দল বিশ্লেষণ: সবাইকে গুঁড়িয়ে বিশ্বকাপ জেতার সামর্থ্য আছে ব্রাজিলের

আর কয়েকঘন্টা পরই শুরু হচ্ছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা এখন বিশ্বকাপ জ্বরে আক্রান্ত। কে জিতবে একুশতম আসর? সে তালিকায় হট ফেভারিট দলগুলোর মধ্যে উপরের নাম ব্রাজিল। বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশিবার চ্যাম্পিয়ন, সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতা ও সবগুলো আসরে খেলা একমাত্র দল ব্রাজিল। তবে ২০০২ সালের পর থেকে আর যেতে পারছে না ফাইনালে। গেল আসরে ঘরের মাঠে হতাশা কাটিয়ে এবার প্রতাপ নিয়েই ফিরেছে তারা। দেখে নেওয়া যাক ব্রাজিলের হালচাল।
ডাকনাম : সেলেসাও
কোচ: লিওনার্দো বাচ্চি তিতে
অধিনায়ক: গ্যাব্রিয়েল জেসুস
ফিফা র্যাঙ্কিং : ২
বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : সবগুলো বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া একমাত্র দল।
সেরা সাফল্য: চ্যাম্পিয়ন- ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪, ২০০২।
যেভাবে বিশ্বকাপের মূল পর্বে এসেছে: বাছাইপর্বে শুরুতে বেশ ধুঁকেছিল ব্রাজিল। পয়েন্ট টেবিলের চার নম্বরে নেমে দেখেছিল অশনি সংকেত। ইতিহাসে কখনো যা হয়নি দেখা যাচ্ছিল তা হওয়ার শঙ্কাও। টালমাটাল অবস্থায় কার্লোস দুঙ্গার কাছ থেকে ব্রাজিলের দায়িত্ব নেন লিওনার্দো বাচ্চি তিতে। আর তাতেই বদলে যায় সেলেসাওরা। ব্রাজিল ফিরে পায় সাম্বা ছন্দ, ফিরে পায় ধার। টানা ৭ জয়ে সবার আগে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপে নিয়ে যান তিনি। স্বাগতিক রাশিয়া বাদ দিলে এবার বিশ্বকাপ নিশ্চিত করা প্রথম দল ব্রাজিল।
সূচি :
১৭ জুন ২০১৮ ব্রাজিল বনাম সুইজারল্যান্ড রাত ১২টা
২২ জুন ২০১৮ ব্রাজিল বনাম কোস্টারিকা সন্ধ্যা ৬টা
২৭ জুন ২০১৮ ব্রাজিল বনাম সার্বিয়া রাত ১২টা
স্কোয়াড
গোলরক্ষক: অ্যালিসন, এডারসন, ক্যাসিও।
ডিফেন্ডার: মার্সেলো, ড্যানিলো, ফিলিপে লুইস, ফ্যাগনার, মারকুইনহস, থিয়াগো সিলভা, মিরান্দা, পেদ্রো।
মিডফিল্ডার: উইলিয়ান, ফার্নান্দিনহো, পাউলিনহো, ক্যাসেমিরো, ফিলিপে কুটিনহো, রেনাতো অগাস্তো, ফ্রেড।
ফরোয়ার্ড: নেইমার, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, রবার্তো ফিরমিনো, ডগলাস কস্তা, টেইসন।
সম্ভাব্য একাদশ: অ্যালিসন, মার্সেলো, ড্যানিলো, থিয়াগো সিলভা, মিরান্দা, পাউলিনহো, কেসেমিরো, কৌতিনহো, উইলিয়ান, নেইমার, গ্যাব্রিয়েল জেসুস।
বিশ্বকাপের ফাইনালে যাওয়ার সমীকরণ : বিশ্বকাপে ব্রাজিল আছে ‘ই’ গ্রুপে। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ সুইরাজল্যান্ড, কোস্টারিকা ও সার্বিয়া। নামেভারে ব্রাজিল সবার চেয়ে ঢের এগিয়ে। সাম্প্রতিক ফর্ম বলছে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠার পথে ব্রাজিলের বড় বাধা হওয়ার সামর্থ্য নেই কারো। দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলে প্রতিপক্ষ হিসেবে ব্রাজিল পেতে পারে মেক্সিকোকে। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে চারবার মুখোমুখি হয়েও মেক্সিকো হারাতে পারেনি ব্রাজিলকে। সে বাধা এবারও উৎরে গেলে কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল প্রতিপক্ষ হিসেবে পেতে পারে বেলজিয়ামকে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ব্রাজিলের ঠিক পরেই থাকা বেলজিয়াম ভড়কে দিতে পারে যে কাউকে । তবে অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকা পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নরাই থাকবে এগিয়ে। সেমিফাইনালে গেলে ব্রাজিল পেতে পারে ফ্রান্সের মতো শক্ত প্রতিপক্ষকে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনাই তাই বেশি। সে ম্যাচ জিতে গেলে ফাইনালে ব্রাজিলের জন্য অপেক্ষা করবে স্পেন বা জার্মানি।
সেরা তারকা: আগেরবারের মতো এবার ব্রাজিলের সেরা তারকা নেইমার। গত তিন মাস চোটের কারণে মাঠের বাইরে থাকা নেইমারের ছন্দে একটুও গোলমাল হয়নি। সে প্রমাণ তিনি রেখেছেন বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে। দুই ম্যাচে নেমেই করেছেন দারুণ দুই গোল। নেইমারকে ঘিরেই আবারও আক্রমণ সাজাবে ব্রাজিল। তবে নেইমার ছাড়াও আক্রমণভাগে দারুণ সব খেলোয়াড় আছে ব্রাজিলের। অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পাওয়ার পর তরুণ গ্যাব্রিয়েল জেসুস হয়েছেন আরও ধারালো। আছেন লিভারপুল মাতানো রবার্তো ফিরমিনো। নিজের সেরা দিনে ফিলিপ কৌতিনহোর ক্ষমতা আছে একাই পার্থক্য গড়ে দেওয়ার। মধ্যমাঠে উইলিয়ান, কাসেমিরো, পাউলিনহোরাও আছেন ছন্দে। ব্রাজিলকে তাই এবার মনে করা হচ্ছে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দল।
শক্তি: এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দল ব্রাজিল। বড় টুর্নামেন্টে পারফর্ম করার অভিজ্ঞতাই দলটিকে এগিয়ে রাখত। সেখানে তাদের স্কোয়াডে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের ভিড় দলকে করেছে ভারসাম্যপূর্ণ। সবগুলো পজিশনে দারুণ সব ব্যাক আছে ব্রাজিলের। প্ল্যান-এ কোন কারণে অকার্যকর হলেও প্লান-বি দিয়ে বাজিমাত করার সামর্থ্য রাখে বিশ্বকাপের সফলতম দলটি।
দুর্বলতা : বিশ্বকাপের কয়েকদিন আগে চোটে পড়ে শেষ হয়ে যায় রাইট ব্যাক দানি আলভেজের বিশ্বকাপ। তার বদলি হিসেবে ড্যানিলো বা ফ্যাগনার কতটা সামর্থ্যবান সে নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন আছে। লেফট ব্যাকে খেলবেন মার্সেলো। রিয়াল মাদ্রিদ তারকার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু তিনি আক্রমণে যতটা মনযোগী রক্ষণে ঠিক ততটা নন। রক্ষণের সময় দুই উইং নিয়ে কিছুটা চিন্তা থাকবে ব্রাজিলের।
Comments