গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গ মমতার, দ্বিতীয় অবস্থানে বিজেপি
পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম-বাংলা ‘মমতাময়’ হয়ে উঠল। পঞ্চায়েত ভোটের তিনস্তরের নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে অর্থাৎ প্রায় আশি শতাংশ আসনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা। সকাল আজ (১৭ মে) আটটা থেকে ব্যালট-বাক্স খুলে গণনা শুরু করেন গণনা-কর্মীরা। তাঁদের গণনা শেষে মেলে এই ফল।
সন্ধ্যা পর্যন্ত যা খবর, তাতে দক্ষিণ ২৪ পরগণায় গ্রাম পঞ্চায়েতে ৯০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। এরপরই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগণা জেলা। এখানে ৮১টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন পেয়েছে তৃণমূল। নদীয়া এবং দক্ষিণ দিনাজপুরেও তৃণমূল এখন পর্যন্ত যথাক্রমে ৭০ এবং ৭৩টি আসন পেয়ে জয়ের পথে এগোচ্ছে।
কোচবিহারে ৬১টি আসন পেয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে ব্যাপক দূরত্ব বজায় রেখেছে তৃণমূল। তবে গণনা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে সেখানে স্থানীয় সাংবাদিকরা অবস্থান ধর্মঘটে বসেন।
এদিকে, বীরভূমে গণনার কিছুক্ষণের মধ্যে তৃণমূল ২১টি আসনে এগিয়ে রয়েছে বলে জানা যায়। এর পাশাপাশি, পূর্ব–পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, মালদা, মুর্শিদাবাদ, আলিপুরদুয়ার, বীরভূম, হাওড়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামসহ সব জেলাতেই গণনার কিছুক্ষণ পরই বোঝা যায় যে তৃণমূলই জয়ী হচ্ছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে।
তৃণমূলের তুলনায় ভোটের ব্যবধান অনেক বেশি হলেও রাজ্যজুড়ে জয়ীর তালিকায় বিজেপির অবস্থান দ্বিতীয়। দলটি রাজ্যের পুড্ডি, সারেঙ্গা বিক্রমপুর, সিমলাপাল বিক্রমপুর, কেঞ্জাকুড়া, মানকালী গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে। বর্ধমানের ভাতার গ্রাম পঞ্চায়েতের ২১টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছে ১৩টি। বিজেপি ও সিপিএম প্রত্যেকে জিতেছে ৩টি করে আসন। সেখানে নির্দলের ঝুলিতেও গিয়েছে ২টি আসন। বলগোনা গ্রাম পঞ্চায়েত ১৭টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী ১৪টি আসনে, ৩টি আসনে জয়ী নির্দল। তবে পূর্ব-বর্ধমানের ভাতারে নিত্যানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৮টি আসনের ১৮টিতেই জয়লাভ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
পাশাপাশি, বড়বেলুন ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছে ৮টি আসনে। নির্দল প্রার্থী জিতেছেন একটিতে। বড়বেলুন ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০টি আসনের মধ্যে ৯টিতে জয়ী তৃণমূল। একটি আসনে জয়ী সিপিএম।
হলদিয়া ব্লকের দেউলপোতা গ্রাম-পঞ্চায়েতের ২ নং বুথে জয়ী নির্দল প্রার্থী বাতাসী রাউত।
রাজ্যে মোট গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা ৩,৩৫৮। গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন সংখ্যা ৪৮ হাজার ৬৫০। এর মধ্যে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না ১৬ হাজার ৮১৪টি আসনে। ফলে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩১ হাজার ৮৩৬টি আসনে নির্বাচন হয়েছে। রাজ্যে পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে ৩৪১টি। পঞ্চায়েত সমিতির আসন সংখ্যা ৯,২১৭। এর মধ্যে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না ৩,০৫৯টি আসনে। ফলে নির্বাচন হয়েছে ৬ হাজার ১৫৮টি আসনে। আর ২০টি জেলা পরিষদের মোট আসন ৮২৫টি। এগুলোর মধ্যে ২০৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। ফলে ৬২২টি আসনে নির্বাচন হয়েছে।
গত ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গে স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন সহিংসতায় প্রাণ হারান ১৯জন।
বিজয়ী তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকরা ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই বাজি পুড়িয়ে, আবির খেলে উল্লাস প্রকাশ করছেন।
Comments