হুমকিতে ক্যাম্পাসছাড়া শিক্ষকের বিরুদ্ধে এবার ছাত্রলীগের মামলা

কোটা সংস্কার নিয়ে ফেসবুকে নিজের মতামত লিখে ছাত্রলীগের ক্রমাগত হুমকিতে থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নিজের নিরাপত্তা চেয়েছেন। হুমকির মুখে গত ১৫ জুলাই থেকে তিনি ক্যাম্পাসছাড়া।
মাইদুল ইসলাম

কোটা সংস্কার নিয়ে ফেসবুকে নিজের মতামত লিখে ছাত্রলীগের ক্রমাগত হুমকিতে থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নিজের নিরাপত্তা চেয়েছেন। হুমকির মুখে গত ১৫ জুলাই থেকে তিনি ক্যাম্পাসছাড়া।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ছাত্রলীগের এক নেতা। গতকাল রাতে চবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নির্বাহী সদস্য মো. ইফতেখার উদ্দিন আয়াজ তথ্যপ্রযুক্তি আইনে হাটহাজারি থানায় মামলাটি করেন। থানার ওসি বেলাল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল চবি প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদনে হুমকিদাতা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিচার চেয়েছেন মাইদুল। তার আরও দাবি, ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি ক্লাসে ফিরে আসতে চান।

নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর আলী আসগর চৌধুরীকে দেওয়া চিঠির সঙ্গে ফেসবুকে তিনি যেসব হুমকি পেয়েছেন সেগুলোও সংযুক্ত করে দিয়েছেন। চিঠিতে মাইদুল ইসলাম বলেন, গত ১৪ জুলাই চবি ছাত্রলীগের এক নেতার ফেসবুক পোস্ট তার নজরে আসে। সেখানে তার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ছবি দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। ছাত্রলীগের দিক থেকে এরকম আরও হুমকির কথা ফেসবুকে তিনি দেখেছেন।

এই ঘটনার পর দিন থেকেই সমাজতত্ত্ব বিভাগের এই শিক্ষক ক্যাম্পাসছাড়া রয়েছেন। এ ব্যাপারে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে অনিরাপদ বোধ করছিলেন তিনি। তাই স্ত্রীকে নিয়ে নিরাপদ জায়গায় চলে গিয়েছেন।

মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে তার বিভাগেও গিয়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের অভিযোগ সম্পর্কে সমাজতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি এসএম মনিরুল হাসান বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন ও ফেসবুকে সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর কথা বলে তারা মাইদুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

মনিরুল হাসান আরও বলেন, বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে মাইদুলকে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও হুমকি দিয়ে গেছে তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মনসুর আলমের নেতৃত্বে সংগঠনটির ২৫-৩০ জন নেতাকর্মী সমাজতত্ত্ব বিভাগের সভাপতির কক্ষে প্রবেশ করেন। তারা সেখানে চিৎকার-চেঁচামেচি করে হট্টগোল তৈরি করেন। সভাপতি বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চলে যান।

এর পরদিন ১৭ জুলাই মাইদুলসহ দুই শিক্ষককে চাকরিচ্যুতির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয় ছাত্রলীগ। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটূক্তি ও অরাজকতা তৈরিতে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ এনে ওই দুই শিক্ষককে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তারা। অভিযোগ তদন্তে গত বৃহস্পতিবার তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাইদুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আমি কখনই ফেসবুকে কোনো কটূক্তি করিনি। ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর নিপীড়নের ব্যাপারে আমি সব সময়ই সরব ছিলাম। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি সরব থাকব।’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমর্থন করি। কিন্তু কোটা সংস্কারের পক্ষে কথা বলায় ছাত্রলীগ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।’

আমি ক্যাম্পাসে ক্লাসে ফিরতে চাই, যোগ করেন মাইদুল।

শিক্ষকের নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য লিটন মিত্র বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নিরাপত্তা চেয়ে চবি প্রক্টর বরাবর মাইদুল ইসলামের চিঠি

Comments

The Daily Star  | English

Police see dead man running

Amin Uddin Mollah is dead and buried for two years and 10 months.

8h ago