প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে সেজে উঠছে আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

আসানসোল রেল স্টেশন থেকে চার কিলোমিটার দূরের কালনা বাইপাসের ধারে অবস্থিত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
Asansol
আসানসোল রেল স্টেশন। ছবি: স্টার

আসানসোল রেল স্টেশন থেকে চার কিলোমিটার দূরের কালনা বাইপাসের ধারে অবস্থিত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

তবে বর্ধমান জেলার ১৫ সরকারি ও চারটি বেসরকারি মিলিয়ে মোট ১৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় ২০১৩ সাল থেকে। সেই হিসাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির এই বছর তৃতীয় সমাবর্তন।

আর তৃতীয় এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাম্মানিক ডিলিট দেওয়া হচ্ছে। তিনি ছাড়াও ডিলিট পাচ্ছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সদস্যা তথা প্রখ্যাত অভিনেতা শর্মীলা ঠাকুর।

এই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টি বিদেশি কোনও রাষ্ট্রপ্রধানকে সাম্মানিক ডিলিট উপাধি দিতে চলেছে। এর আগে এই সম্মাননা পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক ও গবেষক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

Kazi Nazrul Islam University
কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: স্টার

এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি-নির্ধারক কমিটির কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাম্মানিক ডিলিট দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এরপরই বিষয়টি জানানো হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ রাজ্যপাল কেশরী নাথ ত্রিপাঠিকে। তাঁদের সবুজ সংকেত পেয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

শেখ হাসিনা নিজের হাতে এই উপাধি গ্রহণ করবেন সেটি চূড়ান্ত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

গত ৮ মে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশেপাশের এলাকা ঘুরে মনে হয়েছে, শুধু কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নয় বরং গোটা আসানসোল জেলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রায় ১৬ একর জায়গার ওপর নির্মিত ৫১টি অনুষদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ধোয়ামোছার কাজ চলতে দেখা গেল সেদিন। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের মধ্যেও প্রবল আনন্দ-উচ্ছ্বাস বইছে- সেটিও পরিষ্কার হলো তাঁদের সঙ্গে দিনভর কথাবার্তায়।

সেদিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে কথা হয় উপাচার্য সাধন চক্রবর্তীর সঙ্গে। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি জানান, “২০১৫ সালে এখানে নজরুল সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ উদ্বোধন করতে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন- নজরুল ইসলামকে ঘিরে যে গবেষণা ও চর্চা হয়েছে, বাংলাদেশই সে বিষয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ নিবিড় করতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।”

VC Dr Sadhan Chakrabarti
কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী। ছবি: স্টার

“মূলত তাঁর অনুপ্রেরণাতেই আমরা নজরুল গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত হয়ে গিয়েছি,” যোগ করেন উপাচার্য।

তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নজরুল ইন্সটিটিউট এবং ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও সম্পর্ক তৈরি করেছি। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের।”

আসানসোলের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুলকে নিয়ে যে উপদেষ্টা কমিটি তৈরি হয়েছে তাতে বাংলাদেশের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম রয়েছেন- এও যোগ করেন সাধন চক্রবর্তী।

এই সাম্মানিক ডিলিট দেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিষয় পর্যবেক্ষণ করেছে, যেভাবে বাংলাদেশে বিদ্রোহী কবি; সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলামের আদর্শ-সৃষ্টি-ভাবনাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেটি আমাদের সকলের সামনেই দৃষ্টান্ত এবং শিক্ষণীয়ও।”

তিনি আরও বলেন, “ধর্মান্ধতাহীন একটি সমাজ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচেছন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেটি আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি। আর সেই কারণেই তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এই বিশ্ববিদ্যালয়। এতে আমরা নিজেরাই গর্বিত।”

সমাবর্তন নিয়ে বলতে গিয়ে উপাচার্য জানালেন, “ওই দিন আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে একসঙ্গে মাধ্যহ্নভোজের আমন্ত্রণও করেছি। বর্ধমান জেলার বিখ্যাত কিছু মিষ্টি- যেমন মিহিদানা, সীতাভোগ খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মধ্যাহ্নভোজের সময় দুই নেত্রীর কথা-বার্তা হওয়ার সুযোগও করে দেওয়া হয়েছে।”

তবে মধ্যাহ্নভোজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নিচ্ছেন না বলেই কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছে। সে সময় রোজা থাকবে। প্রধানমন্ত্রী রোজা রাখেন।

তবে সাম্মানিক উপাধি নেওয়ার পর কিছু সময় আসানসোলের ওই অনুষ্ঠানে থাকবেন শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে এই তথ্যও নিশ্চিত করেছে।

সূত্র বলছে, সে সময় মমতা ব্যানার্জি ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কথা হবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরী নাথ ত্রিপাঠি এবং অভিনেত্রী শর্মীলা ঠাকুরের সঙ্গেও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্টার চৈতালি দত্তও সে সময় ভিসির কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা হয় তাঁরও। তিনি জানান, “বাংলাদেশকে আমরা পাশের বাড়ি বলেই মনে করে। কারণ একই গাছ, একই মাটি, একই সবুজ এবং একই আকাশ আমাদের ঘিরে রেখেছে। বাংলাদেশে যেভাবে বিদ্রোহী কবিকে সম্মান দেওয়া হচ্ছে। তাতে বলতেই হবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের উদ্যোগ ছাড়া সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই সম্মাননা দেওয়ায় আমরা সবাই গর্ববোধ করছি।”

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যয়নরত পড়ুয়ারাও যেন ২৬ মে তারিখটির জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। তবে বর্তমান পড়ুয়াদের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ হবে কিনা সেটি এখনও নিশ্চিত নয়।

কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারি অদৃশ শর্মা বললেন, “প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রী আসছেন, এমন একটি দেশ যেখানে আমাদের কবি কাজী নজরুল ইসলাম সেখানে জাতীয় কবি। বাংলাদেশের সর্বস্তরে বিদ্রোহী কবিকে সম্মান দেওয়া হচ্ছে। আমরা নিজেরাও গর্বিত হতে পারবো যখন সেই দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া ডক্টর অফ লিটারেচার দেওয়া হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রকৃতি ব্যানার্জির সঙ্গে কথা হলে তিনিও বিস্মিত। বলেন, “ভাবতেই ভালো লাগছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছেন। তবে আমাদের ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ হবে কিনা জানিনা। যেতে না পারলে মন খুব খারাপ হবে।”

পত্রিকার খবর দেখে অনেকে আগেই খবরটি জানতে পেরেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার বিভাগের ছাত্রী সহেলি রায় চৌধুরী। দ্য ডেইলি স্টারকে ওই ছাত্রী বলেন, “আমরা সত্যিই খুব ভাগ্যবান এমন একটি সাড়ম্বর সমাবর্তন অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে বলে। যেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, অভিনেত্রী শর্মীলা ঠাকুর এক মঞ্চে বসবেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এটি আমাদের ছাত্রজীবনে একটি বড় ঘটনা হয়ে থাকবে।”

শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাই নন বরং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আশপাশের এলাকার মানুষও সমানভাবেই উচ্ছ্বসিত। কালনা বাইপাস রোডের পাশে খাবারের দোকানের মালিক মহম্মদ বিল্লাল হোসেন জানালেন, তিনি ২৬ মে দোকান বন্ধ রাখবেন। কারণ তাঁর দোকানের সামনের রাস্তা দিয়ে ভিভিআইপি শেখ হাসিনার কনভয় যাবে। তবে তিনি ছাদে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার চেষ্টা করবেন বলেও উল্লেখ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus sits with BNP delegation over reform commissions

BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir is leading the six-member delegation at the State Guest House Jamuna.

1h ago