সুবিচার কোথায়?

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিরা শুধু অপমানের মুখেই পড়ছেন না, তাদেরকে নিবির্চারে আটক করা হচ্ছে। দেশটিতে চলমান অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানে এমন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিরা।
malaysia crackdown

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিরা শুধু অপমানের মুখেই পড়ছেন না, তাদেরকে নিবির্চারে আটক করা হচ্ছে। দেশটিতে চলমান অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানে এমন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন কাজের খোঁজে যাওয়া বাংলাদেশিরা।

হেনস্থার শিকার একজন হাসান এ বছরের শুরুতে কাজের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। তার কাছে সেসবের প্রমাণও রয়েছে। কিন্তু, অভিবাসন পুলিশের কাছে এগুলোর কোনো মূল্যই নেই।

গত ৩ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের বুকিত বিনতাং এলাকা থেকে আটক করে। সেসময় আরও অনেককেই আটক করা হয় ওই এলাকা থেকে। হাতকড়া পরিয়ে বসিয়ে রাখা হয় কয়েক ঘণ্টা। তারপর নিয়ে যাওয়া হয় অভিবাসন শিবিরে।

মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা ২৬ বছর বয়সী হাসান (প্রকৃত নাম নয়) বুকিত জলিল ক্যাম্পে আটকে ছিলেন নয়দিন। তারপর, তার চাচার সহায়তায় তিনি সেখান থেকে বের হয়ে আসেন। তারা চাচা এক দশকের বেশি সময় থেকে কুয়ালালামপুর রয়েছেন। তবে নিজের মুক্তির জন্যে হাসানকে ঘুষ দিতে হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় এক লাখ ২০ হাজার (৬ হাজার রিঙ্গিত)। সে টাকা ঢুকেছে সেখানকার পুলিশের পকেটে।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “ক্যাম্পে সব ধরনের শ্রমিকরাই রয়েছে। যাদের বৈধ কাগজ আছে তারাও। আমাকে কেনো আটক করে ক্যাম্পে রাখা হলো তা আমি বুঝতেই পারছি না। সেখানে আমার ৩৫০ রিঙ্গিত খোয়া গেছে। এমনকি, জুতা জোড়াও চুরি হয়েছে।”

সাত বছর আগে মালয়েশিয়ায় আসা হাসানের ভিসা নবায়ন না হওয়ায় তিনি অবৈধ হয়ে পড়েন। কিন্তু, দেশটির অভিবাসন বিভাগে আবেদন করেছেন তিনি। তাই তার প্রশ্ন: “আমার অপরাধ কোথায়?”

আবারও প্রশ্ন ছোড়েন তিনি, “সুবিচার কোথায়? মনে হয় না বাংলাদেশি হিসেবে কোনো সম্মান নিয়ে এখানে থাকা যাবে।”

হাসানের মতো এমন ভুক্তভোগী রয়েছেন আরও হাজারো বাংলাদেশি। অকল্পনীয় কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তারা। মালয় সরকার বিদেশি শ্রমিকদের সে দেশে বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলো। সেই সুযোগ শেষ হয় গত ৩০ জুন। এরপর শুরু হয় ধড়পাকড়। তারিখ শেষ হওয়ার আগেই বিদেশি শ্রমিকরা আবেদন করেছেন। তাদের একজন সেই হাসান। তারপরও, তাকে হতে হলো নিপীড়ণের শিকার।

অবৈধ অভিবাসীদের খুঁজতে গিয়ে গত ১ জুলাই থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি, নেপালি, ইন্দোনেশীয়, ফিলিপিনো, ভারতীয় ও পাকিস্তানিকে আটক করা হয়েছে বলে জানান মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলি। গত ১৪ সেপ্টেম্বর দেশটির সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “এই অভিযান চলবেই।”

মোট কতজন বাংলাদেশি আটক রয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে গত ৪ সেপ্টেম্বর মুস্তাফার বলেন, গত জানুয়ারি থেকে ৩০ হাজারের বেশি বিদেশি শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছে ছয় হাজারের মতো।

বাংলাদেশিদের মতে: বর্তমানে, মালয়েশিয়ায় ১০ লাখের মতো বাংলাদেশি রয়েছেন। বলা হয়ে থাকে, তাদের অর্ধেকেরই বৈধ কাগজপত্র নেই। প্রায় সবাই কাগজের জন্যে আবেদন করলেও প্রায় ৮০ ভাগই কোনো কাগজ পাননি।

মালয়েশিয়ায় এমন ধড়পাকড়ে দেশটির বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা নিন্দা জানায়। তাদের মতে, যে সব শ্রমিকের বৈধ কাগজ নেই সে জন্যে দায়ি তাদের নিয়োগকর্তারা বা দালালেরা। যে সব ব্যক্তি অভিবাসনের জন্যে আবেদন করেছেন তাদের হেনস্থা করা অভিবাসন আইনের বিরোধী।

বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি অভিবাসী জানান, বন্দী শিবিরের চেয়ে দেশটির জেলখানার অবস্থা আরও খারাপ। তাদের আশঙ্কা, এভাবে গণগ্রেপ্তার চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলার সময় তারা এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সে দেশের পুলিশের এমন আচরণ বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারের এগিয়ে আসার দাবি জানান।

এদিকে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার সাংসদ চার্লস সান্তিয়াগো দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমি এই বিষয়টি আইন পরিষদে তুলবো।”

 

সংক্ষেপিত। মূল লেখাটি পড়তে ক্লিক করুন: Where is justice?

Comments