‘একজন মায়ের কাছে আমার ছেলেকে ভিক্ষা চাইছি’

‘আমার ছেলেকে ছেড়ে দেন। তাকে আমি বুকে জড়িয়ে রাখব। আমার আর কিছুই নাই। তাকে শুধু ছেড়ে দেন…’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এভাবেই বলছিলেন রাশেদের মা সালেহা বেগম।
ছেলের মুক্তি চাইতে এসে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে কান্নায় ভেঙে পড়েন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানের মা সালেহা বেগম। ছবি: প্রবীর দাশ

‘আমার ছেলেকে ছেড়ে দেন। তাকে আমি বুকে জড়িয়ে রাখব। আমার আর কিছুই নাই। তাকে শুধু ছেড়ে দেন…’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এভাবেই বলছিলেন রাশেদের মা সালেহা বেগম।

গত ১ জুলাই গ্রেপ্তার হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মুক্তি চেয়ে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে সালেহা বেগম বলেন, তার ছেলে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না। কোনোদিন সরকারেরও বিরুদ্ধে ছিল না। তিনি প্রশ্ন করেন, তার ছেলে এমন কী করেছে যে তাকে ১৫ দিনের রিমান্ডে নিতে হলো?

নাগরিক সংগঠন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গতকালের মানববন্ধনটি আয়োজন করে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও সংগঠনটির সদস্য সচিব এবিএম মোস্তফা আমিন অন্যান্যদের মধ্যে সেখানে বক্তব্য রাখেন। তারা ‘যৌক্তিক আন্দোলনে’ সরকারের গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান। ছাত্র নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের নিষ্ক্রিয়তার নিন্দা জানিয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তারও দাবি জানান তারা।

সালেহা বলেন, শুধুমাত্র ছেলের মুক্তির দাবিতে তিনি মানববন্ধনে এসেছেন। ছেলের মুক্তি ছাড়া আর তার কোনো দাবি নেই, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই দেশের মা। একজন মায়ের কাছে আমি আমার ছেলেকে ভিক্ষা চাইছি। মা! দয়া করে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন!’

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ (ব্যাংকিং এন্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ) এর ছাত্র। কোটা সংস্কার আন্দোলনে দমন পীড়ন শুরু হওয়ার পর গত ১ জুলাই রাজধানীর ভাষানটেক এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর রাশেদকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর পর ৮ জুলাই তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুরের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। তবে এই মামলার এজাহারে তার নাম উল্লেখ ছিল না। পুলিশ দুই দফায় তাকে ১৫ দিনের রিমান্ডে নেয়।

গত এপ্রিল মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংস ঘটনায় যেসব মামলা হয়েছে তাতে এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সালেহা বেগমের বয়স ৫০ এর কোঠায়। গত ১ জুলাই ঝিনাইদহ থেকে ঢাকায় এসেছেন। এর পর থেকেই ছেলের দেখা পেতে প্রতিদিন বিভিন্ন থানা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় ও মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে ঘুরেছেন তিনি। ‘আমার বাবাকে [রাশেদ] বড় করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাদের। সে আশা দেখিয়েছিল একদিন চাকরি পেয়ে আমাদের দুঃখ ঘুচাবে। কিন্তু আমার বাবা এখন জেলে…তাকে ছাড়া আমি বাঁচব না…’ কান্নায় গলা ধরে আসায় আর কোনো কথা বলতে পারেননি সালেহা বেগম।

রাশেদের বাবা নবী বিশ্বাস বলেন, একটি মহল তার ছেলেকে জামায়াত-শিবিরের কর্মী আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এটা ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক। আমি নিজেও কোনোদিন রাজনীতি করিনি। আমি সাধারণ একজন রাজমিস্ত্রি। ছেলের পড়ালেখার খরচ চালাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। সে শুধুই সাধারণ ছাত্র।

ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাশেদের বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমা চাইবার জন্য তিনি মানববন্ধনে এসেছেন। বলেন, ‘আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেই, বেশিরভাগ পরিবার [মুক্তিযোদ্ধা] ছিল রাশেদের পরিবারের মতো। বেশিরভাগই ছিল কৃষক মজুরের পরিবার। সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ নির্মাণ করা আমাদের লক্ষ্য ছিল।’

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago