বিশ্বকাপ জিতলেও জেলে যেতে হতে পারে মদ্রিচকে!

ফাইনালে উঠেই ইতিহাস গড়ে ফেলেছে, আরও বড় ইতিহাস রচনা করার থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে ক্রোয়েশিয়া। ক্রোয়াটদের এই স্বপ্নযাত্রার সবচেয়ে বড় সারথি লুকা মদ্রিচ। পুরো টুর্নামেন্টে ক্রোয়েশিয়ার মাঝমাঠের প্রাণ হয়ে ছিলেন, গোল্ডেন বল জয়ের অন্যতম বড় দাবিদারও তিনি। রোববার ফাইনালে জিততে পারলে হয়ে যাবেন দেশটির প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কও। কিন্তু এতকিছু করেও হয়তো দেশের মানুষের মন গলাতে পারবেন না তিনি। এমনকি যেতে হতে পারে জেলেও!
Luka Modric
ক্রোয়েশিয়ার সেরা তারকা লুকা মদ্রিচ। ছবি: রয়টার্স

ফাইনালে উঠেই ইতিহাস গড়ে ফেলেছে, আরও বড় ইতিহাস রচনা করার থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে ক্রোয়েশিয়া। ক্রোয়াটদের এই স্বপ্নযাত্রার সবচেয়ে বড় সারথি লুকা মদ্রিচ। পুরো টুর্নামেন্টে ক্রোয়েশিয়ার মাঝমাঠের প্রাণ হয়ে ছিলেন, গোল্ডেন বল জয়ের অন্যতম বড় দাবিদারও তিনি। রোববার ফাইনালে জিততে পারলে হয়ে যাবেন দেশটির প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কও। কিন্তু এতকিছু করেও হয়তো দেশের মানুষের মন গলাতে পারবেন না তিনি। এমনকি যেতে হতে পারে জেলেও!

শুনতে বেশ অদ্ভুত ঠেকতে পারে। দেশকে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা জেতালেও কেন দেশের মানুষের মন পাবেন না মদ্রিচ? কেনই বা জেল খাটার কথা আসছে? উত্তর জানতে হলে ফিরে যেতে হবে কিছুটা পেছনে।

বিশ্ব ফুটবলের জনপ্রিয়তম ফুটবলারদের একজন লুকা মদ্রিচ। এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব বার্সেলোনার সমর্থকেরাও তাঁকে সম্মানের চোখে দেখে। কিন্তু নিজের দেশ ক্রোয়েশিয়ার সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদের কাছেই জনপ্রিয় নন মদ্রিচ। মদ্রিচকে তারা দেখেন ঘৃণার চোখে, মদ্রিচের প্রতি তাদের ব্যাপক অনাস্থা। কারণ? মদ্রিচ যে তাদের চোখে একজন মিথ্যাবাদী!

আরও পড়ুন- দুধে পানি মিশিয়ে খাওয়া সেই ছেলেটিই আজ বিশ্বকাপ সেমিতে

মদ্রিচের প্রতি ক্রোয়াট জনগণের এমন বিরক্তি ও ক্ষোভের সাথে জড়িয়ে আছে ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলের একসময়কার সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব দ্রাভকো মামিচের সঙ্গে তার সম্পর্ক। ইংল্যান্ডে আসার আগে মদ্রিচ খেলতেন ক্রোয়েশিয়ার অন্যতম বড় ক্লাব ডায়নামো জাগরেবে। আর এই ডায়নামো জাগরেবের নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন মামিচ।

নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়ার উঠতি ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলারদের উপর একপ্রকার প্রভাব খাটিয়ে চলতেন মামিচ। লুকা মদ্রিচ, দেজান লভরেন, সিমে ভারসালকোর মতো তরুণ ডায়নামো ফুটবলারদের সঙ্গে এক ধরনের চুক্তিতে যেতেন মামিচ। চুক্তিটা এরকম, ডায়নামোতে থাকাকালীন অবস্থায় মামিচ এই খেলোয়াড়দের নিজে থেকে আর্থিক সহায়তা করবেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের পরবর্তী সময়ে এই ফুটবলাররা যদি অন্য কোন ক্লাবে যাবেন, তাহলে সেই ট্রান্সফার ফি’র একটা নির্দিষ্ট অংশ মামিচকে দিয়ে দিতে হবে।

চুক্তিতে লেখা ছিল আরেকটি বিষয়ও। এই খেলোয়াড়েরা পরবর্তী সময়ে যে আয় করবেন, সেটি হতে হবে তার পুত্র মারিওর অধীনে, যিনি কি না একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত এজেন্ট। অর্থাৎ এই খেলোয়াড়দের ট্রান্সফার ফি’র একটা নির্দিষ্ট অংশ এজেন্ট হিসেবে পাবেন মামিচের পুত্র মারিও।

অন্য অনেক ডায়নামো খেলোয়াড়ের মতো মদ্রিচও এই চুক্তিতে সায় দিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে ১০.৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ইংলিশ ক্লাব টটেনহামে যোগ দিলেও সেই অর্থের বেশিরভাগ অংশ, প্রায় ৮.৫ মিলিয়ন ইউরোই মামিচ ও তার পরিবারকে দিয়ে দিতে হয়েছিল তাকে।

আরও পড়ুন- এবার কি তবে ক্রোয়েশিয়ার পালা?

এই পর্যন্ত হলেও ঠিক ছিল, কিন্তু মদ্রিচের চক্ষুশূল হওয়ার কারণ প্রোথিত আরেকটু গভীরে। দীর্ঘদিন ধরে খেলোয়াড়দের  লেনদেনে এভাবে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করা মামিচ একসময় ধরা পড়ে যান, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৬ বছরের সাজাও হয়েছে তার।

এই মামিচের বিরুদ্ধে মামলা চলাকালীন সময়ে সাক্ষ্য দিতে ডাকা হয়েছিল মদ্রিচকে। আর এই মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার পর থেকেই ক্রোয়েশিয়ার জনগণের কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে ওঠেন তিনি। গত বছরের জুনে সতীর্থ লভরেনের সঙ্গে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে মদ্রিচ বলেছিলেন, ডায়নামো জাগরেবে থাকার সময় তিনি কত টাকা আয় করতেন, তা ঠিক তার মনে নেই। এবং চুক্তিপত্রে উপস্থিত যেসব শর্ত নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলা, সেসব শর্ত তার টটেনহামে যাওয়ার আগে থেকেই ছিল বলে দাবি করেছিলেন তিনি।

কিন্তু তদন্তের এক পর্যায়ে মদ্রিচের এই বক্তব্য তার আগে দেয়া আরেক বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে গেলে মিথ্যা সাক্ষী দেয়ার দায়ে অভিযোগ আনা হয় মদ্রিচের বিপক্ষে। এই বিশ্বকাপের পরপরই শুনানি শুরু হবে তার বিপক্ষে, সত্যিই যদি দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডও হতে পারে মদ্রিচের!

মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছেন, এমনটা চাউর হয়ে যাওয়ার পর থেকেই দেশের মানুষের কাছে নিজের মর্যাদার আসনটি হারিয়েছেন মদ্রিচ। সেটি এমনভাবেই হারিয়েছেন, দেশকে প্রথম বিশ্বকাপ এনে দিলেও হয়তো সেই জায়গা আর ফিরে পাবেন না তিনি।



সূত্র: দ্যা গার্ডিয়ান 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago