কোটা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ২৯ ছাত্রের জামিন হচ্ছে না

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুর অভিযোগের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ২২ ছাত্র ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৭ ছাত্রের জামিন হচ্ছে না। গত এক সপ্তাহে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের গ্রেপ্তার ছাত্রদের জন্য চার দফায় জামিন চাওয়া হলেও প্রত্যেক বারই আবেদন খারিজ হয়েছে। ফলে দীর্ঘ হচ্ছে তাদের কারাবাস।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন থেকে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের গত ৭ আগস্ট হাতকড়া ও দড়ি দিয়ে বেঁধে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি: পলাশ খান

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুর অভিযোগের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ২২ ছাত্র ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৭ ছাত্রের জামিন হচ্ছে না। গত এক সপ্তাহে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের গ্রেপ্তার ছাত্রদের জন্য চার দফায় জামিন চাওয়া হলেও প্রত্যেক বারই আবেদন খারিজ হয়েছে। ফলে দীর্ঘ হচ্ছে তাদের কারাবাস।

গত ৭ আগস্ট ২২ জন ছাত্রের পক্ষেই জামিন আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু জামিন না হওয়ায় দুদিন পর ফের সবার পক্ষে জামিন চাওয়া হয়। সেবারও আবেদন খারিজ করেন আদালত। রোববার চার জন ছাত্রের পক্ষে ও গতকাল আট জন ছাত্রের পক্ষে জামিন চাওয়া হলেও ইতিবাচক আদেশ পাওয়া যায়নি।

আন্দোলনকারী ছাত্ররা কারাগারে থাকলেও হেলমেট পরে লাঠি, রামদা ও পিস্তল নিয়ে শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক হামলাকারীদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একইভাবে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের কারাবাস দীর্ঘতর হলেও হামলাকারীরা মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হামলাকারী বেশ কয়েকজনের পরিচয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

গত ৬ আগস্ট ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, সাউথ ইস্ট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় ২২ জন ছাত্রকে আটক করা হয়। এসময় হেলমেটের আড়ালে থাকা একদল যুবককে পুলিশের সঙ্গে থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে দেখা যায়। পরে আটক শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।

গতকাল ঢাকার আদালতে যে আট শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয় তাদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দুটি মামলা রয়েছে। আট শিক্ষার্থীর আইনজীবীরা দুটি পৃথক জামিন আবেদন করলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রণব কুমার হুই জামিন নামঞ্জুর করেন।

এর আগে রোববার এই একই আদালতে চার শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন নাকচ হয়েছিল।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ২২ ছাত্রের দুই দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যব্রত শিকদার তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন। এর দুদিন আগে ৭ আগস্টও তাদের জামিন নামঞ্জুর হয়েছিল।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে হামলা ও সহিংসতা নিয়ে রাজধানীর ১৬টি থানায় ২৯টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোর অভিযোগে বলা হয়েছে, হামলাকারীরা অজ্ঞাত পরিচয় শিক্ষার্থী। তাদের অনেকের গায়েই স্কুল ও কলেজের ইউনিফর্ম ছিল। মামলার নথিতে আসামিদের সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে, কিছু অজ্ঞাত পরিচয় যুবক ২৯ জুলাই বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনে ঢুকে পড়ে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি করে।

আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গ সংগঠনের কোনো নেতা-কর্মীকে কেন আসামি করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের কারও বিরুদ্ধে মামলা করার মতো সাহস আছে কোনো অফিসারের?’

পুলিশের ওপর আক্রমণ, সরকারি সম্পদের ক্ষতিসাধন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মোট মামলা হয়েছে ২৭টি । মামলাগুলোয় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও তরুণকে আসামি করা হয়েছে। আর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির দলীয় কার্যালয়ে হামলার অভিযোগে দলটির একজন নেতা বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছেন।

গত ২৯ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন প্রথম কয়েকদিন শান্তিপূর্ণ থাকলেও ২ আগস্ট থেকে রাস্তায় আক্রমণের শিকার হয়েছে শিক্ষার্থীরা। গত শনিবার ধানমন্ডির জিগাতলা এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘাত হয়। শুধুমাত্র সেখানেই সেদিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। হামলা থেকে রেহাই পায়নি পথচারীরাও। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে হেলমেট পরা ব্যক্তিরা গুলিও চালায় সেদিন। এর পর দিন সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারী ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের সঙ্গে লাঠি, রামদা ও লোহার রড নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এছাড়াও আন্দোলন চলাকালে মিরপুর, উত্তরা, রামপুরা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। প্রায় সব ক্ষেত্রেই হামলাকারীদের মাথায় ছিল হেলমেট।

আর কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত মে মাস থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অন্তত ১৮ বার হামলা চালিয়েছেন। এতে চার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহতরা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে এখন পর্যন্ত একজন হামলাকারীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, হামলায় আহত বেশ কয়েকজনকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। আবার চিকিৎসা শেষ হওয়ার আগেই কাউকে ছাড়পত্র ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তরিকুলের ওপর হাতুড়ি, ধারালো অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে হামলাকারীদের দ্য ডেইলি স্টার চিহ্নিত করলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago