ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের উত্থান দেখছে ভারত

যোগী আদিত্যনাথ নির্বাচনে জয়ের পর মুসলমান নামের মত শোনায় উত্তর প্রদেশের এমন সব জায়গার নাম পাল্টে দিয়েছেন। গো সংরক্ষণের নামে ব্যাপক সহিংসতা সৃষ্টি করেছে। একই অবস্থা পূর্ব ভারতের রাজ্য আসামেও।
যোগী আদিত্যনাথ
নির্বচনে জয়ের পর অযোধ্যায় কথিত রাম মন্দিরে পুজা করতে যান যোগী আদিত্যনাথ

ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার মাধ্যমে নতুন করে হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তীব্রতা লাভ করেছে। উত্তর ভারতের প্রায় সবকটি রাজ্য এখন বিজেপির দখলে। পূর্ব ভারতের আসামেও বিজেপি ক্ষমতায়। উত্তর প্রদেশে মায়াবতী ও মুলায়েম সিং যাদবের দল ক্ষমতায় থাকার সময় এত ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে যে বিজেপির পক্ষে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়া সহজ হয়। কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী গেরুয়া পোশাকধারী যোগী আদিত্যনাথ এখন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী।

যোগী আদিত্যনাথ নির্বাচনে জয়ের পর মুসলমান নামের মত শোনায় উত্তর প্রদেশের এমন সব জায়গার নাম পাল্টে দিয়েছেন। গো সংরক্ষণের নামে ব্যাপক সহিংসতা সৃষ্টি করেছে। একই অবস্থা পূর্ব ভারতের রাজ্য আসামেও। ১৯৪৭ সালের আগে থেকে সেখানে বসবাসরত বাঙালি মুসলমানদের একটি বড় অংশকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসাবে চিহ্নিত করে জনপঞ্জি থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আগামীতে তাদের অবস্থাও হয়ত রাখাইনের রোহিঙ্গাদের মত হবে।

এমনকি পশ্চিম বাংলা ও দক্ষিণ ভারতের তামিল নাড়ুতেও এখন গেরুয়া শিবিরের হুঙ্কার শোনা যাচ্ছে। জয়ললিতার মৃত্যুর পর আভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিভক্ত দল থেকে নেতা-কর্মী ভিড়িয়ে বিজেপি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলেছে। মমতা ব্যানার্জি তার দীর্ঘকালের সাথী ও দলের সহ সভাপতি মুকুল রায়কে হারিয়ে ফলেছেন। এককালে কংগ্রেসের ও দীর্ঘ ৩৩ বছরের বাম শাসনের রাজ্য পশ্চিম বাংলায় এখন মমতার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হয়েছে বিজেপি। যদিও মমতার বাড়তি সুবিধা পশ্চিম বাংলার ২৭ শতাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠী। মমতার প্রধান ভরসাও এই জনগোষ্ঠীটি।

প্রতিবেশীদের মধ্য শুধুমাত্র বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভুটানের সাথে ভারতের সম্পর্ক ভালো অবস্থায় রয়েছে। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও নেপালের সাথে দেশটির সম্পর্ক এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এখন ভেবে দেখতে হবে ভারতে বিজেপির এই ধর্মীয় জাতীয়তাবাদীদের উত্থান আমাদের উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে।

১৯৪০ সালে মুসলিম লিগের “পাকিস্তান প্রস্তাব” অবিভক্ত ভারতের প্রথম ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের প্রকাশ্য উপস্থিতি। ১৯৪০ সালের আগে ব্রিটিশরা তাদের শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য শুরু থেকেই এই দুই ধর্মের মানুষকে বিভক্ত করেছে। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠী ছিল মুসলমানরা।

১৯৪৫ সালের কেবিনেট প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে মুসলিম লিগ ও কংগ্রেস ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের রোগে আক্রান্ত হয়ে ভারতকে বিভক্ত রাষ্ট্রে পরিণত করে। ব্রিটিশরা পরিকল্পিতভাবে কাশ্মির সমস্যা তৈরি করে গেছে। ১৯৪৭ সালে অবিভক্ত ভারতের মোট জন সংখ্যা ছিল ৩৯ কোটি, সেই ভারতেই তিনটি দেশের মোট জনসংখ্যা এখন ১৬২ থেকে ১৬৫ কোটি। তিনটি দেশেই এই ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের জয়-জয়কার। পরিণতিতে সেই ১৯৪৬ সালের সর্ব ভারতীয় ধর্মীয় দাঙ্গা ১৯৪৮-১৯৬৫ -১৯৭১ সালের যুদ্ধ, পাকিস্তানি সন্ত্রাসীদের ভারতীয় পার্লামেন্ট আক্রমণ, মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলা লাখো মানুষের জীবন ছিনিয়ে নিয়েছে।

কবে আমরা মুক্তি পাব এই ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের সন্ত্রাসের হাত থেকে? হয়ত ভারতের এই তিনটি দেশে ফরাসী বিপ্লবের মত বিপ্লব লাগবে।

Comments

The Daily Star  | English

Police 'foil' Mayer Dak’s programme marking Human Rights Day

A programme of Mayer Dak, a platform for family members of the victims of enforced disappearance, was foiled in the face of police resistance today

40m ago