‘পেনালদো’ও ব্যর্থ হন

গত ২৫ তারিখ সারানস্কে বিজয়ীরা ম্যাচ জিতেছে, তবে বিজিতরা জিতেছে হৃদয়।
ইরানের বিপক্ষে পেনাল্টি মিসের পর ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। ছবি: রয়টার্স

গত ২৫ তারিখ সারানস্কে বিজয়ীরা ম্যাচ জিতেছে, তবে বিজিতরা জিতেছে হৃদয়।

গ্রুপ ‘বি’ থেকে পরের পর্বে ওঠার আগে বাদ পড়ার শঙ্কা একবার হলেও খেলে গেছে দুই ফেভারিট স্পেন-পর্তুগালের মনে। গতিশীল ফুটবলের দারুণ প্রদর্শনী দেখিয়ে গ্রুপ পর্ব পার করার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছিল ইরান ও মরক্কো।

পর্তুগাল সুপারস্টার ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর জন্য ভুলে যাওয়ার মতো এক দিনই কেটেছে। প্রথম দুই ম্যাচে চার গোল করে ফেলা তর্কযোগ্যভাবে গত পাঁচ বছরে এই গ্রহের সেরা খেলোয়াড় রোনালদো মুদ্রার অপর পিঠটাও যেন দেখে ফেললেন এদিন ইরান ম্যাচে।

শুরুর দিকে বেশ প্রাণবন্তই ছিলেন তিনি। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, ততই ম্লান হয়েছে তাঁর ঔজ্জ্বল্য। ৫৩ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি মিস করেছেন সিআর সেভেন, সাত মিনিট পরে সাঈদ এজাতোলাহির সাথে লেগে যাওয়ায় লাল কার্ড খাওয়ার কাছাকাছিও চলে এসেছিলেন। ভিএআর (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) এর সাথে আলোচনা করে হলুদ কার্ড দেখিয়েই রোনালদোকে ছেড়ে দেন রেফারি।

পেনাল্টি থেকে গোল করার দক্ষতার কারণে যাকে ‘পেনালদো’ ও ডাকেন অনেকে, তাঁর পেনাল্টি মিসের পর গোটা পর্তুগালের হৃৎস্পন্দন যেন থমকে গিয়েছিল। এরপর ৯৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকেই গোল করে সমতা ফিরিয়ে যেন রোনালদোর কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটাই দিয়েছেন ইরানের করিম আনসারিফার্দ।

রোনালদোর পেনাল্টি থেকে গোল করার হার প্রায় ৮৪ শতাংশ। চাইলে তিনি অবশ্য চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসির পেনাল্টি মিস থেকেই সান্ত্বনা খুঁজে নিতে পারেন।

মেসির পেনাল্টি মিসের কারণেই আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ গোলে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা, আর রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার এমন দুর্দশার পেছনে সেটি বড় অবদানই রেখেছে। রোনালদোর মতো মেসিও আর্জেন্টিনা ও বার্সেলোনার হয়ে প্রধান পেনাল্টি টেকার। কিন্তু ৮১ শতাংশ সফলতার হার নিয়ে এক্ষেত্রে রোনালদোর চেয়ে একটু পিছিয়েই আছেন তিনি।

ক্লাব ও জাতীয় পর্যায়ে মেসির চেয়ে বেশি পেনাল্টি নিয়েছেন রোনালদো। রোনালদোর মোট গোলের ১৫.৯২% ই এসেছে পেনাল্টি থেকে, মেসির ক্ষেত্রে এই হার ১২.৯৭%।

কিন্তু এমন আকর্ষণীয় রেকর্ডের পরেও দুই দলই হয়তো তাদের পরবর্তী পেনাল্টি কে নেবে সেটা নির্ধারণের আগে একবার ভাববে!

বি গ্রুপের আরেক ম্যাচে তাকালে দেখা যাবে, স্পেনকে বাড়ির পথ প্রায় ধরিয়েই দিয়েছিল মরক্কো, কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্পেনের রক্ষাকর্তা হয়ে আসে প্রযুক্তি। ইয়াগো আসপাসের গোল শুরুতে বাতিল করে দিলেও ভিএআর প্রযুক্তির সহায়তায় যোগ করা সময়ে সমতা আনতে সক্ষম হয় স্পেন।

ডিয়েগো কস্তার বদলি হিসেবে নেমে কারবাহালের নিচু পাস ফ্লিক করে জালে জড়িয়ে দেন আসপাস। কিন্তু সহকারী রেফারি অফসাইডের পতাকা উঠিয়ে দেন। পরে মাঠের সিদ্ধান্ত বদলে যাওয়ার বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারেনি মরক্কো। ভিএআরের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে ক্যামেরার সামনে ‘বুল*ট’ শব্দটিও উচ্চারণ করেন মরক্কোর খেলোয়াড়েরা।

বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ভিএআর প্রযুক্তি ব্যবহার করায় ফিফার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে স্পেন। বিশ্বকাপের মাত্র একদিন আগে কোচ হুলেন লোপেতেগিকে হারানোর ধাক্কা (রিয়াল মাদ্রিদের দায়িত্ব নেয়ায় তাঁকে স্পেনের কোচের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়) সহ্য করে মাঠের খেলার মন দেয়া সহজ ছিল না স্প্যানিশ খেলোয়াড়দের জন্য।

মরক্কোর কৃতিত্ব অবশ্য তাতে কোনভাবেই খাটো হচ্ছে না। শুরু থেকেই অসাধারণ ফুটবল খেলেছে তারা, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ও সার্জিও রামোসের ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নিয়ে ম্যাচে প্রথম এগিয়েও গিয়েছিল তারা। বল নিয়ে ছুটে গিয়ে গোলকিপার ডেভিড ডি গিয়ার দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন খালি বোতালিব। প্লেমেকার ইসকো অবশ্য দ্রুতই খেলায় সমতা আনেন, কিন্তু কর্ণার থেকে অপ্রতিরোধ্য এক হেডে গোল করে মরক্কোকে আবারও এগিয়ে দেন বদলি খেলোয়াড় এন-নাসেরি।

 

Comments