ্রীদেবী সত্যিই একজন স্বপ্নের দেবীর জায়গায় রয়েছেন।

আশি-নব্বই দশকে সুপার-ডুপার-হিট অভিনেত্রী এই প্রজন্মের কাছেও যে কতটা জনপ্রিয় সেটা রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শ্রী-ঝড় দেখেই অনুমান করা যাচ্ছে।

অভিনেতা প্রসেনজিৎ টুইটে লিখেছেন, আমার কোনও ভাষা নেই, বাক রুদ্ধ। হঠাৎ ঝড়ে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সুন্দরী ও মেধাবী অভিনেত্রীর মৃত্যু হলো।

ঋতুপর্ণা সেন মনে করেন ভারতের সেরা সুন্দরী অভিনেত্রী ছিলেন শ্রীদেবী। তার এমন করে অসময়ে চলে যাওয়া শুধু ভারতীয় সিনেমায় নয় অভিনয় শিল্পের বড় ক্ষতি হলো।

গার্গী রায়চৌধুরী বলছেন, শ্রীদেবী নেই, এ নিয়ে আলোচনা নয়, বরং শ্রীদেবী কীভাবে আমাদের মধ্যে রয়ে গেলেন, সে কথাই আজ বলা হোক। শ্রীদেবীর চোখে এক অদ্ভুত চমক ছিল। শুনেছিলাম কোনও শট দেওয়ার আগে নাকি তিনি চোখ বন্ধ করে থাকতেন। শট শুরু হলেই চোখ খুলতেন। আর তখনই এক অসম্ভব চমক ঔজ্জ্বল্য ছিটকে বের হয়ে আসত তাঁর চোখ থেকে।

শ্রীলেখা মিত্রের ভাষায়, “দারুণ একজন অভিনেত্রী ছিলেন। আসলে ছিলেন বলতে ইচ্ছা করছে না। খুব ভালোবাসি তাঁ+কে। আমি বিশ্বাসই করবো না কোনও দিন শ্রীদেবী নেই। মানবই না শ্রীদেবী প্রয়াত। আমাদের কাছে উনি যেমনটি ছিলেন, তেমনই থাকবেন।”

পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, “একজন বড় মাপের তারকা হওয়ার পাশাপাশি তিনি অত্যন্ত দক্ষ অভিনেত্রী। আর সেটাই ছিল তাঁর হাতিয়ার। মর্মান্তিক, অপ্রত্যাশিত একটা ঘটনা ঘটে গেল। তাঁর প্রয়াণে সিনেমা জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।”

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী হালদারের কথায়, “মুম্বাইয়ে অনেকবারই তাঁকে সামনে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। অত্যন্ত সাদা-মাটাভাবেই থাকতেন। সহজ-সরল মনের একজন মানুষ ছিলেন। অথচ কত বড়মাপের অভিনেত্রী তিনি। তাঁর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।”

চলচ্চিত্র নির্মাতা অরিন্দম শীল বলেন, “ভাবাতেই পারছি না শ্রীদেবী চলে গেলেন। মানা যায় না এই ক্ষতি। তাঁর সঙ্গে আমার স্মৃতিগুলো উসকে উঠছে। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।”

অভিনেতা জিৎ মনে করেন, এই ধরনের অভিনেত্রী ভারতে আর দ্বিতীয়টি নেই। ছোট বয়স থেকেই শ্রীদেবীর ভক্ত ছিলেন তিনি সে কথাও জানান জিৎ।

শোক প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার ও জনপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। টুইটে তিনি লিখেছেন “কয়েক মাস আগেই আমার শো-এ দেখা হয়েছিল। আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না। শ্রীদেবীজির খবরটা শুনে শকড।”

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ৩০ জুন কলকাতায় এসেছিলেন শ্রীদেবী। ‘মম’- চলচ্চিত্রের প্রচারের ফাঁকে জনপ্রিয় ‘দাদাগিরি’র সেটেও হাজির হয়েছিলেন স্বামী বনি কাপুরকে নিয়ে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে সেটাই শেষ দেখা হয়েছিল। শনিবার মাঝ রাতে (২৪ ফেব্রুয়ারি) শ্রীদেবী প্রয়াণে স্বাভাবিকভাবেই শোকাহত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও।

 

Comments