সম্মানসূচক ডি-লিট বিশ্ব বাঙালিকে উৎসর্গ করলেন প্রধানমন্ত্রী
বিশ্ববাঙালির উদ্দেশ্যে আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া সম্মানসূচক ডি-লিট উৎসর্গ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার আসানসোলের এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাড়ম্বর এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই সম্মাননা প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সাধন চক্রবর্তী। আর এই সম্মাননা পেয়েই প্রধানমন্ত্রী গোটা বাঙালি জাতির উদ্দেশ্যে তা উৎসর্গ করেন।
ভারতীয় সময় বেলা ১২ টায় সমাবর্তন সংগীতের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। দুই অংশে হওয়া অনুষ্ঠানের প্রথম অংশে সংক্ষিপ্তভাবে ১০জনকে স্বর্ণ পদক তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এরপর পরই শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল আয়োজন সম্মানসূচক ডি-লিট প্রদান অনুষ্ঠান।
মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কবি নজরুলের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় কেন তাকে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধি প্রদান করল সে বিষয়ে ব্যাখ্যা করেন এবং তিনি বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তারা এই সম্মান দিতে পেরে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নয় পশ্চিমবঙ্গের মানুষও গর্ববোধ করবেন।
এরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে ডিলিট গ্রহণ করার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নাতিদীর্ঘ বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বললেন ‘বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান ও তার নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ে তারই জন্মদিনের দিন এই উপাধি আমার জীবনের অনেক বড় পাওয়া। এই সম্মান উৎসর্গ করলাম বাংলাদেশের মানুষকে, সমস্ত বাঙালিকে। ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক।’
তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল কিন্তু ভাগ হয়নি। তাই এখানে এলাম। এ সম্মান শুধু আমার নয়, গোটা বাংলাদেশের মানুষের’।
প্রধানমন্ত্রীর এই অনুষ্ঠানে সকাল থেকেই নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া হয় গোটা আসানসোল শহর। আসানসোল শহর ভেদ করে যাওয়া দূর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।
সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রবেশ করে। যদিও নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বেলা ১২টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। তার দীর্ঘ ২৭ মিনিটের বক্তব্যে সাম্যের কবি বিদ্রোহের কবি, প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের আদর্শ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আর সব ভাগ হয়ে গেলেও রবীন্দ্রনাথ-নজরুল কিন্তু ভাগ হয়নি। নজরুল ইসলাম সম্প্রীতির প্রতীক। মানবতার জন্য তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। তার আন্দোলন ছিল মানুষের অধিকারের জন্য। আমি সমস্ত ভারতবাসীকে সম্মান জানাই। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। আমরা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ছিলাম। সেই দেশ গড়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও ভারতবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের জন্যই মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে দেশ গড়া সম্ভব হয়েছিল’।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের পরিবারের ১৮ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তখন আমি আর আমার বোন বিদেশে ছিলাম। সেই বিধ্বস্ত অবস্থাতেও ভারতবাসীকে পাশে পেয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, চুরুলিয়ায় যখন এসেছিলাম তখন খুব করুণ অবস্থা ছিল। ধন্যবাদ জানাই মুখ্যমন্ত্রীকে, যিনি নজরুলের জন্য অনেক কিছু করেছেন।
অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের যেমন বিশিষ্ঠজনেরা উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে আসা ৮০ জনের প্রতিনিধি দলের সবাই এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এদের মধ্যে ছিলেন শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান, রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আরও উপস্থিত ছিলেন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা,শমী কায়সার,শাকিল আহমেদসহ অনেকেই।
Comments