নির্বাচন কমিশনই চায় না জিসিসি নির্বাচন?

Election Commission Logo

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি) নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের হযবরল অবস্থা প্রতিদিন স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ছে।

নির্বাচন স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে প্রথমে আপিল করেছেন বিএনপি প্রার্থী। তারপর আপিল করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। অথচ প্রথম আপিলটি প্রত্যাশিত ছিল নির্বাচন কমিশনের কাছেই। আপিল না করে নির্বাচন কমিশন প্রথমে বলেছে, লিখিত আদেশ পাওয়ার পরে আপিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সমালোচনার মুখে আদালতের লিখিত নির্দেশনা পাওয়ার আগেই তারা আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে তাদের দুই দিন সময় লেগেছে। তৃতীয় দিন এসে তারা আপিল করার জন্যে আদালতের কাছে আরও একদিন সময় চেয়েছে। নতুন করে প্রশ্নটি সামনে এসেছে, ১৫ মে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হোক, এটা আসলে কে চায় না? এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নাম এলে প্রশ্ন উঠবে, কেন নির্বাচন কমিশন চাইবে না? নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে তাদের কী লাভ? গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-যুক্তি। ঘটনার দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক-

ক) বিএনপি-আওয়ামী লীগ দুই মেয়র প্রার্থীর আবেদনের শুনানির দিন ধার্য ছিল আজ ৯ মে। নির্বাচন কমিশন শুনানি যাতে আজকে না হয়, আদালতের কাছে সেই আর্জি জানায়। এবং আদালত নির্বাচন কমিশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে আজকের পরিবর্তে আগামীকাল শুনানির দিন ধার্য করে।

‘আদালতে ইসি’র পক্ষে আইনজীবী ওবায়দুর রহমান মোস্তফা জানান, নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আমরা হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করব। এ দুটি আবেদনের সঙ্গে আমাদের আবেদনটির শুনানি এক সঙ্গে করলে ভালো হয়।

তখন আদালত বলেন, ‘বাকিরা করে ফেলেছে। আপনারা এতো দেরি করলেন কেন?’

জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) নির্বাচন কমিশন থেকে আদেশ পাওয়ার পর আজ আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

উপরের অংশটুকু উদ্ধৃত করছি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) থেকে।

খ) আপিল করবে কি করবে না সেই সিদ্ধান্ত নিতে দুইদিন, আপিল করা হবে- সেই সিদ্ধান্ত নিতে একদিন, সিদ্ধান্তের পর আপিলের প্রস্তুতি নিতে একদিন! মোট চারদিন সময় নিলো নির্বাচন কমিশন। চতুর্থ দিন তারা আপিল করবে। তারা আপিল না করায়, আদালতের আপিলের শুনানিও যাতে আজ না হয় সেই আবেদন করেছে নির্বাচন কমিশন।

গ) আদালত ‘নট টুডে’ লিখে আদেশ দেন (বাসস)।

ঘ) নির্বাচন কমিশন আপিল না করে সময় ক্ষেপণ করেছে। দুই প্রার্থীর আপিল শুনানি পেছানোর আবেদন করেছে। আজ গাজীপুরে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ‘সময়টা ক্রিটিকাল হয়ে গেছে। আমি মনে করি আজও যদি সিদ্ধান্ত আসত তাহলে ১৫ মে ভোটগ্রহণ হতো। কিন্তু আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) শুনানির পরে সিদ্ধান্ত আসলে সেটা আমাদের পক্ষে মনে হয় সম্ভব হবে না। যদি কোর্ট ১৫ মে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত দেন তাহলে সেটা তো যেভাবেই হোক করতেই হবে।’

ঙ) লক্ষণীয় বিষয়, নির্বাচন কমিশন তার আইনজীবীকে দিয়ে আবেদন করিয়ে শুনানির সময় আজ (বুধবার) থেকে একদিন পিছিয়ে (বৃহস্পতিবার) করার আবেদন করলো। আবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছেন, রায় আজ হলে ১৫ মে নির্বাচন করা যেত, আগামীকাল হলে করা যাবে না।

শুনানি একদিন পেছানোর আবেদন করলেন কেন? নির্বাচন না করার জন্যে- এই প্রশ্ন করা কী প্রাসঙ্গিক নয়?

আবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারই বলছেন, আদালত বললে নির্বাচন তো করতেই হবে। একবার বলছেন ‘সম্ভব না’ আবার বলছেন ‘করতেই হবে’। যা সম্ভব না, তা করবেন কীভাবে?

ঠিক আছে আদালতের নির্দেশে নির্বাচন স্থগিত করলেন। তো সব কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দিলেন কেন? ভেতরে ভেতরে একটা প্রস্তুতি তো রাখা যেত। তা না করে চুপচাপ বসে থাকলেন। আপনাদের বিপদে ফেলে দিলেন দুই প্রার্থী, আপিল করে। নিজেরা আপিল করতে দেরি করলেন, মুখ রক্ষার জন্যে এখন আপিল করবেন। অন্যদের আপিলের রায়ও যাতে দেরিতে পাওয়া যায়, সেই আবেদনও আপনারাই করলেন। নির্বাচনই যদি করতে চাইবেন, তাহলে তো এসব করার কথা নয়।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago