অস্ত্র ব্যবসায়ী ‘ওস্তাদ’ গ্রেপ্তার

বাঁশি বাজিয়ে নাম করেছিলেন একেএম শাহাবুদ্দিন খান। ময়মনসিংহ শহরের অনেকেই তাকে ভদ্রলোক হিসেবেই জানতেন। সংগীতে রুচি থাকায় পরিচিতি পেয়ে গিয়েছিলেন ‘ওস্তাদ’ হিসেবে। সম্মান করে লোকজন তাকে এই নামেই ডাকতেন।

বাঁশি বাজিয়ে নাম করেছিলেন একেএম শাহাবুদ্দিন খান। ময়মনসিংহ শহরের অনেকেই তাকে ভদ্রলোক হিসেবেই জানতেন। সংগীতে রুচি থাকায় পরিচিতি পেয়ে গিয়েছিলেন ‘ওস্তাদ’ হিসেবে। সম্মান করে লোকজন তাকে এই নামেই ডাকতেন।

গতকাল সকালে শহরের এবি হুহ সড়কের বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার পর এই ওস্তাদের কীর্তি এখন সামনে এসেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজের বৈধ অস্ত্রের দোকানের আড়ালে সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতেন তিনি।

ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) কর্মকর্তারা জানান, ময়মনসিংহ শহরে ‘খান আর্মস স্টোর’ নামে শাহাবুদ্দিনের একটি বৈধ অস্ত্রের দোকান রয়েছে। এই দোকানের মাধ্যমেই তিনি সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতেন।

বৈধ অস্ত্র বিক্রেতা হিসেবে ক্রেতার লাইসেন্স পরীক্ষা করার দায়িত্ব থাকে তার ওপর। অস্ত্র ক্রেতার লাইসেন্সের একটি কপিও রাখতে হয় বিক্রেতাকে। ডিসি অফিস থেকে লাইসেন্সের সত্যতা যাচাই করারও বাধ্যবাধকতা তার ওপরই বর্তায়। আর অস্ত্র ক্রেতাকে ডিসি অফিসে অস্ত্রের রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শাহাবুদ্দিন যে প্রক্রিয়া মেনে চলেননি তার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ময়মনসিংহের কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জাহিদুল আলম কাদির নামের একজন ডাক্তারের কাছে অস্ত্র বিক্রির অভিযোগে শাহাবুদ্দিনকে গ্রেপ্তার আমরা করেছি। বৃহস্পতিবার ওই ডাক্তারের বাড়ি থেকে ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১,৬২২টি বুলেট উদ্ধার করেছে সিটিটিসি ইউনিট।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাহিদুলের কাছে অস্ত্র বিক্রির কথা শাহাবুদ্দিন স্বীকার করেছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।

জাহিদুলের বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে করা একটি মামলায় শাহাবুদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পুলিশ বলছে জিজ্ঞাসাবাদের পর শাহাবুদ্দিন সম্পর্কে তারা ভালো করে বলতে পারবেন।

স্থানীয় লোকজন ৬০ বছরের শাহাবুদ্দিনকে ময়মনসিংহের শিল্পকলা একাডেমির সংগীতের শিক্ষক হিসেবেই চিনতেন। জেলা শাখা উদীচীর সদস্য ছিলেন তিনি। সে হিসেবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল তার সরব উপস্থিতি। এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন, নজরুল সেনা ও আলোকময় নাহা সংগীত বিদ্যায়তনে গান শেখাতেন তিনি।

তবে সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, সংস্কৃতিকর্মীর লেবাসের আড়ালে তিনি ছিলেন একজন ‘হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল’। ডা. জাহিদুল ও তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর শাহাবুদ্দিনের কথা সামনে আসে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গত ১৫ মে সিটিটিসির জালে ধরা পড়ে জাহিদুল। এসময় তার কাছ থেকে দুটি পিস্তল ও আটটি বুলেট জব্দ করা হয়। এর পর ৩ জুন গাবতলী এলাকা থেকে একটি পিস্তল ও চারটি গুলিসহ তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বৃহস্পতিবার তাদের বাড়ি থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। এই দম্পতি এখন তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। আজ তাদের রিমান্ড শেষ হবে।

সিটিটিসির পরিদর্শক মেজবাহ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, জাহিদুলের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের বেশিরভাগেরই জোগানদাতা ছিল শাহাবুদ্দিন। অন্য বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, শাহাবুদ্দিন আরও বেশ কয়েকজন বৈধ অস্ত্র বিক্রেতার কাছ থেকে অস্ত্র কিনতেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। এছাড়াও তিনি কালোবাজার থেকেও অস্ত্র কিনতেন।

Comments

The Daily Star  | English

Who are giving us earthquake data?

BMD ill-equipped, still relies on manual system with no seismologist or geologist involved

8h ago