ব্রাজিল,আর্জেন্টিনার পতাকা বানাতে বানাতে ‘ঘুম হারাম’ তাদের

দরজায় কড়া নাড়ছে ফুটবল বিশ্বকাপ। এর জেরে গরম হচ্ছে বাংলাদেশের হাওয়া। চায়ের কাপে ঝড়। অলিগলি রেস্তোরায় জম্পেশ আড্ডা রূপ নিচ্ছে আগ্রাসী তর্কাতর্কিতে। মূলত দুই পক্ষই জোরালো, ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা। সঙ্গে ছিটেফোঁটা জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল ইত্যাদি। তো এদের সমর্থনের জন্য তো রসদ চাই, চাই পতাকা। বাজারে চাহিদা ব্যাপক। এসব দেশের হাজার হাজার পতাকা বানাতে তাই নাওয়া খাওয়া নাই শ্রমিকদের।
মেরাজনগরে চলছে বিশ্বকাপের জনপ্রিয় দলগুলোর পতাকা তৈরির কাজ। ছবি: এএফপি

দরজায় কড়া নাড়ছে ফুটবল বিশ্বকাপ। এর জেরে  গরম হচ্ছে বাংলাদেশের হাওয়া। চায়ের কাপে ঝড়। অলিগলি রেস্তোরায় জম্পেশ আড্ডা রূপ নিচ্ছে আগ্রাসী তর্কাতর্কিতে। মূলত দুই পক্ষই জোরালো, ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা। সঙ্গে ছিটেফোঁটা জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল ইত্যাদি। তো এদের সমর্থনের জন্য তো রসদ চাই, চাই পতাকা। বাজারে চাহিদা ব্যাপক। এসব দেশের হাজার হাজার পতাকা বানাতে তাই নাওয়া খাওয়া নাই শ্রমিকদের।

টেক্সটাইল প্রিন্টার ব্যবসায়ী কামাল হোসেনের কারখানা রাজধানীর মেরাজনগরে। জনপ্রিয় দলের পতাকা স্ক্রিন প্রিন্ট করে ছাপছেন তিনি। যা বিক্রি হবে স্থানীয় বাজারে। দিনরাত সেখানে চলছে পতাকা তৈরির কাজ। বিশ্বকাপের আগে  ধরাতে হবে বাজার। ব্যস্ততা বর্ণনা দিয়ে বললেন, ‘গত দুইমাস থেকে বিরতিহীন কাজ করে চলেছি। এমনও দিন গেছে যেদিন মাত্র দু ঘণ্টা ঘুমিয়েছি।’

বাংলাদেশে এমনিতে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। পুরো জাতি সারা বছরই মেতে থাকে ব্যাট-বলে। তবে চার বছর পর পর ফুটবল বিশ্বকাপ এলে তুলে রাখতে হয় ব্যাট-বল। ঘরে ঘরে তখন উত্তেজনার একটাই বিষয়-‘ফুটবল’। নিজেদের দেশ ফুটবলের তলানির দল। ফিফার ২০২ সদস্যের মধ্যে র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ আছে ১৯৭ নম্বরে। সূর্যের পশ্চিম দিকে উঠা আর বাংলাদেশের ফুটবল বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা প্রায় কাছাকাছি। তাই বলে কি পৃথিবীর সেরা ক্রীড়া উৎসবে মুখ গোমরা করে বসে থাকবে এদেশের মানুষ? তা হবার নয় বলেই মানুষ বেছে নিয়েছে পছন্দের দল। যার সিংহভাগই ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার। পেলে, গারিঞ্চা, সক্রেটিস, জিকোদের ব্রাজিল সমর্থন অনেক পুরনো। ১৯৮৬ থেকে ডিয়েগো ম্যারাডোনা জাদুতে যোগ হয়েছে আর্জেন্টিনার নাম। সময়ে সময়ে দুই সমর্থক গোষ্ঠীর যেন সাপে-নেউলে অবস্থা।

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থকদের এই বিরোধ অবশ্য চাঙ্গা করেছে পতাকা ব্যবসায়ীদের বাজার। ব্যতিক্রম নয় এবারও। ১৪ জুন থেকে শুরু হওয়া বিশ্বকাপের আগে পতাকা সাপ্লাই পেতে সারাদেশ থেকে ব্যাপক অর্ডার এসেছে বলে জানান ব্যবসায়ী কামাল,  ‘প্রতিদিন আমরা কয়েক হাজার পতাকা বানাচ্ছি। আজ যেমন আর্জেন্টিনার ১১ হাজার ছোট পতাকা প্রিন্ট দিলাম।

ছবি: এএফপি
রোনালদো থেকে নেইমার, ম্যারাডোনা থেকে মেসি

বুড়োদের মুখে নাম শোনা যায় পেলে, সক্রেটিস, জিকোদের। ব্রাজিলের তরুণ সমর্থকরা দেখেছে ‘দ্য ফেনোমেনন’ রোনালদোর ঝলক আর এখন আছেন হালের নেইমার। তেমনি ম্যারাডোনার জাদু ভিডিও ক্লিপে দেখেই মিটছে চোখের ক্ষিধে । আর এখন আর্জেন্টিনা সমর্থকরা দেখছে লিওনেল মেসির জাদু। যুগে যুগে হিরো পাল্টাচ্ছে কিন্তু বাড়ছে আবেদন। দেশের আনাচে-কানাচে দেখা মিলে কয়েকশ মিটার লম্বা বিশাল সব পতাকারও।

নারায়ণগঞ্জের পতাকা বিক্রেতা ফারুক মিয়া যেমন বলছিলেন, ‘আর্জেন্টিনা নিয়ে উন্মাদনা এখনো অনেক পোক্ত। ম্যারাডোনা না থাকলেও মেসি এখন নতুন সুপারস্টার।’

ফারুক গেল সপ্তাহে ৫০০ পতাকা এনেছিলেন বিক্রির জন্য। সব বিক্রি হওয়ার তৃপ্তি নিয়ে অর্ডার দিয়েছেন আরও ৫০০ পতাকার। তিনি নিজেও এবার সমর্থন করবেন আর্জেন্টিনাকে।

পতাকা কারখানার মালিক সেলিম হাওলাদার জানিয়েছেন এই ব্যবসার আরও বিস্তারিত ছবি, ‘বিশ্বকাপের এক মাস আগেই তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। ২০১৪ বিশ্বকাপে আমি ৮০ হাজারের বেশি পতাকা বিক্রি করেছি। বেশিরভাগ বিক্রি হয়েছে বিশ্বকাপের সময় ও তার আগে। এবার এরইমধ্যে আমি দুই-আড়াই হাজার বড় পতাকা ও ১০ হাজার ছোট পতাকা বিক্রির মধ্যে আছি।’

সেলিম জানান,তার কারখানায় কাজ করছেন ২৫ জন শ্রমিক। পুরো মেরাজগঞ্জে এভাবে যুক্ত আছেন প্রায় দুই হাজার মানুষ।

৩২ দল বিশ্বকাপে অংশ নিলেও বেশিরভাগ পতাকাই আসলে দুই দেশের,‘আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলই এদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এদের অর্ডারই বেশি। এরমধ্যে আর্জেন্টিনার ৫০ ফুট দীর্ঘ পতাকার অর্ডার পেয়েছি।’ এই দুদলের বাইরে জার্মানি, স্পেন, পর্তুগালের পতাকার চাহিদা রয়েছে বলে জানান সেলিম।

বিশ্বকাপের পতাকার বাজার বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দিয়েছে শ্রমিকদের। সেলিমের কারখানায় কাজ করা মোহাম্মদ ইকবাল ও নার্গিস আক্তার দম্পতি যেমন জানিয়েছেন তাদের আয়ের চিত্র, ‘এই মৌসুমে গড়ে প্রতিদিন তিন হাজার টাকা রোজগার করতে পারছি, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করলে পুরো মাসে পাঁচ-ছয় হাজার আসত।’

নার্গিস তো হেসে বললেন, ‘পতাকা কেনার এই ধুম আরও বাড়ুক।’

তথ্যসূত্র: এএফপি 



 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

10h ago