শাকা-শাকিরির রাজনৈতিক উদযাপন, শাস্তি চায় সার্বিয়া

শাকা-শাকিরির রাজনৈতিক উদযাপন

এমনিই এই বিশ্বকাপে উত্তেজনার কমতি নেই। মাঠের খেলার পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে তুমুল উত্তেজনা। তবে এবার বিশ্বকাপ সরগরম হয়ে উঠেছে অন্য কারণে। সার্বিয়া ম্যাচে গোল উদযাপনের সময় স্পর্শকাতর রাজনৈতিক বিষয় টেনে আনায় সুইজারল্যান্ডের গ্রানিথ শাকা ও জেরদান শাকিরিকে নিষিদ্ধ করার আবেদন জানিয়েছে সার্বিয়া ফুটবল ফেডারেশন

ঘটনার সূত্রপাত গত পরশু সার্বিয়া-সুইজারল্যান্ড ম্যাচে। প্রথমে পিছিয়ে পড়েও শাকা ও শাকিরির দ্বিতীয়ার্ধের দুই গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সুইসরা। তবে আলোচনার জন্ম দিয়েছে দুজনের গোল উদযাপনের ধরন। গোল করার পর দুজনেই হাত দিয়ে আলবেনিয়ান পতাকার অংশ ঈগলের মতো অঙ্গভঙ্গি করে দেখান। আর এতে করেই ক্ষেপেছে সার্বিয়ান ফুটবল ফেডারেশন। এরকম স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে উদযাপনের কারণে ফিফার কাছে শাকা ও শাকিরির শাস্তি দাবি করেছে সার্বিয়া।

শুধু তাই নয়, ম্যাচে দুই পায়ে দুই দেশের পতাকা সম্বলিত বুট পরে খেলতে নেমেছিলেন শাকিরি। এটা নিয়েও ফিফার কাছে নালিশ জানিয়েছে সার্বিয়া। সেদিন শাকিরির বাঁ পায়ের বুটে সুইজারল্যান্ড ও ডান পায়ের বুটে কসোভোর পতাকা লাগানো ছিল।

এছাড়া ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে সার্বিয়ান স্ট্রাইকার আলেক্সান্ডার মিত্রোভিচকে দুজন সুইস ডিফেন্ডার পেনাল্টি বক্সে অবৈধভাবে ফেলে দিলেও সেটি কেন পেনাল্টি দেয়া হয়নি, এ ব্যাপারেও ফিফার কাছে আপীল করেছে সার্বিয়ান ফুটবল ফেডারেশন।

তবে সার্বিয়ার মূল অভিযোগের জায়গা যে শাকা-শাকিরির উদযাপন, তা সার্বিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল জোভান সুরবাতোভিচের কথাতেই স্পষ্ট, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে ম্যাচের ৬৬ মিনিটে আমাদের খেলোয়াড়কে অবৈধভাবে ফাউল করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা ফিফার কাছে আপীল করবো। তবে ফিফার কাছে চিঠি লেখার এটাই একমাত্র কারণ নয়। সুইজারল্যান্ডের একজন খেলোয়াড়ের দুই পায়ে দুই পতাকা সম্বলিত বুট, দুই গোলের পর উদযাপন- এসব বিষয়ে আমরা ফিফার দৃষ্টি আকর্ষণ করবো।’

এরই মধ্যে গতকাল রাতে ফিফা নিশ্চিত করেছে, সার্বিয়ার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেয়েছে তারা। তবে এ বিষয়ে আর কোন বিস্তারিত তথ্য জানাতে রাজি হয়নি ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি।

Xherdan Shaqiri boot
বুটের ডান পায়ে কসোভোর পতাকা আর বাম পায়ে সুইজারল্যান্ডের পতাকা লাগিয়ে সার্বিয়ার বিপক্ষে নেমেছিলেন জেরদান শাকিরি। ছবিঃ রয়টার্স

কসোভোর স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন করার জন্য সার্বিয়া সরকারের হাতে বন্দী হয়েছিলেন শাকার বাবা। এরপর নিজেদের মাতৃভূমি ছেড়ে সুইজারল্যান্ডে আশ্রয় নিতে হয় শাকার পরিবারকে। শাকিরির জন্ম কসোভোতেই। জীবণ বাঁচাতে তাদের পরিবার শরনার্থী হয়ে আশ্রয় নেয় সুইজারল্যান্ডে।

মূলত দীর্ঘদিন কসোভোকে নিজেদের অংশ বানিয়ে রাখা ও ২০০৮ সালে কসোভো স্বাধীন হওয়ার পর সার্বিয়ার স্বীকৃতি না দেয়া- এ বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করেই অমন উদযাপন করেছিলেন শাকা ও শাকিরি।

তবে ফিফার নিয়ম অনুযায়ী এই দুজন শাস্তি পাবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। ফিফার আচরণবিধিতে রাজনৈতিক বিষয়ের ইঙ্গিত করে উদযাপন করা যাবে না এমন কিছু নেই। কিন্তু আচরণবিধির ৫৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘সাধারণ মানুষকে উস্কে দিতে পারে’ এমন যেকোনো আচরণের জন্য দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে পারেন সংশ্লিষ্ট ফুটবলার। এখন শাকা-শাকিরির উদযাপনকে  ফিফা ৫৪ ধারায় দেখছে কিনা সময়ই বলে দেবে।

ম্যাচের পর স্টোক সিটি উইঙ্গার শাকিরি বলেছিলেন, ম্যাচের শেষ মুহূর্তে জয়সূচক গোল করার পর ‘আবেগতাড়িত’ হয়ে পড়েছিলেন তিনি।

আর শাকার কণ্ঠ ছিল আরও উচ্চকিত। নিজের উদযাপনের জন্য বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নন তিনি। ম্যাচ শেষে জানিয়েছিলেন, ‘সত্যি বলতে এই ম্যাচের প্রতিপক্ষের ব্যাপারে আমি বিন্দুমাত্র কোন আগ্রহ পাই না। এই উদযাপন আমার জনগণের জন্য, যারা সবসময় আমার পাশে ছিল। তাদের জন্য, যারা কখনো আমাকে অবহেলা করে দূরে ঠেলে দেয়নি। এই উদযাপন আমার মাতৃভূমির জন্য, আমার বাবা-মায়ের শিকড়ের জন্য। এগুলো আমার সত্যিকারের আবেগ ছিল।’

 

Comments

The Daily Star  | English

Diplomatic push loses steam

Iran says European proposals ‘unrealistic’; Trump says Europe’s diplomacy unlikely to yield results

6h ago