শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের বেছে বেছে মেরেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী

rohingya influx
হত্যা-নির্যাতন থেকে বাঁচতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। রয়টার্স ফাইল ছবি

শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে আসা মোহাম্মদ হাশিম তার ভাইকে জীবিত অবস্থায় সর্বশেষ যখন দেখেছিলেন তখন তার হাতদুটো পেছন থেকে বাঁধা ছিল। সে বার বার বলছিল, আমি শিক্ষক! আমি শিক্ষক! আমার পরিচয়পত্র রয়েছে। এভাবেই মিয়ানমারের সেনাসদস্যদের কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলেও তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর থেকেই ভাইয়ের আর কোনো খবর জানেন না হাশিম।

হাশিম ছড়াও রাখাই রাজ্য থেকে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে এমন অন্তত এক ডজন শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)। তারা প্রায় সবাই বলেছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের মধ্যে থেকে শিক্ষিত লোকদের বেছে বেছে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। তারা বলেছেন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের কণ্ঠরোধ করে দিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই কাজ করেছে।

এ প্রসঙ্গে গণহত্যা গবেষকরা বলছেন, এটি পুরনো একটি কৌশল। প্রায় সব গণহত্যাতেই এমনটি ঘটতে দেখা গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপে ইহুদী নিধনের সময়ও নাৎসি বাহিনী এই কৌশল নিয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সোয়াহ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ ডিরেক্টর কারেন জাংব্লাট গণহত্যার এই চিরায়ত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, ‘সবার গল্পগুলো প্রায় একই রকম। যাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয় প্রথমে তাদের ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতাদের আলাদা করে, সবাইকে কোণঠাসা করা হয়।’

গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনেও প্রায় একই চিত্র উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ‘রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিক্ষক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতাসহ প্রভাবশালীদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। রোহিঙ্গা ইতিহাস, সংস্কৃতি ও জ্ঞান ধ্বংস করতে তারা এটা করেছে।’

গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আরসা’র হামলার পর রাখাইনের মং নু গ্রামে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। ঘটনার পর শিক্ষকদের খুঁজতে ওই গ্রামটিতে আসে একদল সেনা সদস্য। ২৬ বছর বয়সী রহিম বলেন, স্থানীয়ভাবে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন তিনি। এর সুবাদে অনেক সেনাসদস্যের সন্তান তার ছাত্র। সেনাসসস্যরাও তাকে চিনতেন। কিন্তু গ্রামে সেনাবাহিনীকে আসতে দেখেই তিনি পালিয়ে যান। ‘আমি জানতাম ধরা পড়লেই ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে খুঁজতেই ওরা গ্রামে এসেছিল। ওরা জানত আমাকে শেষ করে দিতে পারলে গ্রামের অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Tax authority to split. Will it bring the desired outcome?

Touted as a historic overhaul, the move has ignited debate over whether it will drive meaningful reform or merely deepen the layers of bureaucracy, given the NBR's persistent failure to meet its targets.

15h ago