পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়, ফুলেল আবহে শ্রীদেবীর শেষকৃত্য সম্পন্ন
গান স্যালুটের মধ্যদিয়ে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বলিউডের নারী সুপারস্টার শ্রীদেবীকে বিদায় জানাল ভারত। আজ (২৮ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে চারটায় মুম্বাইয়ের ভিলে পার্ল সেবা সমাবেশের মহাশ্মশানে শ্রীদেবীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে মুম্বাই পুলিশের একটি চৌকশ দল প্রয়াতের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান জানাতে গান স্যালুট দিয়ে মরদেহে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে দেয়।
এদিন সকালে মুম্বাইয়ের অনিল কাপুরের বাড়ি ’গ্রিন একার’ ও বনি কাপুরের বাড়ি ‘ভাগ্য বাংলো’ হয়ে রিক্রিয়েশন স্পোর্টিং ক্লাবে রাখা হয়েছিল অভিনেত্রীর দেহ। সেখানেই ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ কলাকুশলীরা শ্রীদেবীকে শ্রদ্ধা জানান।
যারা সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জয়া বচ্চন, করণ জোহর, জয়া প্রদা, জিতেন্দ্র, সুভাষ ঘাই, হেমা মালিনী, সুস্মিতা সেন, ঐশ্বরিয়া রাই, অজয় দেবগণ, কাজল, মাধুরী দীক্ষিত, সোহা আলি খান, সনম কাপুর, রণবীর সিং, দীপিকা পাড়ুকোন প্রমুখ।
এছাড়াও সেখানে কানাড়া, তামিলনাড়ু ও মালায়ালম চলচ্চিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ কলাকুশলীরাও শ্রীদেবীকে শ্রদ্ধা জানান।
বুধবার সকাল নটা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অভিনেত্রীর মরদেহ ভক্তদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয় সেলিব্রেশন স্পোর্টস ক্লাবে। সেখান থেকেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় পবন হংসে। এরপরই সাদা ফুল দিয়ে সাজানো মৃতদেহবাহী শকটে করে নিয়ে যাওয়া হয় ভিলে পার্ল মহাশশ্মানে। স্বামী বনি কাপুর, দুই মেয়ে জাহ্নবী, খুশি, বনি কাপুরের আগের স্ত্রীর ছেলে অভিনেতা অর্জন কাপুর, বনি কাপুরের ভাই অনিল কাপুর, সঞ্জয় কাপুরসহ পরিবারের সদস্যরা ওই শকটে ছিলেন।
রিক্রিয়েশন স্পোটিং ক্লাব থেকে মহাশশ্মান পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার রাস্তার দু-ধারে হাজার হাজার ভক্ত-অনুগামীরা শেষবারের মতো শ্রীদেবীকে দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, গতকাল স্থানীয় সময় রাত দশটায় মুম্বাই বিমানবন্দরে অনিল আম্বানীর বিশেষ জেট বিমানে করে দুবাই থেকে শ্রীদেবীর মরদেহ নিয়ে আসা হয়।
বিমানবন্দর থেকে অনিল কাপুরের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় দেহ। রাতে সেখানেই ছিলেন প্রয়াত অভিনেত্রী। কাপুর পরিবারের সদস্যরা ছাড়া সে রাতে আর কারো সেখানে যাওয়ার সুযোগ ছিল না।
এদিকে গত রাতেই শ্রীদেবীর বহু ভক্ত দূর-দূরান্ত থেকে পৌঁছে গিয়েছিলেন মুম্বাই শহরে। শ্রীদেবীর নিজের গ্রাম তামিলনাড়ুর শিবকাশী থেকে প্রায় সাড়ে সাত হাজার ভক্ত-অনুরাগী ইস্ট আন্ধেরির শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।
১৯৬৩ সালে ১৩ আগস্ট এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের জন্মগ্রহণ করেছিলেন শ্রী আম্মা ইয়াঙ্গার আয়াপ্পান। তিনিই পরবর্তীতে শ্রীদেবী নামে সুপরিচিত হয়ে উঠেন। মাত্র চার বছরে বয়সে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেছিলেন তিনি। এরপর একে একে তামিল, মালায়ালম, কানাড়া ও হিন্দি- এই চারটি ভাষায় প্রায় তিনশো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন শ্রীদেবী।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে এক অভিজাত হোটেলের বাথরুম থেকে শ্রীদেবীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পারিবারিক একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্বামী-কন্যাসহ ১৮ ফেব্রুয়ারি দুবাই গিয়েছিলেন শ্রীদেবী। বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল ২০ ফেব্রুয়ারি।
মৃত্যুর পর শ্রীদেবীর ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে ভারতীয় ও দুবাইয়ের গণমাধ্যমে পরস্পর বিরোধী সংবাদের কারণে মহানায়িকার মৃত্যু ঘিরে রহস্য ঘনীভূত হয়। যদিও সব রহস্য ভেদ করে দুবাই পুলিশ সবুজ সংকেত দেওয়ায় ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে নিজ দেশে ফিরে আসে অভিনেত্রীর দেহ।
জীবদ্দশায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকে নানা সময়ে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিলেন প্রয়াত এই অভিনেত্রী। মৃত্যুর পরও তাঁকে ঘিরে সেই আলোচনা-সমালোচনাই রয়ে গেলো।
Comments