দেড়শ বছরের পুরনো ‘জগতি’র কান্না
দুপুরের সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে, ঝলমল করছে সবকিছু। শরতের প্রকৃতির সৌন্দর্যে ছেয়ে আছে মাঠ-ঘাট। এত সৌন্দর্যের মধ্যেও অযত্নে অবহেলায় ম্লান হয়ে আছে দেড়শ বছরের পুরনো রেল স্টেশন জগতি।
এক সময় যেখানে ফুল, পাতা আর বাতাসের মিতালি ছিল এখন সেখানে ঘাস আর আগাছার রাজত্ব। ক্ষয়ে যাওয়া লাল ইটের অফিস ভবনটি কালের একমাত্র সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। সময়ের বিবর্তনে এটি এখন ‘ভূতুড়ে’ এলাকায় পরিণত হয়েছে, অথচ এক সময় এখানেই ছিল প্রাণচাঞ্চল্য। এই স্টেশনটি এখন শুধু সোনালি অতীতের ধূসর স্মৃতি।
কুষ্টিয়া শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ১৫৬ বছরের পুরনো এই রেলস্টেশনটি। ট্রেন থামাতে এখন কোনো গার্ড আর বাঁশি বাজায় না, মানুষের ভিড়ে সরগরম হয় না অবিভক্ত ভারতের বর্তমান বাংলাদেশের প্রথম দিককার এই রেল স্টেশনটি। ধীরে ধীরে এটি হারিয়ে ফেলছে তার সৌন্দর্য। এক সময়ের জমজমাট এই স্টেশনটি এখন যেন শুধুই বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত দুই তলা অফিস ভবনটি এখন পরিত্যক্ত। বাষ্প ইঞ্জিনে পানি দেওয়ার জন্য যে বড় ট্যাঙ্কটি তৈরি করা হয়েছিল সেটিও পড়ে আছে অবহেলায়।
স্মৃতি হাতড়ে ৮০ বছর বয়সী আতাহার আলী মোল্লা বলেন, ‘এক সময় এই স্টেশন জমজমাট ছিল। এখন আগের মতো লোকের আনাগোনা নেই এখানে। পান থেকে শুরু করে ধান, চাল, সারসহ নানা পণ্য আসত ট্রেনে করে।’
সেসব সোনালি স্মৃতি ঘেঁটে এক রাশ আফসোস ঝরল তার কণ্ঠে।
কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, নিয়মিত সংস্কার না হওয়া ও দিনকে দিন যাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে জগতি তার শ্রী হারায়।
১৮৬২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর শিয়ালদহ থেকে রানাঘাটের মধ্যে ৭৯ কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইন বসায় ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর দুই মাস পর চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতির মধ্যে ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটারের ব্রডগেজ লাইন বসানো হয়।
তবে স্টেশনটি এখনও ব্রিটিশ আমলের বহু চিহ্ন বহন করছে। টিকিট কাটা ঘরের পরিত্যক্ত জানালা, টাকা রাখার লকার, ট্রেনকে সিগন্যাল দিতে লকারের উপরে বসানো ল্যাম্প সবই এখন স্মৃতি।
Comments