‘আমার কান্না থামেনি’

সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ বছর আগে মারা গেছে স্বামী। দিনটির কথা মনে পড়লে চোখ আর্দ্র হয়ে ওঠে এখনও। প্রিয়জন হারানোর বেদনা এতদিন নীরবে সয়ে এলেও এবার সরব হয়েছেন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামার পর রাজশাহীতে তিনিও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।
রাজশাহীতে 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে ইভা। ছবি: আনোয়ার আলী

সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ বছর আগে মারা গেছে স্বামী। দিনটির কথা মনে পড়লে চোখ আর্দ্র হয়ে ওঠে এখনও। প্রিয়জন হারানোর বেদনা এতদিন নীরবে সয়ে এলেও এবার সরব হয়েছেন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামার পর রাজশাহীতে তিনিও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।

যার কথা বলা হলো তার নাম ইভা। পেশায় উন্নয়নকর্মী এই নারী ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে বলেন, ‘দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারানোর ৩০ বছর হয়ে গেলো, আমার কান্না থামেনি।’ রাজশাহী শহরের সাহেব বাজার এলাকায় তখন তার পাশে ছিল বিভিন্ন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশো শিক্ষার্থী। সবার দাবি, সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানে পড়তেন ইভা। আশির দশকের মাঝামাঝিতে যখন বিয়ে হয় তখনো তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বিয়ের প্রথম বার্ষিকীর কদিন পরই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় তার ব্যাংকার স্বামী। বাবা-মাকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েই দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।

স্মৃতিচারণ করে ইভা বলছিলেন, ‘বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িও যাইনি। সকালে যখন দুঃসংবাদটা পেলাম তখন দুই মাসের বাচ্চাকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আমি।’

তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনাস্থলে সেদিন নিহত হয়েছিল মোট ছয় জন। এদের মধ্যে একজন আমার স্বামী। বাসের ভেতরে যাত্রী আর এর ছাদ ছিল মালপত্রে বোঝাই। বাসের সবাই বার বার চালককে বেপরোয়াভাবে চালাতে নিষেধ করছিল। কিন্তু তিনি কথা শোনেননি।’

আট বছর পর শোকের বোঝা কিছুটা হালকা হয়ে এলে বাবা-মা ও শ্বশুর-শাশুড়ির কথায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন ইভা। নতুন সংসারে শুরুর পর চার বছর যেতেই বিচ্ছেদ হয় তাদের। এর পর থেকেই বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করে মেয়েকে বড় করেছেন।

তিনি বলছিলেন, ‘এত বছর পরও দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর খবর শুনলেই আঁতকে উঠি। মনে হয় যেন আপনজনকেই হারালাম। এই যন্ত্রণার কথ কাউকে বোঝাতে পারবো না। আমার মেয়ে কোনোদিন বাবা বলে ডাকতে পারেনি। বাবার ভালোবাসা থেকে সে বঞ্চিত।’ এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময়ও চোখের কোনে জমে ওঠা পানি গোপন করতে পারছিলেন না ইভা।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago