মিথ্যাচারের পর ক্ষমা চাইল মিয়ানমার সেনাবাহিনী

রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিথ্যাচার চালাতে গিয়ে মুখোশ উন্মোচন হয়ে যাওয়ার পর ক্ষমা চাইতে বাধ্য হলো মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তাদের মুখপত্র ‘দ্য মিয়াওয়াদি ডেইলি’ আজ সোমবার ‘মিয়ানমার পলিটিকস অ্যান্ড দ্য তাতমাদাও: পার্ট ওয়ান’ শিরোনামের বইটিতে প্রকাশিত দুটি ছবির জন্য ক্ষমা চেয়েছে। নিজেদের অপরাধ ঢাকতে তারা অন্যদের অপরাধচিত্র প্রকাশ করেছিল বইটিতে।
(১) ১৯৭১ সালে ঢাকায় পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নিহত বাঙালিদের ছবি সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ব্যবহার করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। বইটিতে তারা এই ছবিটি ব্যবহার করে বলেছে তা মিয়ানমারের বাঙালিরা (দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী) এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। (২) পুলিৎজার পুরস্কারের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া অপর একটি ছবিতে রয়েছে ১৯৯৬ সালে রুয়ান্ডায় গণহত্যা চলাকালে দেশটির সংখ্যালঘু হুতু শরণার্থীদের দেশত্যাগ। এই রঙিন ছবিটি সাদাকালো করে ব্যবহার করা মিয়ানমার সেনাদের বইটিতে। তাতে বলা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটিশ শাসনামলে দলে দলে বাঙালিরা মিয়ানমারে প্রবেশ করছে। ছবিগুলো রয়টার্স থেকে নেওয়া

রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিথ্যাচার চালাতে গিয়ে মুখোশ উন্মোচন হয়ে যাওয়ার পর ক্ষমা চাইতে বাধ্য হলো মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তাদের মুখপত্র ‘দ্য মিয়াওয়াদি ডেইলি’ আজ সোমবার ‘মিয়ানমার পলিটিকস অ্যান্ড দ্য তাতমাদাও: পার্ট ওয়ান’ শিরোনামের বইটিতে প্রকাশিত দুটি ছবির জন্য ক্ষমা চেয়েছে। নিজেদের অপরাধ ঢাকতে তারা অন্যদের অপরাধচিত্র প্রকাশ করেছিল বইটিতে।

১৯৪০ এর দশকে মিয়ানমারে জাতিগত সংঘাত নিয়ে সম্প্রতি বইটি প্রকাশ করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এতে জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বাঙালি ও বহিরাগত হিসেবে উল্লেখ করে কিছু ছবি ছাপিয়ে বলা হয়েছে যে তারা স্থানীয় বৌদ্ধদের হত্যা করেছে।

ছবিগুলোর সত্যতা যাচাই করতে গিয়েই সেনাবাহিনীর মিথ্যাচারের বিষয়টি ধরে পড়ে যায়। অনুসন্ধানে দেখা যায় হত্যাকাণ্ডের সেই ছবি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নিহত বাঙালিদের ছবি।

‘মিয়ানমার পলিটিকস অ্যান্ড দ্য তাতমাদাও: পার্ট ওয়ান’ শিরোনামের বইটি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জনসংযোগ ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ বিভাগ থেকে গত জুলাইয়ে প্রকাশিত হয়। তাতমাদাও হচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল নাম। এই ১১৭ পৃষ্ঠার বইটিতে রুয়ান্ডায় গণহত্যার শিকার হুতু শরণার্থীদের ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে। তানজানিয়ায় পালিয়ে যাওয়া হুতুদের বাঙালি বানিয়ে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটিশ শাসনামলে দলে দলে বাঙালিরা মিয়ানমারে প্রবেশ করছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাওয়া অত্যন্ত বিরল ঘটনা। রোহিঙ্গা নির্যাতনে তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও তারা এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সত্য খবরের নামে উল্টো তারা ফেসবুক দিয়ে মিথ্যাচার চালিয়ে গেছে। সর্বশেষ গতকাল গোপনীয়তার আইন ভঙ্গ করার কথিত অপরাধে দেশটিতে কর্তব্যরত রয়টার্সের দুজন সাংবাদিককে সাত বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে।

ক্ষমা চেয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘দুটি ছবি ভুল করে বইটিতে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা পাঠকদের কাছে ও ছবি দুটির স্বত্বাধিকারীর কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

সেনাবাহিনীর বইটিতে মোট ৮০টি ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এর বেশিরভাগ ছবিই সেনাপ্রধান মিন অং লাইয়ের সাম্প্রতিক রাখাইন সফরের। ‘ঐতিহাসিক ছবি’ হিসেবে আটটি ছবি রয়েছে বইটিতে। এর মধ্যে তিনটি ছবির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের কোনো সম্পর্ক নেই তা নিশ্চিত হয়েছে রয়টার্স। আর অন্য পাঁচটি ছবির উৎসের ব্যাপারে এখনও উপসংহারে পৌঁছাতে পারেনি বার্তা সংস্থাটি।

আরও পড়ুন: মিয়ানমার সেনাদের কাণ্ড!

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago