এক পরিবারের সবাই মাদক ব্যবসায়ী

আসমা আহমেদ ডালিয়া (৩৭)। মোহাম্মদপুর থেকে শুরু করে আদাবর ও এলিফ্যান্ট রোডের বিস্তৃত এলাকার একচ্ছত্র মাদক সম্রাজ্ঞী। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ৩৭ জনের তালিকায় স্বামী রবিউলসহ তার নাম এসেছে সাত নম্বরে। শুধু স্বামীই নয়, বাবার মৃত্যুর পর গোটা পরিবারকেই মাদক ব্যবসায় জড়ায় সে।
narco family
ছবি: সংগৃহীত

আসমা আহমেদ ডালিয়া (৩৭)। মোহাম্মদপুর থেকে শুরু করে আদাবর ও এলিফ্যান্ট রোডের বিস্তৃত এলাকার একচ্ছত্র মাদক সম্রাজ্ঞী। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ৩৭ জনের তালিকায় স্বামীসহ তার নাম এসেছে সাত নম্বরে। শুধু স্বামীই নয়, বাবার মৃত্যুর পর গোটা পরিবারকেই মাদক ব্যবসায় জড়ায় সে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডালিয়ার বাবা শাহজাহান ছিলেন পুলিশ কনস্টেবল। চার সন্তানকে নিয়ে কোনোরকমে দিন পার হতো। কিন্তু ২০০০ সালে তার মৃত্যুর পর পাল্টে যায় পরিবারটির চিত্র। সংসারের হাল ধরেই বড় মেয়ে ডালিয়া শুরু করেন মাদক ব্যবসা। ধীরে ধীরে পুরো পরিবারকে সঙ্গে নিয়েই একসময় গড়ে তোলেন মাদকের অন্ধকার সাম্রাজ্য।

ডিএনসি সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদপুরের সুইপার কলোনিতে থাকার সময় হেরোইন দিয়ে মাদক ব্যবসায় নামেন ডালিয়া। অবৈধ টাকার নেশায় একে একে মা মনোয়ারা বেগম, বোন স্বপ্না রানি, ভাই সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, স্বামী রবিউল ইসলাম, স্বপ্নার স্বামী শামীম আহমেদ, মাহবুবুরের স্ত্রী সৈয়দা সুমাইয়া ইসলাম নয়ন এবং মাহবুবুরের ফুফু মাহমুদা রানীকেও মাদক ব্যবসায় নিয়ে আসে। তাদের দেখা দেখি, মাহবুবুরের অপর এক ভাইও মাদক ব্যবসা শুরু করেন। তবে হেরোইন দিয়ে শুরু করলেও চাহিদা বাড়তে থাকায় ২০০৬ সালের দিকে ইয়াবা ব্যবসায় ঝুঁকেন তারা।

আরও পড়ুন: ঢাকার মাদক সম্রাজ্ঞী

গত প্রায় দুই দশকে অবৈধ মাদক ব্যবসা করে পুরো পরিবারটিই এখন ফুলে ফেঁপে অঢেল সম্পদের মালিক। মারণ নেশা ‘ইয়াবা’ বিক্রি করে তারা ঢাকায় আলিশান বাড়ি ও একাধিক গাড়ি কিনেছেন। এলিফ্যান্ট রোডে অভিজাত একটি বহুতল ভবনে তাদের রয়েছে বিশাল ফ্ল্যাট। কলাবাগান ও আদাবরেও তাদের ফ্ল্যাট রয়েছে। বিলাসবহুল গাড়ি আছে তিনটি। ব্যাংকে আছে কোটি কোটি টাকা।

এখানেই শেষ নয়, মালয়েশিয়ায় পরিবারটির ‘সেকেন্ড হোম’ রয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। সেখানে ডালিয়ার ছেলেকে তার বোন দেখাশোনা করে বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ইতিমধ্যে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোর লেনদেন বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছে ডিএনসি। এর পরই নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিবারটির ইয়াবা বিক্রির টাকার লেনদেন আর ব্যাংক হিসাব নিয়ে শুরু হয়েছে তদন্ত।

কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত এই পরিবারের আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুরুর দিকে বুঝে উঠতে না পারলেও পরে জানা যায়, তারা সবাই একই পরিবারের। ইয়াবাও আসে একই চ্যানেলে, তবে বিক্রি হয় ভিন্ন ভিন্ন পন্থায়। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার নাসির নামের একজন পরিবারটিকে ইয়াবা সরবরাহ করে। ডালিয়ার পরিবারসহ ঢাকায় আরও কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে পাইকারি দরে ইয়াবা সরবরাহ করেন এই নাসির।

ডিএনসির সূত্রাপুর সার্কেলের পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, গত বছর ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের একটি ফ্ল্যাট থেকে ডালিয়াকে তার মা, স্বামীসহ গ্রেফতারের পর তাদের ইয়াবা বাণিজ্যের বিষয়টি সামনে আসে। এরপর ডিএনসি পরিবারটির প্রতি নজরদারি শুরু করে। সর্বশেষ গত এপ্রিলে ডালিয়ার ভাই ও ভাবিকে গ্রেপ্তার করে ডিএনসির গোয়েন্দারা। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সন্দেহ পরিবারটি এখনও ইয়াবা ব্যবসা চালাচ্ছে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ডালিয়ার মা ও ফুফু বার্ধক্যজনিত কারণ দেখিয়ে জামিন পেয়েছেন। গর্ভবতী হওয়ায় স্বপ্না রানিও জেলহাজতের বাইরে। মূল হোতা নাসিরকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। ডালিয়ার এক ভাইও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ জন্যই সন্দেহ করা হচ্ছে, এরা এখনও ইয়াবা ব্যবসা করে যাচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English
Trend of Interest Rate Spread

Interest rate spread rises to highest level since 2003

The spread between interest rates on deposits and loans rose to 6.03 percent, the highest in two decades, indicating that banks are making money at the expense of depositors and borrowers.

13h ago