আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে বাড়ছে অর্থ পাচার
দ্রুত বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধির সাথে এর আড়ালে অর্থ পাচার ব্যাংকিং খাতের জন্য এখন একটি মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় অর্থ পাচারের এই চিত্র উঠে এসেছে।
ব্যাংকগুলোর বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নামে যে কৌশলে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হচ্ছের তার মধ্যে রয়েছে পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বা কম দাম দেখানো, ঘোষণার অতিরিক্ত আমদানি ও চোরাচালান। আমদানি ও রপ্তানিকারকদের যোগসাজশে ব্যাংক কর্মকর্তাদেরকেও বাধ্য হয়ে এধরনের অবৈধ লেনদেনে যুক্ত হচ্ছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নামে অর্থ পাচার সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বিআইবিএম এর অধ্যাপক হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, পণ্যের সঠিক মূল্য যাচাই করার প্রক্রিয়ায় গাফিলতিকে কাজে লাগিয়ে অর্থ পাচার চলছে।
গতকাল প্রকাশিত সমীক্ষা প্রতিবেদনটিতে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উদঘাটন করা এরকম জালিয়াতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জানানো হয়, যন্ত্রপাতি আমদানির ঘোষণা দিয়ে কয়েকটি ভুয়া কোম্পানি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১২টি কনটেইনার ছাড়ানো চেষ্টা করছিল। কাস্টমস গোয়েন্দারা অভিযান চালিয়ে ওই কন্টেইনারগুলো থেকে প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা মূল্যের আমদানি নিষিদ্ধ বিপুল পরিমাণ সিগারেট, এলইডি টেলিভিশন, ফটোকপি মেশিন ও গুড়া দুধের সন্ধান পায়।
পরে তদন্ত করে দেখা যায় ভুয়া কাগজপত্র ও ছবি ব্যবহার করে ঋণপত্র (এলসি) খুলে এগুলো আমদানি করা হয়েছিল। ওই একই আমদানিকারক এর আগেও যন্ত্রপাতির নামে ৭৮টি কনটেইনার নিয়ে এসেছিল। এসব পণ্যের মূল্য ১,০৪০ কোটি টাকা হলেও বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আমদানিকারক মাত্র ৩.৪৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছিল।
আরেকটি ঘটনায় দেখা যায় রপ্তানিমুখী একটি প্রতিষ্ঠান কিছু রপ্তানি এলসি’র বিপরীতে পর পর ৪৯টি এলসি খুলেছিল। ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এর সাথে জড়িত ছিল। এখানেও অর্থ পাচার সংক্রান্ত জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।
সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সরকারের কাস্টমস ভ্যালুয়েশন এন্ড ইন্টারনাল অডিট কমিশনারেট-এর কমিশনার মইনুল খান বলেন, ঘোষণার অতিরিক্ত বা কম দাম দেখিয়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে। বাণিজ্যের নামে এই পদ্ধতিতে অর্থ পাচার এখন একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, পণ্যের সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা থাকলেও সর্বোচ্চ সীমা বলে কিছু নেই। ফলাফল হিসেবে জালিয়াতি চক্রগুলো খুব সহজেই দেশ থেকে অর্থ পাচার করতে পারছে। দেশ থেকে মোট পাচার হওয়া অর্থের ৮০ শতাংশই এই পদ্ধতিতে হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন।
শুল্ক বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক যৌথ উদ্যোগে নিরীক্ষা চালিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নামে এভাবে অর্থ পাচার রোধ করতে পারে বলে তিনি যোগ করেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ও বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে অর্থ সংক্রান্ত অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে অর্থ পাচার রোধে ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষিত করতে হবে।
বিআইবিএম এর পরিচালক শাহ মো. আহসান হাবিব সমীক্ষা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।
Comments