মুশফিক, লিটন, তামিমের বীরত্বে রেকর্ড গড়ে জিতল বাংলাদেশ

ওপেনিংয়ে ঝড় তুলে সুরটা বেধে দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। মিডল অর্ডারে তাণ্ডব চালিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। খেলেছেন ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। শেষ দিকে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ কাছ থেকে এসেছেও যোগ্য সঙ্গত। শ্রীলঙ্কার দেওয়া প্রায় অবিশ্বাস্য এক লক্ষ্য তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ।
Mushfiqur Rahim
ম্যাচ সেরা মুশফিককে ঘিরে বাংলাদেশের উল্লাস। ছবি: এএফপি

ওপেনিংয়ে ঝড় তুলে সুরটা বেধে দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। মিডল অর্ডারে তাণ্ডব চালিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। খেলেছেন ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। শেষ দিকে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ কাছ থেকে এসেছেও যোগ্য সঙ্গত। শ্রীলঙ্কার দেওয়া প্রায় অবিশ্বাস্য এক লক্ষ্য তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ।

টি-টোয়েন্টিতে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের মাঠে এত রান তাড়া করে কোন দল আগে জিততে পারেনি। দুশো রানের উপর তাড়া করা তো দূরে থাক। আগে ব্যাট করেও কখনো দুশো করতে পারেননি বাংলাদেশ। শনিবার রাতে ২১৫ রান তাড়ায় এক ফুঁৎকারে সব দুঃসময় যেন উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ। ২ বল বাকি থাকতে থিসিরা পেরেরার বলকে লক্ষ্যে পৌঁছে মাঝ মাঠে গর্জন করলেন মুশফিক, দিলেন নাগিন নাচ। যেন জবাব দিতে চাইলেন অনেক কিছুর। বাংলাদেশকে জিতিয়ে ৩৫ বলে ৭২ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে রান তাড়ায় এটি চতুর্থ সর্বোচ্চ জয়। এই নিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই ফরম্যাটে তৃতীয় জয় পেল টাইগাররা।

মাথার সামনে পাহাড় ডিঙানোর চ্যালেঞ্জ। ঘরে-বাইরে নানা কারণেই চাপে দল। গুমোট হয়ে পড়া দেশের ক্রিকেটে দরকার ছিল একটু খানি হিমেল হাওয়া। একদম সময়মত ঠিক সেটাই করলেন লিটন দাস আর তামিম ইকবাল। বিশেষ করে লিটনের ব্যাটিং যেন ছিল হাঁসফাঁস করতে থাকা বাংলাদেশের জন্য কাঙ্খিত অক্সিজেন।

লিটন করলেন ১৯ বলে ৪৩। ২ চারের সাথে ৫ ছক্কা। সেই ছক্কাগুলোতে কেবল সাহস আর দাপটই নয়, থাকল চোখ লেগে থাকার মতো শৈল্পিকতা। এক প্রান্তে যখন তাণ্ডব তুলেছেন লিটন, আগ্রাসী শুরুর পর তখন তামিম যেন দর্শক। লিটনের কাছে কাগজ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল হাত খুলে পেটানোর, ফিরলেনও ভেতরে ঢুকা বলে মারতে গিয়ে। লিটন ফেরার অর আড়ালে থেকে ফের উঠে তামিম হাঁকিয়েছেন আরও বাউন্ডারি। তবে থেমেছেন ফিফটির আগেই। যদিও তার ২৯ বলে ৪৭ ইনিংসে ম্যাচে পোক্ত হয় বাংলাদেশের অবস্থান।

Liton Das
১৯ বলে ৪৩ রানের ঝড় তুলে সুরটা বেধে দেন লিটন দাস। ছবি: এএফপি
শক্ত ভিত পেয়ে যেমনটি দরকার ঠিক তেমনটিই করেছেন মুশফিক। বাকি সব কাজ সেরেছেন প্রায় একাই। তৃতীয় উইকেটে সৌম্য সরকারের সঙ্গে পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটি গড়েছিলেন, তবে জুটিতে অনেকটা নিরব দর্শক সৌম্য। শুরুতে আড়ষ্ট থাকা সৌম্যও পরে হাত খুলতে শুরু করেছেন। থেমেছেন ২২ বলে ২৪ করে। তবে মুশফিককে আর থামানো যায়নি। ৫ চারের সঙ্গে মেরেছেন ৪ ছক্কা। বের করেছেন সিঙ্গেলস। প্লেসিং শটে ছড়িয়েছেন মুগ্ধতা।

১১ বলে ২০ করে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও রেখেছেন অবদান। তবে সবাইকে ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত নায়ক মুশফিক। এই জয়ে ত্রিদেশীয় নিদহাস কাপের লড়াই জমিয়ে তুলেছে বাংলাদেশ। অংশ নেওয়া তিন দলই দুই ম্যাচ শেষে আছে একটা করে জয় নিয়ে।  

এর আগে কুশল মেন্ডিস আর কুশল পেরেরার তান্ডবে ৬ উইকেটে ২১৪ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা।

কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বৃষ্টির কারণ ১৫ মিনিট দেরিতে শুরু ম্যাচে পরে হয়েছে চার-ছক্কার বৃষ্টি। ২ চার আর ৫ ছক্কায় ওপেনার কুশল মেন্ডিস ৩০ বলে ৫৬ রানের ইনিংস খেলার পর ওয়ানডাউনে নেমে কুশল পেরেরা শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে করেন সর্বোচ্চ ৪৮ বলে ৭৪ রান । এই নিয়ে টানা দুই ম্যাচে ফিফটি পেলেন তিনি।

লঙ্কানদের উড়ন্ত সূচনা হয় দুই ওপেনার দানুশকা গুনাথিলেকা আর কুশল মেন্ডিসের ঝড়ে। তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমানদের পিটিয়ে চার ওভারের আগেই বোর্ডে ৫০ তুলে ফেলে শ্রীলঙ্কা। মোস্তাফিজ দারুণ কাটারে গুনাথিলাকার ঝড় থামালেও দুই কুশল মিলে পরের কয়েক ওভার দিশেহারা হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। সবচেয়ে বেশি পিটুনির শিকার হন তাসকিন। তার করা প্রথম দুই ওভার থেকেই আসে ৩৩ রান।



বারবার বোলিং বদল করেও কাজ না হওয়ায় নিজেই বল হাতে নিয়ে ফিফটি করা কুশল মেন্ডিসকে ফেরান মাহমুদউল্লাহ। একই ওভারে দাসুন শঙ্কাকেও আউট করেন তিনি। পরের ওভারে তাসকিনের বলে ফেরেন দিনেশ চান্দিমাল। ১০ বলের মধ্যে ৩ উইকেট, ৩টি ক্যাচই জমা সাব্বির রহমানের হাতে। এলোমেলো বাংলাদেশের তখন ম্যাচে ফেরার আভাস। তবে সেই চাপ রুবেলের এক ওভার ১৭ রান নিয়ে সরিয়েছেন উপুল থারাঙ্গা।

থারাঙ্গাকে নিয়ে বাকিটা সেরেছেন কুশল পেরেরা। ইনিংসের ৪ বল আগে যখন আউট হচ্ছেন ততক্ষণে দুশো ছাড়িয়ে গেছে তার দল। তবে দিনশেষে উড়ন্ত শ্রীলঙ্কাকে মাটিতে নামিয়ে আনতে পেরেছে বাংলাদেশ। পেয়েছে স্বস্তির জয়। জমে উঠেছে নিদহাস কাপও। 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

7h ago