কলকাতায় এক টেবিলে আওয়ামী লীগ-বিএনপি

বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর টকশো ছাড়া দেশে এমন দৃশ্য খুব একটা দেখা যায়নি সাম্প্রতিক সময়ে। তবে বিদেশের মাটিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা এক টেবিলে বসে দিনভর গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনা এবং উত্তরণের পথ খুঁজতে দেখা গেল।
'সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র' নিয়ে রোববার কলকাতায় এক টেবিলে আলোচনায় বসেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা। ছবি: স্টার

বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর টকশো ছাড়া দেশে এমন দৃশ্য খুব একটা দেখা যায়নি সাম্প্রতিক সময়ে। তবে বিদেশের মাটিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা এক টেবিলে বসে দিনভর গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনা এবং উত্তরণের পথ খুঁজতে দেখা গেল।

আলোচনার শিরোনাম ‘ভারত-বাংলাদেশ সংলাপ: সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র’। যৌথ আয়োজক ইন্দো-বাংলাদেশ কালচারাল সেন্টার, ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি ফর টেরর ফ্রি ওয়ার্ল্ড এবং গ্লোবাল মাইনরিটি ভয়েস- এই তিনটি সংগঠন। ভেন্যু কলকাতার মস্তিষ্ক বলে পরিচিত একাডেমি অব ফাইন আটর্স গ্রিন অডিটোরিয়াম।

রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা থেকে শুরু হয় ম্যারাথন এই আলোচনা, চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। রাতে আবার অতিথিদের সৌজন্যে দেওয়া হয় নৈশভোজ।

দিনের আলোচনা পর্ব মোট চার ধাপে সাজানো হয়েছিল। সেখানেই বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতৃত্ব অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাংসদ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা ড. কাজী মাজাহারুল ইসলাম দোলন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিএনপি নেতা খন্দকার আহসান হাবিব। ছিলেন, প্রাক্তন আওয়ামীলীগের সাংসদ জয়নাল আবেদীন ও কৃষক লীগ নেতা এটিএম আনিসুর রহমান বুলবুল প্রমুখ।

শুধু রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিই ছিলেন না বরং দুই বাংলার থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বলে পরিচিত মুখের উপস্থিতিও এখানে ছিল চোখে পড়ার মতো। যেমন ভারতের বিএসএফের প্রাক্তন ডিআইজি সমির কুমার মিত্র, ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবির প্রাক্তন সহকারী পরিচালক গদাধর চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. সাদেকা হালিম, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ইউসুফ আব্দু্ল্লাহ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিপি ঘোষ, ভারতের জাতীয় অধ্যাপক জয়ন্ত কুমার রায়, লন্ডন সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া, হিন্দু বিজনেস লাইন পত্রিকার কলকাতার ব্যুরো প্রধান প্রতীম রঞ্জন বোস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দেবাশীষ কুমার কুণ্ডু, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু আন্দোলনের নেতা গোবিন্দ প্রামাণিক। 

তবে এই আলোচনায় বিজেপির রাজ্যসভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং প্রাক্তন রেলমন্ত্রী, তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুল রায়ের অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও দুজন আসেননি।

আয়োজক সংস্থা ইন্দো-বাংলাদেশ কালচারাল সেন্টারের সভাপতি সৈয়দ তানভীর নাসরিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের কোনও রাজনৈতিক লক্ষ্য নেই। আমরা শুধু উপমহাদেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় সব পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসিয়ে সমস্যা সমাধানের সহায়কের ভূমিকা পালন করছি।’

শান্তিপূর্ণ উপমহাদেশে গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং গণতন্ত্র রক্ষায় প্রধান দুই পক্ষকে আমরা এক টেবিলে বসাতে সক্ষম হয়েছি এটা আমাদের কাছে ভালো লাগার বিষয়- যোগ করেন সৈয়দ তানভীর নাসরিন।  

দ্য ডেইলি স্টারকে মাইনরিটি ভয়েসের সম্পাদক সাংবাদিক রক্তিম দাস জানান, ‘আসলে এই দৃশ্য সত্যিই এখন বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু দেশের বাইরে হলেও কলকাতায় তাদের আমরা এক সঙ্গে বসাতে পেরেছি সেটা অনেক বড় অর্জন বলতে পারেন। তারা অন্তত এখন সংখ্যালঘু ও গণতন্ত্র রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কলকাতায় এক টেবিলে বসলেন।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কলকাতায় এসেই যে এক টেবিলে বসে কথা হচ্ছে সেটা নয় আমরা প্রতিদিন বাংলাদেশের মিডিয়ায় একত্রে কথা বলছি।’

‘পঁচাত্তর সালে জাতির জনককে হত্যা করার পর দেশে একটা ভিন্ন সংস্কৃতি চালু হয়েছিল। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িকতা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ধর্মভিত্তিক একটা দেশ তৈরির চেষ্টা চলেছে। সেটা রুখতে সর্বাত্মক চেষ্টা আমরাও চালিয়ে যাচ্ছি’- যোগ করে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

বিএনপি নেতা কাজী মাজাহারুল ইসলাম দোলন বলেন, ‘ভারত একটা বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ। আর সেই কারণের এখানে এইভাবে আমাদের এক টেবিলে বসা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে এটা সম্ভব নয়।’

তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘সংখ্যালঘুরা কেন জানি না নৌকায় চড়ে বসে থাকেন। গত দশ বছরে যে পরিমাণ সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে সেটা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বিএনপির সময় এমন হয়নি। কিন্তু সংখ্যালঘুরা আমাদের সঙ্গে নেই।’

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago