ব্রাজিলকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে বেলজিয়াম

ফেভারিটের তকমা নিয়েই রাশিয়ায় পা রাখে বেলজিয়াম। আর ফেভারিটের মতোই খেলে চলেছে। শেষ ষোলোর ম্যাচে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল জাপানের কাছে। কিন্তু নিজেদের গোছাতে খুব একটা সময় নেয়নি। এদিন পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত স্নায়ু চাপ সামলে জয় তুলে নিল তারাই। ২-১ গোলের দারুণ এক জয়ে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো সেমিফাইনালের টিকেট কাটল দলটি। আর একই সঙ্গে ল্যাটিন আমেরিকার শেষ দল ব্রাজিলকে বিদায় করে অল ইউরোপ সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল রেড ডেভিলরা।

নকআউট পর্বে অনেক দিন থেকে বেলজিয়ামের বাধা ছিল ল্যাটিনরা। তাদের বিপক্ষে যেন পেরেই উঠছিল না দলটি। ২০০২ সালে এই ব্রাজিলের কাছে আর গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে বিদায় নেয় তারা। এবার নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা দল নিয়ে সে বাধা পার করল বেলজিয়াম।  ১৯৮৬ সালের পর আবার শেষ ষোলোর টিকেট কাটল তারা। আর ২০০২ সালের ফাইনালে শেষবার জার্মানি হারানোর পর নকআউট পর্বে ইউরোপিয়ান প্রতিপক্ষের সঙ্গে জয়হীনই রইল সেলেকাওরা।

বিশ্বকাপে শেষ ১০ ম্যাচের নয়টিতেই প্রথমার্ধে গোল দিতে পারেনি বেলজিয়াম। কিন্তু এদিন হলো উল্টো। দুই গোল আসল প্রথমার্ধে। দ্বিতীয়ার্ধে ডিফেন্স ধরে রেখে করে জয় নিশ্চিত। কাজান অ্যারেনায় এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই টান টান উত্তেজনা বিরাজ করে। দুইদলই আক্রমণ প্রতি আক্রমণে ফুটবল খেলতে থাকে। তবে কিছুটা এগিয়ে ছিল ব্রাজিলই। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় এবং বেলজিয়াম গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়ার দুর্দান্ত বেশ কিছু সেভে হারতে হয় তাদেরই।

ম্যাচের ৭ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো ব্রাজিল। দুর্ভাগ্য তাদের। কর্নার থেকে ডি বক্সের মাঝে থেকে থিয়াগো সিলভার নেওয়া শট বারে লেগে ফিরে আসে। পরের মিনিটে গোল পেতে পারতো বেলজিয়ামও। নাসের ছাদলির শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৯ মিনিটে আবার দারুণ সুযোগ আসে ব্রাজিলের। ডি বক্সের মাঝে জটলায় ঠিকভাবে বলে পা লাগাতে পারেননি নেইমার। কর্নারে রক্ষা করেন বেলজিয়ান ডিফেন্ডার। সেই কর্নার থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন পৌলিনহো। তবে জোরালো শট নিতে না পারায় তা সহজেই ফিরিয়ে দেন বেলজিয়ান ডিফেন্ডার।

১২ মিনিটে ফাঁকায় শট নিয়েছিলেন কৌতিনহো। এবারও দারুণ দক্ষতায় তা লুফে নেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক কর্তোয়া। ধারার বিপরীতে পরের মিনিটে গোল পেয়ে যায় বেলজিয়াম। কর্নার থেকে হেড নিয়েছিলেন ভিনসেন্ট কম্পানি। তবে বারের দিকে যাওয়ার পথে ফের্নান্দিনহোর গায়ে লেগে দিক বদলে জড়ায় জালে। ১৪ মিনিটে আবারো বেলজিয়ান ডি বক্সে জটলা তৈরি হয়। শেষ মুহূর্তে তা ফিরিয়ে দেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক।

১৮ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার শট নিয়েছিলেন কৌতিনহো। তবে সে বল ধরতে কোন পরীক্ষা দিতে হয়নি কর্তোয়াকে। ২৫ মিনিটে দূরপাল্লার শট নিয়েছিলেন মার্সেলোও। এবারও দারুণভাবে তা রুখে দেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক। ছয় মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করে রেড ডেভিলরা। কাউন্টার অ্যাটাকে রোমেলু লুকাকু ক্রস দেন ডি ব্রুইনকে। দুই ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে দূরপাল্লার শটে দারুণ এক গোল দেন এ ম্যানসিটি তারকা।

গোল শোধে মরিয়া ব্রাজিল ৩৫ মিনিটে ভালো সুযোগ পেয়েছিল। মার্সেলোর ক্রস থেকে জেসুসের নেওয়া শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরের মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে দারুণ শট নিয়েছিলেন কৌতিনহোও। তবে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ দক্ষতায় দলকে রক্ষা করেন কর্তোয়া। পাঁচ মিনিট পর ব্যবধান আরও বাড়াতে পারতো বেলজিয়াম। ফ্রি কিক থেকে ডি ব্রুইনের শট ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন অ্যালিসন বেকার। ওই কর্নার থেকে বল পেয়ে দারুণ এক ব্যাকহিল করেছিলেন কম্পানি। এবারও দারুণভাবে তা ফিরিয়ে দেন অ্যালিসন।

গোল শোধ করতে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে ব্রাজিল। ডগলাস কস্তা, রবার্তো ফিরমিনো ও রেনাতো অগাস্তোরা বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নেমে চেপে ধরেন বেলজিয়ামকে।৫১ মিনিটে মার্সেলোর দারুণ এক ক্রসে ফিরমিনো পা ছোঁয়াতে পারলে ব্যবধান কমত তখনই। তিন মিনিট পর পৌলিনহোর দূরপাল্লার শট ফিরিয়ে দেন কর্তোয়া। ৬১ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সহজ এক সুযোগ মিস করে বেলজিয়াম। ডি ব্রুইনের পাস থেকে ফাঁকায় দারুণ এক শট নিয়েছিলেন হ্যাজার্ড। কিন্তু অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। পরের মিনিটে গোল পেতে পারতো ব্রাজিলও। কিন্তু পারেনি ওই কর্তোয়ার জন্য। কস্তার শট দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন তিনি।

৭০ মিনিটে কস্তার দূরপাল্লার চেষ্টা সহজেই রুখে দেন কর্তোয়া। চার মিনিট পর আবারও কস্তা। আবারও তাকে বিমুখ করেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক। ফিরতি বলে চেষ্টা করেছিলেন নেইমারও। কিন্তু তাকেও হতাশ হতে হয় কর্তোয়ার দক্ষতায়। দুই মিনিট পর অবশ্য ব্রাজিলিয়ান শিবিরে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন বদলি খেলোয়াড় অগাস্তো। গোলে অবশ্য অবদান ছিল বেশি কৌতিনহোরই। দারুণ এক ক্রস দেন অগাস্তোকে। ফাঁকায় দারুণ এক হেড নিয়ে বল জালে জড়ান তিনি।

৮০ মিনিটে সমতায় ফিরতে পারতো ব্রাজিল। ফাঁকায় পেয়েও লক্ষ্যে শট নিতে পারেননি অগাস্তো। তিন মিনিট পর নেইমারের ক্রস থেকে ফাঁকায় পেয়েছিলেন কৌতিনহো। কিন্তু তার শট বার পোস্টের অনেক উপর দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। অতিরিক্ত সময়ে আবারো ব্রাজিলকে হতাশ করেন কর্তোয়া। নেইমারের মাপা শট বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ ভাবে ফিরিয়ে দিলে হতাশা বাড়ে ব্রাজিলের। শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানেই ম্যাচ জিতে নেয় বেলজিয়াম। 

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands national election by December 2025

2014, 2018, 2024 polls: BNP to sue former ECs, officials today

BNP is set to file a case against officials involved in the last three national elections with Sher-e-Bangla Nagar police today. The party will also lodge a formal complaint with the Election Commission in this regard, BNP leaders said yesterday.  

2h ago