৯০০ পরিবারের ফ্ল্যাটের স্বপ্ন এখনো অধরা

ঢাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন এমন প্রায় সবারই স্বপ্ন থাকে এই শহরে নিজের একটি ঠিকানার। এই স্বপ্নেরই নাগাল পেতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্বামী বেতন থেকে ও নিজে টিউশনির আয় থেকে অল্প করে টাকা জমিয়েছিলেন মওদুদা ইয়াসমিন। প্রায় দুই দশক ধরে এভাবেই সঞ্চয়ের পর ভেবেছিলেন স্বপ্নের সেই ঠিকানাটা হয়ত তাঁরা পেতে চলেছেন।

ঢাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন এমন প্রায় সবারই স্বপ্ন থাকে এই শহরে নিজের একটি ঠিকানার। এই স্বপ্নেরই নাগাল পেতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্বামী বেতন থেকে ও নিজে টিউশনির আয় থেকে অল্প করে টাকা জমিয়েছিলেন মওদুদা ইয়াসমিন। প্রায় দুই দশক ধরে এভাবেই সঞ্চয়ের পর ভেবেছিলেন স্বপ্নের সেই ঠিকানাটা হয়ত তাঁরা পেতে চলেছেন।

মোহাম্মদপুরের এফ ব্লকে লটারির মাধ্যমে ২০১০ সালে ৯০০ পরিবারের কাছে ফ্ল্যাট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পনা ছিল এর জন্য ১৫টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এক হাজার বর্গফুটের প্রতিটি ফ্ল্যাটের দাম নির্ধারণ করা হয় ৩৫ লাখ টাকা। লটারিতে এক হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের জন্য নাম ওঠে মওদুদার। দুই ভাগে বিভক্ত স্কিমে মওদুদাকে প্রথমে চার কিস্তিতে ১৮ লাখ টাকা দিতে হয়। বাকি ১৭ লাখ টাকা মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা।

 

ব্যাংকে রাখা স্থায়ী আমানত তুলে ও এক আত্মীয়ের কাছে ঋণ নিয়ে শেষমেশ গত বছর নভেম্বরে ১৮ লাখ টাকা পরিশোধ করেন মওদুদা দম্পতি। তিনি জানান, চুক্তিতে ছিল ১৮ লাখ টাকা পরিশোধের পরই জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ তাদের হাতে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিবে।

কিন্তু এমনটা হয়নি।

গ্রাহকদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ওই ফ্ল্যাটের দাম বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বক্তব্য, ফ্ল্যাটের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। সে কারণেই তাদেরকে দাম বাড়াতে হয়েছে।

এই অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন মওদুদা ইয়াসমিনের মত অন্য সব গ্রাহক। পূর্ব নির্ধারিত ফ্ল্যাটের দাম পরিশোধ করতেই তাদের অনেকেই গ্রামের জায়গা-জমি বিক্রি করতে হয়েছে। এখন একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটে সাবলেট ভাড়া নিয়ে বাড়তি টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মওদুদাকে।

গ্রাহকদের প্রতিবাদ

হঠাৎ করে ফ্ল্যাটের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বরাদ্দ পাওয়া গ্রাহকরা সম্প্রতি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন। এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ কামনা করে তারা প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে চিঠিও দিয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন।

মোহাম্মদপুর ব্লক এফ ফ্ল্যাট মালিক সমিতির আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান সেলিম বলেন, সাত বছর পার হয়েছে তবুও আমাদের কাছে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হয়নি। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে এই ফ্ল্যাটগুলো হস্তান্তর করার কথা থাকলেও এখন ৩৫ লাখ টাকার এক হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের জন্য ৫৯ লাখ টাকা চাওয়া হচ্ছে। বর্গফুট প্রতি সাড়ে তিন হাজার টাকা দাম হিসাবে ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০ লাখ টাকা।

কিন্তু জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ এখন প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম নির্ধারণ করেছে ৪ হাজার ৪০০টাকা। তারা বলছেন, অন্যান্য খরচের পাশাপাশি সিঁড়ি, লিফট ও লবির জন্য বাড়তি খরচ হওয়ার কারণেই ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে। কিন্তু ফ্ল্যাট মালিক সমিতির ওই নেতার বক্তব্য, এসব ‘গোপন খরচ’-এর কথা আগে কোথাও উল্লেখ ছিল না।

তিনি আরও বলেন, গত বছর আমাদের চতুর্থ কিস্তি জমা দিতে বলে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, ১৫টির মধ্যে পাঁচটি ভবনের কাজ শিগগিরই শেষ হবে। ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যেই ফ্ল্যাট হস্তান্তর হবে এমন কথা অনুযায়ী আমরা টাকা জমা দিয়েছিলাম।

এখন তাদের অভিযোগ, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সেই কথা না রেখে এখন ফ্ল্যাটের জন্য বাড়তি দাম চাইছে।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

যোগাযোগ করা হলে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশলী ও সমন্বয়ক) এসএএম ফজলুল কবির বলেন, সরকার নির্ধারিত ফ্ল্যাটের দর অনুযায়ী তারা দাম বাড়িয়েছেন।

তিনি দাবি করেন, ঠিকাদাররা পাইলিং সংক্রান্ত একটি সমস্যার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেননি। এটাকে কেন্দ্র করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ আইনি লড়াই হয়েছে, এতেও প্রকল্পের কাজ পিছিয়েছে। সেই সাথে নতুন নকশা ও নতুন ঠিকাদার নিয়োগ হওয়ায় খরচ বেড়ে গেছে। এর মধ্যে সরকার ফ্ল্যাটের জন্য নতুন দর নির্ধারণ করায় তাদেরকেও দাম বাড়াতে হয়েছে।

ফজলুল কবির আরও বলেন, এবছরের জুনের মধ্যে পাঁচটি ভবনের কাজ শেষ হবে। আর বাকি ভবনগুলোর কাজ শেষ হবে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে। সেই সাথে ফ্ল্যাটের দাম কমানোর জন্য তারা শিগগিরই গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবেন।

Comments