একটি নির্বাচন, অনেক প্রত্যাশা

জাতীয় নির্বাচন বা একটি স্থানীয় সরকারের নির্বাচন, যাই হোক না কেন- তার মধ্য দিয়ে জনমতেরই প্রতিফলন ঘটে। আর এসব নির্বাচন যেহেতু দলীয় প্রতীকে হয়, ফলে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন বোঝা যায় না, একথা বলা যায় না। একটি নির্বাচন দিয়েও নির্বাচন কমিশনের মনোভাব, দক্ষতা- সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে। সেই নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা, প্রত্যাশা।
১. ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে সকাল ৮ টা থেকে। ভোটারদের লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে। এই চিত্র দিয়ে প্রমাণ হয় যে, ভোটাররা ভোট দিতে চান। ভোটাধিকারের বিষয়ে ভোটাররা যে সচেতন, তা আরও একবার বোঝা যাচ্ছে।
খুলনাবাসীর তো বটেই, সারা দেশের মানুষের প্রত্যাশা একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের দৃঢ়তা এবং সরকারের আন্তরিকতা থাকলে তা সম্ভব।
২. ‘নির্বাচনে ভোটারদের ভোট দিতে হয় না’- এমন একটি ধারণা জনমনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন জনমনে এই এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর থেকে বের হয়ে আসার একমাত্র উপায়, ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করা। ভোটাররা ভোট দেবেন, তার প্রেক্ষিতে ফলাফল নির্ধারিত হবে- তা নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে। এখন সকাল ১০ টা। ভোটের মাঠের চিত্র, আশাবাদী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।
৩. বিএনপি প্রার্থী ইতিমধ্যে অভিযোগ করেছেন, প্রায় ৩০টির মত কেন্দ্র থেকে তার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলেছেন, ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন।
বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ সত্য- অর্ধ সত্য- না অসত্য, তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচন কমিশনের তা নিশ্চিত করা দরকার। বিএনপি প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, রিটার্নিং অফিসার তার ফোন ধরেননি, দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনারদের এখনই সক্রিয় হয়ে, অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। ‘লিখিত অভিযোগ পেলে দেখব’- এ জাতীয় কথা যেন নির্বাচন কমিশন থেকে না আসে। তাহলে অভিযোগ যদি সত্য নাও হয়, যদি আংশিক সত্যও হয়- পুরো সত্য হিসেবে ভিত্তি পেয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়তে পারে। নির্বাচন কমিশনের কাছে সচেতনতা প্রত্যাশিত।
৪. যে সমস্ত কেন্দ্র সম্পর্কে বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ, গণমাধ্যম যদি সে সব কেন্দ্রের প্রকৃত চিত্র দেখাতে- জানাতে পারেন, সেটা নির্বাচন কমিশনের কাজের জন্যে সহায়ক হতে পারে। দেশের জনগণও প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন। অভিযোগ যদি অসত্য হয়, তা ভিত্তি পাবে না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশিত নির্বাচন কমিশনের গতিশীলতা।
৫. খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ৪ লাখ ৯৩ হাজার, মোট কেন্দ্র ২৮৯ টি। এরমধ্যে ২৩৪ টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। বিএনপি প্রার্থী কিছু অভিযোগ করলেও, এখন পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য জানা যায়নি, যার মধ্য দিয়ে নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হচ্ছে বলে মনে হয়। শঙ্কা যে নেই, তা নয়। আগামী চার পাঁচ ঘণ্টা সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখনই সংবাদ জানা যাচ্ছে এক-দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও, ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে পারছেন না। এখন পর্যন্ত ভোট গ্রহণের গতি বেশ ধীর বলে মনে হচ্ছে।
আগামী কয়েক ঘণ্টায় ভোটারের সংখ্যা বাড়বে। সন্ত্রাস- সংঘর্ষ না হলে পরিস্থিতি যদি শান্তিপূর্ণ থাকে, রেকর্ড সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে পারবেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ভোট গ্রহণের গতি বৃদ্ধি বা স্বাভাবিক রাখাটা খুব জরুরি। ভোট গ্রহণের গতি ধীর হলে, লাইনে দাঁড়ানো ভোটাররা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। নানা বিভ্রান্তি ছড়ায়, অনুকূল পরিবেশও প্রতিকূলে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নির্বাচন কমিশনারদের বিচক্ষণতা এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
৬. সকল শঙ্কা- প্রতিকূলতাকে অসত্য প্রমাণ করে, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য হোক। ভোটাররা ভোট প্রয়োগের ক্ষমতা ফিরে পাক। প্রতিষ্ঠিত হোক নির্বাচন কমিশন যোগ্য- দক্ষ- সাহসী। জয়- পরাজয়ের ঊর্ধ্বে উঠে, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতার প্রমাণ হোক।
Comments