ইউএনও-দের ‘রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা’ খতিয়ে দেখছে পুলিশ

উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ হতাশার জন্ম দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে। এমন সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
bangladesh govt logo

উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ হতাশার জন্ম দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে। এমন সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।

ইউএনও-দের সম্পর্কে কিছু তথ্য সংগ্রহ করার বিষয়ে জেলা পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষাজীবনে তাদের ‘রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা’-র বিষয়টিও। এমনকি, ইউএনও-দের পরিবারের কোনো সদস্য অথবা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের কেউ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কী না- সে বিষয়েও তথ্য সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, গতকালের (১ জুলাই) মধ্যে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের মাধ্যমে সেসব তথ্য জমা দেওয়ার কথা থাকলেও, অনেকেই তা জমা দেননি। জুন মাসের মাঝামাঝি পুলিশের বিশেষ বিভাগের রাজনৈতিক শাখা থেকে জেলা পুলিশকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়। দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এর একটি কপি রয়েছে।

সরকার এমন পদক্ষেপ নিয়েছে আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনের প্রায় ছয় মাস আগে। নির্বাচনে ইউএনও-রা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।

গতকাল যোগাযোগ করা হলে পুলিশের বিশেষ শাখার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম উল্লেখ না করার শর্তে বলেন, “এটি একটি নিয়মিত কাজ। আমরা সবসময়ই এধরনের কাজ করে থাকি।”

সরকারের এমন সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়ে অনেক ইউএনও তাদের ব্যাচ-ভিত্তিক সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন-এর সদস্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেন।

একজন ইউএনও বলেন, “আমাদের নিয়োগ দেওয়ার আগেই পুলিশ আমাদের সম্পর্কে তথ্য যাচাই করেছে। আমাদের নিয়োগের এতো বছর পর আবার তথ্য নেওয়ার বিষয়টি অপমানজনক।”

২৮তম ব্যাচের একজন ইউএনও বলেন, “একজন পুলিশ কর্মকর্তা আজ (১ জুলাই) আমাকে ডেকেছিলেন। সেসময় আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। যেমন ধরুন, আমার স্কুল-কলেজের নাম এবং কোন সালে আমি পাস করেছি ইত্যাদি।”

তিনি জানান, “আমি প্রথমে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করি। পরে দিয়েছি, কেননা, এসব তথ্য সংগ্রহ করা কোনো কঠিন কাজ নয়।”

“অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ কর্মকর্তারা একটি ফরম নিয়ে আসেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা স্কুল-কলেজে গিয়ে কিছু বিষয়ে খোঁজ নেন,” বলেন একজন ইউএনও। এগুলোকে “আপত্তিকর” হিসেবেও মন্তব্য করেন তিনি।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, সারাদেশে ৪৯০ জন ইউএনও রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই ২৭তম ব্যাচ (২০০৭-০৮) এবং ২৮তম ব্যাচের। সাধারণত, ছয়-সাত বছর ইউএনও-র পদে কাজ করার পর তাদের পদন্নোতি দেওয়া হয়।

যদিও সরকারি চাকরিজীবীরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন, তথাপি মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দেখভালের কাজ করছে। এমনকি, সূত্র জানায়, পুলিশের বিশেষ শাখার এই পদক্ষেপ সম্পর্কে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ অবগত নয়।

ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে তাকে টেলিফোনে পাওয়া যায়নি।

কী বলা হয়েছে চিঠিটিতে?

পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজিপি)-এর স্বাক্ষর করা চিঠি জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ সুপারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। শহর এলাকায় সেই চিঠি পাঠানো হয়েছে উপ-পুলিশ কমিশনারদের কাছে। এছাড়াও, তা বিশেষ শাখার পুলিশ সুপারদের কাছেও পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, “যেহেতু প্রার্থীরা (ইউএনও) উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, তাই তদন্তের সময় আপনাদের (পুলিশ কর্মকর্তাদের) সর্বোচ্চ গোপনীয়তা এবং সতর্কতা রক্ষা করার অনুরোধ করা হচ্ছে।”

ইউএনওদের নাম, মা-বাবার নাম, বর্তমান কর্মস্থল, স্থায়ী ঠিকানা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও সেগুলোতে পড়ার সময়কাল, তাদের আগের কর্মস্থল, সেখানে থাকার মেয়াদ, পদবী এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় মামলা রয়েছে কী না সেসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্যে পুলিশ কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।

ইউএনওদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিলো কী না- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তা যাচাই-বাছাই করার নির্দেশনাও রয়েছে চিঠিটিতে।

ইউএনওদের পরিবারের কোনো সদস্য অথবা তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের কেউ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কী না- তাও জানতে বলা হয়েছে। এছাড়াও, ইউএনওদের সম্পর্কে বিশেষ শাখার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের এবং বিশেষ শাখার পুলিশ সুপারদের নিজস্ব মতামতও যুক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিটিতে।

Comments

The Daily Star  | English

Six state banks asked to cancel contractual appointments of MDs

The Financial Institutions Division (FID) of the finance ministry has recommended that the boards of directors of six state-run banks cancel the contractual appointment of their managing directors and CEOs..The six state-run banks are Sonali Bank, Janata Bank, Agrani Bank, Rupali Bank, BAS

21m ago