কলকাতার নিউমার্কেটে কমছে বাংলাদেশি ক্রেতার সংখ্যা!

৪ জুন। ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর আড়াইটা। মার্কু্ইজ স্ট্রিট হয়ে সদর স্ট্রিটের পথ পেছনে ফেলে লিন্ডসে স্ট্রিটটি ধরে হেঁটে খানিকটা যেতেই নিউমার্কেটের মূল বাজার শুরু। নিউমার্কেটে প্রবেশ করতেই হিন্দিভাষীদের প্রবল উপস্থিতি চোখে পড়ল। এই সময় সাধারণত এই বাজার এলাকার অর্ধেক ক্রেতা থাকেন বাংলাদেশি পর্যটক। এবার ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে কিছুটা। তবে কি কলকাতার এক সময়ের জনপ্রিয় এই বাংলাদেশি ক্রেতাদের দ্রষ্টব্য নিউমার্কেটে সেই ক্রেতাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে?
Kolkata Newmarket
কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায় বাংলাদেশি ক্রেতাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে জানান দোকানিরা। ছবি: স্টার

৪ জুন। ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর আড়াইটা। মার্কু্ইজ স্ট্রিট হয়ে সদর স্ট্রিটের পথ পেছনে ফেলে লিন্ডসে স্ট্রিটটি ধরে হেঁটে খানিকটা যেতেই নিউমার্কেটের মূল বাজার শুরু। নিউমার্কেটে প্রবেশ করতেই হিন্দিভাষীদের প্রবল উপস্থিতি চোখে পড়ল। এই সময় সাধারণত এই বাজার এলাকার অর্ধেক ক্রেতা থাকেন বাংলাদেশি পর্যটক। এবার ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে কিছুটা। তবে কি কলকাতার এক সময়ের জনপ্রিয় এই বাংলাদেশি ক্রেতাদের দ্রষ্টব্য নিউমার্কেটে সেই ক্রেতাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে?

খোঁজ নিতে গিয়ে কথা হয় নিউমার্কেটে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি ক্রেতা কেনাকাটা করেন এমন একটি মেয়েদের পোশাকের দোকানের কর্ণধার প্রকাশ নিরওয়ানীর সঙ্গে।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি জানালেন, ভারতের অর্থনীতির কিছুটা পরিবর্তন হওয়ার কারণে সব কিছুর দাম বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে পোশাক-জুতো-কসমেটিক্সে এর প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশের ক্রেতারা অনেকেই আগে কলকাতায় এসে ব্যাগভর্তি করে ঈদের কেনাকাটা করতেন। এখন সেই ব্যাগ অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। তাতে বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশি ক্রেতারা এখন আগ্রহ হারাচ্ছেন পণ্যের দাম বাড়ার কারণে।

তবে তিনি এও যোগ করেন, রমজান মাসের আগে বাংলাদেশি পর্যটকদের একটি বড় অংশ নিউমার্কেট থেকে ঈদের কেনাকাটা সেরে যান। সে কারণে রমজান মাসে বাংলাদেশি ক্রেতাদের উপস্থিতি একটু কম থাকে। এটি স্বাভাবিকও।

“দাম কম রাখার জন্য ঢাকার ক্রেতাদের ঠিকানা হয়ে উঠছিল কলকাতা। আর সেই কলকাতাতেই এখন ঢাকার চেয়েও বেশি দাম রাখা হচ্ছে”- পটুয়াখালীর এক ব্যবসায়ী হারুন উর রশিদ কলকাতায় ঈদের কেনাকাটা করার সময় এমন প্রতিক্রিয়া জানালেন দ্য ডেইলি স্টারের কাছে।

স্ত্রী ফাহমিদা রশিদকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসেছিলেন ওই ব্যবসায়ী। ঈদ বাজারের খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে দেখা হলো তাঁর সঙ্গে।

তিনি জানালেন, চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পথে ঈদের বাজারও সেরে যাচ্ছেন। তবে ঈদের বাজার করার জন্য কখনোই তিনি কলকাতায় আসতেন না। ঢাকা কিংবা পটুয়াখালীর মতো এখানেও দাম বেশি বলে অভিযোগ তাঁর।

Kolkata Newmarket
ক্রেতার নজর আকর্ষণে ব্যস্ত কলকাতার নিউমার্কেটের বিক্রেতারা। ছবি: স্টার

একইভাবে সেদিন ইফতারির কয়েক মিনিট আগে নিউমার্কেটের পার্কিং পয়েন্টের সামনে দেখা হয় ঢাকার একটি রোইং ক্লাবের (নৌকা বাইচ) তিন সদস্যের সঙ্গে। দক্ষিণ কলকাতার একটি লেকে রোইং প্রশিক্ষণের ফাঁকে ঈদের কেনাকাটা করছিলেন দলের সদস্যরা। ওই দলের একজন খেলোয়াড় মামুন ইসলাম মিঠু দ্য ডেইলি স্টারকে বললেন, “আসলে এখানে একটি বিশেষ কারণে বাংলাদেশি ক্রেতারা আসেন বলে আমার বিশ্বাস। সেটি হলো, কলকাতার এই বাজারে অনেক স্টক আছে। ক্রেতাদের পছন্দের জিনিসটা কলকাতায় পাওয়া যায়। তবে দাম তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের মতোই।”

মামুন অবশ্য এটিও স্বীকার করেন, কলকাতার জিনিস খারাপ নয়। বেছে নিতে পারলে কিছুটা কম এবং ব্যতিক্রমী ঈদের বাজার সেরে নেওয়া সম্ভব। তবে অবশ্যই একটু সচেতন হতে হবে, নইলে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল।

সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা তৌহিদুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় একটি পোশাকের দোকানে দাঁড়িয়ে। তিনি জানালেন, “মূলত অন্য ব্যবসার কাজে কলকাতায় এসেছি। দুদিন পর দেশে ফিরবো। ফেরার আগে দোকানগুলোতে খুঁজে দেখছি পছন্দের কিছু পাওয়া যায় কিনা।” তবে সব মিলিয়ে কেনাকাটায় নিজের খুশি-ভাবটিও প্রকাশ করেন তিনি।

দ্য ডেইলি স্টারকে তৌহিদুর বলেন, “দেখুন কলকাতায় বাংলা ভাষায় কথা বললেও এটি আমাদের কাছে বিদেশ। তাই বিদেশ থেকে একটি সুতো কিনে নিয়ে গেলেও ভালো লাগে সবার। সে কারণেই ঈদের জন্য টুকটাক কেনাকাটা করে ফিরতে চাই।”

নিউমার্কেটের দশটি জনপ্রিয় দোকান ঘুরে দেখা গেল, দোকানগুলোতে ভারতীয় অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম ক্রেতার সংখ্যা বাংলাদেশি ক্রেতার সংখ্যার চেয়ে বহু গুণ বেশি।

গতকাল মিলান নামের মেয়েদের জনপ্রিয় পোশাকের দোকানে গিয়ে দেখা যায় ৯০ জন ক্রেতার মধ্যে মাত্র ছয়জন বাংলাদেশি। একইভাবে বিধাতা নামের আরেকটি দোকানেও প্রায় একই অবস্থা। কটন হাউজ নামের একটি দোকান সেখানে প্রায় বাংলাদেশি ক্রেতা নেই বললেই চলে। তবে মান্যবর, শ্রীলেদাস, খাদিমস, বাজার কলকাতাসহ টাইটান ঘড়ির দোকানে বাংলাদেশি ক্রেতাদের হালকা ভিড় চোখে পড়েছে। সেই সঙ্গে ফুটপাতের কিছু ব্যাগ, চুড়ি কিংবা জুতোর দোকানেও দামদর করতে দেখা যায় বাংলাদেশি ক্রেতাদের।

যদিও নিউমার্কেটের কয়েকটি ব্যবসায়ী সমিতির হিসাব বলছে, প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার বাংলাদেশি পর্যটক সেখানে কেনাকাটা করতে আসেন। ঈদের সময় সেই সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত হয়ে যায়। তবে এ বছর সেই সংখ্যাটায় কিছুটা ভাটা পড়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

US to provide 14,000 tank shells to Israel

The Biden administration has used an emergency authority to allow the sale of about 14,000 tank shells to Israel without congressional review, the Pentagon said yesterday..The State Department on Friday used an Arms Export Control Act emergency declaration for the tank rounds worth USD106.

1h ago